শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৩ পূর্বাহ্ন
তাহমিনা আক্তার, চট্টগ্রাম থেকে ॥
চট্টগ্রামের হালিশহর থানার বিভিন্ন এলাকায় হাত বাড়ালেই মিলছে গাঁজা ও ইয়াবা। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের হালিশহর থানার বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে চলছে মাদক ক্রয়-বিক্রয়। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, পুলিশের কার্যক্রমের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে মাদকের কারবার এখন ওপেন সিক্রেট। কিশোর ও তরুণরা এ কাজে যুক্ত। পুলিশ যেন দেখেও দেখে না। পত্রপত্রিকায় এ সংক্রান্ত খবর ছাপা হলেও মেলেনি সুফল। মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযানও চোখে পড়েনি। যদিও নগর পুলিশ বলছে, পুলিশের কার্যক্রম অনেক সক্রিয়। থানা এলাকায় ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বিগত সরকার পতনের পর পটপরিবর্তন হলেও থেমে নেই মাদক কারবার। এর মধ্যে সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় ইয়াবার প্রতি আগ্রহ বেশি বিক্রেতাদের। ব্যবসায়ীদের ভাষ্যে, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে পুঁজি করে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান ঢুকেছে। চেকপোস্ট ছিল না। তখন ছাত্র আন্দোলনের ওপর সবার চোখ। এছাড়া ৫ আগস্টের পর থেকে পুলিশের কার্যক্রমও স্থবির। ফলে হালিশহর থানা এলাকায় ইয়াবার খুচরা বিক্রি বেড়েছে দ্বিগুণ। অভিযোগ আছে, সিএমপির হালিশহর থানা এলাকা মাদক বিক্রির জন্য নিরাপদ অভয়ারণ্য। এই থানা এলাকায় ইয়াবা, গাঁজা বিক্রি হয় প্রকাশ্যে। হালিশহর থানাধীন শান্তিবাগ ৫নং গলিতে শফিক, শান্তিবাগ কবরস্থান গলিতে রুবেল প্রকাশ কোবা রুবেল, শান্তিবাগ ১১নং গলিতে সালাউদ্দিন, মহিউদ্দিন, শান্তিবাগ জামাইর দোকানের পিছনে রাজিব, শ্যামলী আবাসিক এলাকায় শাহাবুদ্দীন, রঙ্গিপাড়া ডাসভিন এর ডান পাশে গলি পারভীন, পদ্মা আবাসিক আলী মসজিদ এর সামনে সাব্বির, কানাইয়ার চা দোকানের গলিতে জীবন, হাজার দিঘির পাড় শিব ফার্মেসী গলিতে হেলাল, শিব ফার্মেসী গলির মাঠে জুয়েল, মুন্সিপাড়া মতি ভান্ডারীর বাড়ি সবুজ প্রকাশ বাবা ছোট, পারভেজ, মুন্সিপাড়া রফিক কোং বাড়ী কামরুল হাসান নোমান, টেক্সি ফকিরের মাজার তিন রাস্তার মোরে কায়ছার, বরফকল মনিরমেম্বারের বাড়ী সামনে রুবেল, ঈদগাহ কর্বল্লার ময়দান গলিতে রনি, রঙ্গিপাড়া ১০ তালা ভবন এর সামনে কালাম, এরশাদ, মোল্লা পাড়া সূর্যের হাসি ক্লিনিকের পাশে ডালিয়া, ইফতি, ফিরোজ, সূর্যের হাসি ক্লিনিক বড়বাড়ীতে মিন্টু, মহুরি পাড়া লালবাগ এর ভিতরে জুম্মন, ধুয়াপাড়া বাবলু, আজাদ, ধুয়াপাড়া জোড়া হামবা গলিতে জীবন প্রকাশ পিচ্চি জীবন, ধুয়াপাড়া কমিশনার বাড়ীর সামনে গিয়াস উদ্দিন, বসুন্ধরা আবাসিক জোড়া হামবার সামনে মোতালেব, বসুন্ধরা আবাসিক বন্ধু মহলের সামনের গলিতে এরশাদ, ইউসুফ, বড়পুকুর পাড় বাঁশতল ২২ কলোনীতে রাকিব, বড়পুকুর পাড় বাঁশতল ১৯ কোয়াটারে জাহাঙ্গীর প্রকাশ কাটুন জাহাঙ্গীর, হাজার দিঘীর পাড় সুরভীর বাড়ীতে টিপু, বড়পুকুর পাড় বরফকল আবু বক্কর মসজিদ এর পাশে আবদুল হাকিম, বউ বাজার আমতলে মুসলিম, কেতুরা মসজিদ এর পাশে ওসমান, সোনাশাহ মাজার গলিতে আরজু প্রকাশ বাবা আরজু, খাজা হোটেলের সামনে সাজ্জাদ, এসি মসজিদ এলাকায় রনি প্রকাশ মাইকেল রনি, ২৫নং ওয়ার্ড পানির কলে জামশেদ, সেলিম, আব্বাস, বাবু, টুটুল, লিটন, সাইফুল, নয়া বাজারে শিফু, সবুজবাগে শাহ আলম, আবদু পাড়া মাজার গেইটে রাসেল চালাচ্ছে ইয়াবার কারবার, রঙ্গিপাড়া ছোট মসজিদ এলাকায় সাইফুল, রমনা আবাসিক জালালের ছেলে ইউসুফ, রঙ্গিপাড়া মাছ বাজার ব্যাংক কলোনির মুখে মাঠো চালাচ্ছে মদের কারবার, মহুরীপাড়া গুলবাগ-এ শাহনাজ, আবদুল হামিদ, শ্যামলী আবাসিকে সোনিয়া, রঙ্গিপাড়া এম এ ছালাম স্কুল গলিতে পাখি, এক্সেস রোডে গাঁজা সম্রাট পাখির ভাই, খোরশেদ, মোরশেদ, পারুল বেগম, ব্রিকফিল্ড রোড খালপাড়ে বাবু প্রকাশ কালা বাবু, সুরাইয়া, শাহাবুদ্দীন চালাচ্ছে গাঁজার কারবার। বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রির অবস্থা আরও রমরমা। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরও কোনো অভিযান না হওয়ায় মাদক বিক্রেতার সংখ্যাও বাড়ছে।
স্থানীয় পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, আগস্টের আগে আড়ালে ইয়াবা, গাঁজা বিক্রি হতো। তেমন কোনো অভিযান হয়নি। ক্রেতারা গ্রেপ্তার হলেও বিক্রেতারা থাকত ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু আগস্টের পর থেকে মাদকের বেচাকেনা চলে প্রকাশ্যে। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে মাদক ব্যবসায়ীদের যেন এখন সুদিন। সরকার পরিবর্তনের পর র্যাবের কার্যক্রম সক্রিয় রয়েছে। এই সংস্থাটি ইয়াবার বড় চালান জব্দ করছে। কিন্তু এলাকাভিত্তিক খুচরা ব্যবসায়ীদের ডেরায় র্যাবের অভিযান পরিচালিত হয়নি। ফলে ব্যবসায়ীদের সাহস দিনের দিন বেড়ে চলছে। কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।এ বিষয়ে হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান চলছে, মাদক নির্মূলের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।