শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:১৪ পূর্বাহ্ন

আজ লক্ষ্মীপুর হানাদার মুক্ত দিবস

স্টাফ রিপোর্টারঃ আজ ৪ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ও পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করে প্রকাশ্যে লাল সবুজের পতাকা উত্তোলন করেন লক্ষ্মীপুরে।

এর আগে ৯মাস যুদ্ধকালীন সময়ে পাক সেনারা রাজাকার আল বদর ও এ দেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় তৎকালীন নোয়াখালী জেলার বর্তমান লক্ষ্মীপুরের ৫টি উপজেলায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণসহ হাজার হাজার নিরীহ জনসাধারণকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। মহান স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরেও এ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার পাননি অনেক পরিবার। সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের কাছে জেলা ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবী জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুরবাসী।

লক্ষ্মীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীর ১৯টি সম্মুখযুদ্ধসহ ২৯টি দুঃসাহসিক অভিযান চলে। এ সব যুদ্ধে সৈয়দ আবদুল হালীম বাসু, মনছুর আহমদ, আলী আহম্মদ (ইপিআর), আবু ছায়েদ, মেস্তাফিজুর রহমানসহ ৩৫জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

ওই সময়ে রাজাকারদের নেতৃত্ব দিয়েছেন, রাজাকার কমান্ডার সফিক উদ্দিন, মনিরুজ্জামান, লুৎফুর রহমান প্রকাশ লুতু কমান্ডার ও হারিছ মিয়া। এ সব রাজাকারদের সহযোগিতা নিয়ে পাক হানাদার বাহিনী আরও নাম জানা অজানা কয়েক হাজার মুক্তিকামী নারী-পুরুষকে নির্বিচারে হত্যা করে।

তাদের নির্যাতনে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকে। লুটপাটসহ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, মুক্তিকামী মানুষদের হাজার হাজার ঘরবাড়ি। পরবর্তীতে ৪ ডিসেম্বর প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হায়দার চৌধুরী ও প্রয়াত সুবেদার আবদুল মতিনের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা একত্রিত হন। প্রত্যেকটি দলে ৮/১০ জন করে দল গঠন করে বিভক্ত হয়ে দালাল বাজার, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদি, শাখারী পাড়ার মিঠানীয়া খাল পাড়সহ বাগবাড়িস্থ রাজাকার ক্যাম্পে হামলা চালান দুঃসাহসিক এ সব মুক্তিযোদ্ধারা।

অভিযানে মুক্তিযোদ্ধারা ৭০/৮০জন সশস্ত্র রাজাকারকে আটক করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেন। সেদিনই বীর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনী মুক্ত করেন লক্ষ্মীপুরকে। মহান মুক্তিযুদ্ধের ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের ‘লাল সবুজের পতাকা’। যুদ্ধকালিন সময়ে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের আজও নীরব সাক্ষী হয়ে আছে, জেলা শহরের বাগবাড়িস্থ গণকবর, সারের গোডাউনে পরিত্যাক্ত টর্চারসেল, সার্কিট হাউজ সংলগ্ন মাদাম ব্রীজ বধ্যভুমি, পিয়ারাপুর ব্রীজ, বাসু-বাজার গনকবর, চন্দ্রগঞ্জ, রসুলগঞ্জ ও আবদুল্যাপুরে গণকবর এবং রামগঞ্জ থানা সংলগ্ন বধ্যভূমি। এ ছাড়া নানান স্থানে আরো অনেক বদ্যভূমি রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। আজো ওই সব বদ্যভমি সংরক্ষিত হয়নি।

তবে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল থেকে জানাানো হয়েছে, কেন্দ্রিয় দপ্তরে ওই সব তালিকা পাঠানো হয়েছে। মহান স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরেও ’৭১ এর এ নৃশংস হত্যাযজ্ঞের বিচার পাননি লক্ষ্মীপুরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার।

এ ধরণের এক পরিবার রয়েছে, লক্ষ্মীপুরের মজুপুর এলাকায়। নিজে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার কারনে পরিবারের ৬ সদস্যকে হত্যা, ৪ জনকে পঙ্গু ও বাড়ী ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হলেও এখনো বিচার পাননি বলে অভিযোগ করেন, ভুক্তভোগী শহীদ পরিবারের সদস্য দ্বীন মোহাম্মদ। বর্তমান সরকারের কাছে প্রিয়জনকে হত্যার বিচার দাবী করে তিনি জেলায় ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবী জানান।

অভিযোগ করে তিনি জানান, তৎকালের কুখ্যাত খুনি মওলানা আব্দুল হাই আজো পলাতক রয়েছে। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের স্বপেক্ষের সরকার সেই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে অদ্যাবধি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন না করায় তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন। একই দাবী জানান, প্রয়াত জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আনোয়ারুল হক মাস্টার, যুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনীর ডিপুটি কমান্ডার প্রয়াত জয়নাল আবেদিন এর পরিবার।

তারা জানায়, এখানকার মুক্তিযোদ্ধারা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার গুলো এখনো সরকারের অনেক সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত। তাদেরকে সবাইকে পূনর্বাসনের দাবী জানিয়ে একই সঙ্গে কুখ্যাত খুনিদের বিচার দাবী তোলেন তারা। এ দিনটি যথাযথভাবে পালনে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল থেকে দিন ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে বলে জানা যায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com