বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০৩:২৬ অপরাহ্ন

পোশাক শিল্পে বিদেশী ক্রেতাদের আস্থা ফেরানোই বড় চ্যালেঞ্জ

পোশাক শিল্পে বিদেশী ক্রেতাদের আস্থা ফেরানোই বড় চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক:: পোশাক শিল্পে বিদেশী ক্রেতাদের আস্থা ফেরানো এবং তা ধরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর হতে শুরু করেছে। পুরোদমে উৎপাদনে ফিরছে পোশাক কারখানাগুলো।

দেশের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, ক্রেতাদের আস্থা বজায় রাখতে দেশের ভাবমূর্তি ক্রেতাদের সামনে তুলতে ধরতে হবে। কিছু রফতানি-প্রতিযোগী দেশ বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশী মিডিয়াতে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে। এমন অপপ্রচারে যাতে বিদেশী ক্রেতাদের কাছে কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে এ জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, ভারত এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে ভ্রমণ পরামর্শ জারি করেছে। এমন নির্দেশনা কিছু বিনিয়োগকারীকে বাংলাদেশে ভ্রমণ করতে দ্বিধাগ্রস্ত করেছে। এমন সময় বিদেশী এবং স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের কাছে দেশের ভাবমূর্তি উন্নত করতে হবে। এবং বিদেশী ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সরকারকেও উদ্যোগ নিতে হবে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর থেকে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতেও বিদেশী অনেক ফ্যাশন ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে তাদের পোশাক ক্রয়ের আদেশ বাড়িয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে বিদেশী ক্রেতাদের এমন ইতিবাচক মনোভাবের কারণে শিল্প মালিকরা নতুন করে আশার আলো দেখছেন।

শিল্পের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা বলছেন, ইউরোপ, আমেরিকা এবং পূর্ব এশীয় দেশের ব্র্যান্ডগুলো তাদের অর্ডার বাড়িয়েছে। রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে ব্র্যান্ডগুলো যোগাযোগ বজায় রাখছে। রফতানির সময়সীমা পূরণ করতে প্রতিষ্ঠানগুলো ওভারটাইম বাড়িয়েছে। অর্থাৎ অতিরিক্ত সময়ে কাজ করছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মী-শ্রমিকরা। নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার ফলে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ইমেজ উন্নত হয়েছে বলে মনে করছেন পোশাক রফতানিকারক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।

দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর থেকে মার্কিন ব্র্যান্ড ইউএস পোলো, গ্যাপ ও এক্সপ্রেস বাংলাদেশ থেকে তাদের কাজের অর্ডার বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া কোরিয়ান ব্র্যান্ড বিওয়াইসি তাদের কাজের অর্ডার দেয়ার জন্য বাংলাদেশে আসছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসান বলেন, ইউএসএর পোলো তার কোম্পানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা। এ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ইতোমধ্যে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি অর্ডার বেড়েছে। তাদের সক্ষমতার প্রায় ৪০ শতাংশ কাজের অর্ডার আসে ইউএস পোলো থেকে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ফারুক হাসান বলেন, জুলাই মাসে ক্ষমতাচ্যুত সরকার কর্তৃক আরোপিত ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের সময় তিনি তার কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের ইউএস পোলো অফিসে পাঠিয়েছিলেন। বাংলাদেশে বিরাজমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার জন্য। ক্রেতাদের অফিস পরিদর্শন করার কারণে তাদের আস্থা অনেক বেড়েছে। এতে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্ডার দিচ্ছেন তারা।

আরেক শীর্ষস্থানীয় রফতানিকারক স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, তিনজন মার্কিন ক্রেতা ইতোমধ্যে তাদের অর্ডার বাড়িয়েছেন। ইউএস পোলো এবং গ্যাপ তাদের প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ক্রেতা। সাম্প্রতিক সময় আমেরিকার আরেকটি ক্রেতা এক্সপ্রেসও তাদের কাজের অর্ডার বাড়িয়েছে।

মাসকো গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার (মার্চেন্ডাইজিং) মো: শরাফত হোসেন সোহেল বলেন, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে কোরিয়ান ব্র্যান্ড পোশাক আমদানি করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে আমাদের অফিস পরিদর্শনের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে কোরিয়ান ব্র্যান্ড পোশাক আমদানি করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে অফিস পরিদর্শনের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, মাসকো গ্রুপ এইচ অ্যান্ড এম এর জন্য প্রতি মাসে প্রায় ১০-১৫ লাখ থেকে পিস পোশাক তৈরি করে। তারা এখন পর্যন্ত কোনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়নি। তাদের প্রতিষ্ঠান আগামী গ্রীষ্মের জন্য ইইউ বাজারে পোশাক সরবরাহের কাজ পরিচালনা করছে। তাদের দুইজন ইউরোপীয় ক্রেতা ইতোমধ্যেই অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন। তারা দেশের একটি ভালো ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com