রবিবার, ১৫ Jun ২০২৫, ০৬:১৩ অপরাহ্ন

নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে ওঠার ৮ উপায়

নিজস্ব প্রতিনিধি : ‘আন্দামান সাগরের এক একলা দ্বীপে এক সাধু যখন একটা পাখির কিচিরমিচিরে অতিষ্ঠ হয়ে ভাবছিল কীভাবে আরো একা হওয়া যায় তখন জাকার্তার জনাকীর্ণ সড়কে হাজার হাজার মানুষের ভীড় ঠেলে একটা লোক একা একা হেঁটে যাচ্ছিল ।’

নিঃসঙ্গতা এমনই, কবি ইমতিয়াজ মাহমুদের ওপরের কথাটার মতোই । কখনো আপনি একা থেকেও নিঃসঙ্গ নন । আবার কখনো হাজার মানুষের ভিড়ে একা । সময়ের বাস্তবতায় এখন দ্বিতীয় কথাটিই অধিক সত্য হয়ে ধরা দেয় ।

আমরা কম-বেশি নিঃসঙ্গতার অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত । দীর্ঘমেয়াদি একাকিত্ব অনেক সময় আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে । এটি আমাদের মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা বাড়িয়ে দেয় । এই নিঃসঙ্গতা থেকে হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও তৈরি হয় । কীভাবে কাটাবেন নিঃসঙ্গতা? চলুন জেনে নেই কিছু সহজ উপায় ।

১. কাছের মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ

মানুষের মধ্যে থাকলে আমাদের শরীরে এমন কিছু হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মানসিক চাপ কমায়। ইতিবাচক মানসিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে । অবশ্য জীবিকার প্রয়োজনে কিংবা লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে অনেক সময়ই আমাদের বন্ধু-পরিবার রেখে দূরে থাকতে হয় । মুঠোফোন ও ভিডিও কলে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন । আবার অনেক সময় ভিডিও কল করতে ইতস্তত বোধ করলে আগেভাগে খুদে বার্তা পাঠিয়ে মুঠোফোনে কথা বলার জন্য অনুমতি চাইতে পারেন । এককথায়, যেখানেই থাকুন আপন মানুষের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ।

২. বিভিন্ন গ্রুপে যোগ দিন

ব্যক্তিগত যোগাযোগ শুধু পরিবার, বন্ধুবান্ধব কিংবা অফিসের সহকর্মীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেই হবে না, এর পরিধি বাড়াতে হবে । খেলাধুলা কিংবা কনসার্টের মতো সামাজিক আয়োজনগুলোয়ও অংশ নিতে পারেন । ‘বুক ক্লাবে’ও যোগ দিতে পারেন । মিটআপের মতো বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বা গ্রুপেও সমমনা মানুষদের খুঁজে পাওয়া যায় ।

৩. কেবল নিজের জন্য নয়, অন্যের জন্য বাঁচুন

একটা ফুল সৌন্দর্য ছড়িয়ে, সুবাস দিয়ে ঝরে পড়ে । একইভাবে অন্যের জন্য বাঁচার ভেতরেই বেঁচে থাকার সার্থকতা । বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক সামাজিক কাজে নিয়োজিত থাকলে নিঃসঙ্গতা থেকে দূরে থাকা যায় । অসহায়, উদ্বাস্তু ও পথশিশুদের পাশে দাঁড়ানো, আহত পশুপাখির চিকিৎসায় হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো কাজগুলো করতে পারেন । এ ধরনের কাজ করে এমন অনেক সামাজিক সংগঠনে যুক্ত হতে পারেন । প্রতিবেশী, বৃদ্ধ, অসুস্থ কিংবা গর্ভবতীসহ যে কারও প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন ।

৪. ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া

জীবনটা যেন অফিসে যাওয়া-আসার পথ কিংবা চার দেয়ালের মধ্যেই কেটে না যায়, সেদিকে লক্ষ রাখুন । অফিস শেষে ফেরার পথে কাছে-পিঠে কোনো পার্ক থেকে ঘুরে আসুন । দুপুরের খাবার অফিসের ডেস্কে বসে না করে কাছেই কোনো রেস্তোরাঁয় গিয়ে খেতে পারেন । সময় নিয়ে কফিশপে গিয়ে এক কাপ উষ্ণ কফিতে চুমুক দেওয়াও হতে পারে ভালো সমাধান । দিন শেষে কিছুটা সময় পেলে নিজের এলাকার আশপাশে, প্রকৃতির কাছাকাছি হাঁটতে বের হন ।

৫. ভার্চ্যুয়াল ভ্রমণ, বন্ধুত্বও মন্দ নয়

ভ্রমণ একাকিত্ব দূর করার ভালো একটি উপায় । তবে সব সময় সব পরিস্থিতিতে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া সম্ভব হয় না । এ ক্ষেত্রে ভার্চ্যুয়াল ভ্রমণ হতে পারে সমাধান । আপনি যেখানে যেতে চান, সেখানকার বিভিন্ন ধরনের ছবি ও ভিডিও অনলাইন থেকে দেখে নিতে পারেন । ইউটিউবে সার্চ করলেই আপনার কাঙ্ক্ষিত জায়গার অনেক ভ্রমণমূলক ভ্লগ পাবেন । এ ছাড়া গুগল ম্যাপস বা স্ট্রিটভিউ থেকেও যেকোনো জায়গায় ভার্চ্যুয়ালি ঘুরে আসা যায় । যাঁরা সামনাসামনি কথা বলতে সংকোচ বোধ করেন, ভার্চ্যুয়াল বন্ধুত্ব তাঁদের একটা ভালো সমাধান ।

৬. বন্ধু হতে পারে পোষা প্রাণীও

গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো ও শরীরে ‘হ্যাপি হরমোনে’র ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পোষা প্রাণী ।

৭. নিজেই হোন নিজের বন্ধু

সবার আগে নিজেই নিজের বন্ধু হওয়াটা জরুরি । নিজের সঙ্গে কথা বলুন । ডায়েরি লিখুন, তাতে বোঝাপড়া সহজ হয়ে যাবে অনেকটাই ।

৮. ব্যস্ত থাকুন সৃজনশীল কাজে

শখের ও সৃজনশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন । ছবি আঁকুন, ছবি তুলুন, ঘর সাজান ও নতুন কোনো কোর্সে যোগ দিন । বাগান করুন। বই পড়ুন, সিনেমা দেখুন । মেতে উঠুন সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com