বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৫১ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক, একুশের কণ্ঠ:: রাজধানীতে সিসা বারগুলো বন্ধ হলেও থেমে নেই সিসার কারবার। অফলাইনে নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গোপনে চলছে সিসা বিক্রি-বিতরণ। অর্ডার করলেই ডেলিভারিম্যান পৌঁছে দিচ্ছে পছন্দের সিসা; হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হচ্ছে ভিডিও, স্যাম্পল ও ব্যবহারের নিয়ম। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে সিসা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সেবন ও বিক্রি-উভয়ের জন্যই রয়েছে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড।
সাম্প্রতিক সময়ে এমনই একটি বড় চক্রের সন্ধান পেয়ে ফাঁদ পেতে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ছদ্মবেশে অর্ডার দিয়ে চক্রটি শনাক্ত করে ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা শাখা। এরপর গত ১৬ নভেম্বর রাতে রাজধানীর হাতিরঝিলে অভিযান চালিয়ে চক্রের ডেলিভারিম্যান আশিকুর রহমান সামি (১৯) এবং মূল নিয়ন্ত্রক আব্দুল আলিম ওয়াসিফ (২৮)কে গ্রেপ্তার করা হয়।
অভিযানে জব্দ করা হয় ১৮ কেজি সিসা, বিভিন্ন হুক্কা সেট, চারকোল, সিসিটিভি ক্যামেরা এবং একাধিক মোবাইল ফোন।
মঙ্গলবার দুপুরে সেগুনবাগিচায় ডিএনসি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মহাপরিচালক মো. হাসান মারুফ বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় মাদক ব্যবসার ওপর ডিএনসির নজরদারি দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এর অংশ হিসেবে চক্রটিকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উপপরিচালক মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। ছদ্মবেশে ক্রেতা সেজে সামির সঙ্গে যোগাযোগ করেন ডিএনসির সদস্যরা। রাতে হাতিরঝিল মহানগর প্রকল্প এলাকায় সামিকে আটক করা হয়; তার স্কুলব্যাগে পাওয়া যায় ২ কেজি আল ফখর সিসা।
জিজ্ঞাসাবাদে সামি জানান, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সিসা ডেলিভারি দেওয়া ছিল তার প্রধান দায়িত্ব। তিনি চক্রের মূলহোতা ওয়াসিফের নামও জানান। এরপর রাতেই উত্তর বাড্ডার বিটিআই প্রিমিয়াম প্লাজায় ‘ইনোভেট’ নামের দোকানে অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তার করা হয় ওয়াসিফকে। সেখান থেকে উদ্ধার হয় ১৬ কেজি সিসা, তিনটি হুক্কা সেট, ১০ প্যাকেট চারকোল, ১৩টি আইফোন ও ৫টি ওয়াইফাই সিসিটিভি ক্যামেরা।
ডিএনসি জানায়, ওয়াসিফ আইটি পণ্যের ব্যবসার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে সিসা সরবরাহ করত। সামি ছিল তার অধীনে কাজ করা ডেলিভারিম্যান। তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এ মামলা করা হয়েছে। চক্রটির অন্য সদস্যদের শনাক্তে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মানবদেহে সিসার ভয়াবহ ক্ষতি
সাম্প্রতিক সময়ে তরুণদের মধ্যে সিসার প্রতি আগ্রহ বাড়লেও স্বাস্থ্যঝুঁকি অত্যন্ত মারাত্মক। সিসার বওল অংশে উত্তপ্ত কয়লা দিয়ে তামাক পোড়ানো হয়। কয়লার ধোঁয়ায় উৎপন্ন কার্বন মনোক্সাইড সরাসরি শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করে গুরুতর ক্ষতি করে। নিকোটিন পানিতে দ্রবীভূত না হওয়ায় সুগন্ধী পানি ধোঁয়ার ক্ষতি কমায় না।
আন্তর্জাতিক কয়েকটি গবেষণায় বলা হয়েছে-
এক পূর্ণ সেশনে সিসা গ্রহণ করা এক প্যাকেট সিগারেট সেবনের মতোই ক্ষতিকর (সূত্র: রয়টার্স)।
আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্সের মতে, সিগারেটে ১-৩% নিকোটিন থাকলেও সিসায় ব্যবহৃত তামাকে থাকে ২-৪% নিকোটিন।
ইয়েমেনের খ্যাতনামা কার্ডিয়াক বিশেষজ্ঞ ড. আহমেদ আল-মোতাররেব বলেছেন, একবার পুরো সেশন সিসা গ্রহণ করলে তা ৬০টি সিগারেট সেবনের সমান ক্ষতি করে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুগন্ধী বা ঠান্ডা ধোঁয়া ক্ষতিকর নয় এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ধোঁয়ার সঙ্গে নিকোটিন, টক্সিন এবং ভারী ধাতু সরাসরি শরীরে প্রবেশ করে হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্ষতি, ক্যানসার এবং মস্তিষ্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
অভিযানের পর ডিএনসি জানিয়েছে, বিশেষ এই চক্র বাজারে ফের সিসা ছড়িয়ে দিচ্ছিল। অনলাইনে নিষিদ্ধ মাদক বিক্রি বন্ধে নজরদারি আরও জোরদার করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সিসা আনন্দ নয়, বরং ধীরে ধীরে মৃত্যু ডেকে আনে। তরুণদের এই ক্ষতিকর প্রবণতা থেকে দূরে রাখতে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সমাজকে সচেতন ভূমিকা নিতে হবে।