মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:২৮ পূর্বাহ্ন
আব্দুল হানিফ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী) থেকে॥ পদ্মার রুদ্ররুপে অবশেষে ভেঙ্গে পড়লো বিদ্যালয়ের পাঁকা ভবন। মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে ভবনের বেশ কিছু অংশ ভেঙ্গে পড়েছে পদ্মায়। শহীদদের স্মৃতি নিয়ে বিদ্যালয়ের একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা শহীদ মিনারটিও রাতারাতি গ্রাস করবে রাক্ষুসি পদ্মা। উত্তাল পদ্মার রুদ্ররুপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার, আবাদী জমি কেড়ে নেওয়ার দৃশ্য দেখতে নদীর পাড়ে নির্বাক চিত্তে দাঁড়িয়ে হাজারো মানুষ। বিদ্যালয়টি ভেঙ্গে পড়ায়, লেখা পড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বিদ্যালয়ের ৬’শ শিক্ষার্থী।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার জানান,২০১২ সালে ভাঙনের কবলে পড়ায় কালিদাশখালি মৌজায় সরিয়ে নেওয়া হয় বিদ্যালয়টি। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর আটাত্তর লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ের পাঁকা ভবন নির্মাণ করেন। ভবনের মধ্যে ঢুকে পড়ে বিদ্যালয়টি গ্রাস করলো পদ্মা। অবস্থার প্রেক্ষিতে অনিদিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষনা করেছেন। গত ১৪ বছরে ২বার ভাঙনের কবলে পড়েছে চরাঞ্চলের চকরাজাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চকরাজাপুর বাজার। ১৯৯৮ সালেও ভাঙনের কবলে পড়ে বিদ্যালয় ও বাজার। ২০১২ সালে সরিয়ে পর, এবারও ভাঙনের কবলে পড়ে পদ্মায় বিলিন হচ্ছে বিদ্যালয় ও বাজারটি। প্রমত্তা পদ্মার ফুলে ফেঁপে ওঠা পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাঙ্গছে পদ্মার পাঁড়। শুধু ওই বিদ্যালয় ও বাজারই নয়, পদ্মার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে, ভাঙনের কবলে পড়েছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের-গোকুলপুর, জোতকাদিরপুর, কিশোরপুর, আলাইপুর, মালিয়ানদহ, চকরাজাপুর ইউনিয়নের-দিয়ারকাদিরপুর, টিকটিকিপাড়া, চকরাজাপুর, কালিদাসখালি ও লক্ষীনগর এলাকা।
স্থানীয়রা জানান, গত তিন সপ্তাহে ২০ কিলেমিটার ভাঙনে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে, ১০টি গ্রামের প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমিসহ গাছপালা, পিয়ারা বাগান, পাট, আখসহ নানা প্রকার সবজি ক্ষেত। এবার ভাঙনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন-পদ্মার তীরবর্তী গোকুলপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম, আজিবার মালিথা, আস্তুল মালিথা, আব্দুল মতিন মালিথা, জোত কাদিরপুর গ্রামের মুনছুর মালিথা, কুদরত আলী, শমসের আলী, পাকুড়িয়ার হাফিজুর রহমান, নয়ন পীর, আসাদুজ্জামান,শরিফুল, আলাইপুরের-চাহার মন্ডল,নাজিম সরকার, নজু প্রামানিক,আজাহার, টুলু মন্ডল,তেথুল মন্ডল সোবহান মল্লিক, চকরাজাপুর ইউনিয়নের-জামাল উদ্দিন, শামসুদ্দিন রেন্টু, আজাদ শেখ, গোলাম মোস্তফা, মনছুর শেখ ও বাবলু দেওয়ানসহ অর্ধসহস্রাধিক কুষক।
ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল আযম ও ফকরুল হাসান বাবলু জানান, গত তিন দশকে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে- নদীতে বিলীন হয়ে যায় হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি, বসত ভিটা,রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্টান। ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়ে সর্বহারা হয়েছে প্রায় সহস্রাধিক পরিবার। এই সব পরিবারের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে পদ্মা। এদের অনেকেই বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বসত বাড়ী গড়ে তুলে বসবাস করছেন।
উপজেলা নির্বাহি অফিসার শাহিন রেজা বলেন, সোমবার (৬-৮-১৮) বিদ্যালয় ও বাজারসহ ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোসাঃ নাসিমা খাতুন।