শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫১ পূর্বাহ্ন
আব্দুল্লাহ, চট্টগ্রাম থেকে॥
বিনা টোলে আর চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করতে পারবে না কোনো যানবাহন। চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ এই এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করতে দিতে হবে টোল। ইতোমধ্যে টোল হার নির্ধারণ করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। এটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা রোধে সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের মতো হালকা যানবাহন চলাচল করতে না দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নতুন প্রস্তাবে এ ধরনের গাড়ি চলাচলের কথা বলা হয়েছে।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে লালখান বাজার থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েতে পরীক্ষামূলকভাবে যানবাহন চলাচল করছে। ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে চট্টগ্রাম শহর থেকে বিমানবন্দরে যাতায়াত করতে পারছেন যাত্রীরা। যাতায়াতের ক্ষেত্রে কাভার্ড ভ্যানকে সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা এবং মোটরসাইকেলকে সর্বনিম্ন ১৫ টাকা টোল দিতে হবে।
চউকের কর্মকর্তারা জানান, মূল অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হলেও নিরাপত্তা ও সুরক্ষার কিছু কাজ এখনও বাকি রয়েছে। গত বছরের ১৪ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে ১৫৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে ভার্চুয়ালি নগরীর ‘মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী-সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে’র উদ্বোধন করেছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়। গত ১২ ফেব্রুয়ারি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সভায় টোল হার অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখানে মোটরসাইকেল, ট্রেইলার ও সিএনজি অটোরিকশা এই তিন ধরনের গাড়ি বাদ দিয়ে টোল চূড়ান্ত করা হয়। ওই সময় প্রাইভেটকারের টোল ১০০, জিপ ১০০, মাইক্রোবাস ১০০, মিনিবাস ২০০, বাস ৩০০, ট্রাক (৪ চাকা) ২০০ টাকা ও কাভার্ড ভ্যানের জন্য ৫০০ টাকা করে টোল অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়।
এটা জানাজানি হলে নগরবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। টোল কমানোর পাশাপাশি মোটরসাইকেল এবং সিএনজি অটোরিকশা চলাচলের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান তারা। সিডিএ গত ২৮ অক্টোবর টোলহার পুনঃনির্ধারণ করে। এতে টোল কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি নগরীর জিইসি বা টাইগার পাস মোড় থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে আগ্রাবাদ বা ফকিরহাটে নামা এবং নিমতলা বা আগ্রাবাদ থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে লালখান বাজার বা টাইগার পাসে নামা, এই অংশে ট্রেইলার চলাচল করতে না দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
তবে বাকি অংশে প্রেইলার চলাচলের জন্য টোল প্রস্তাব করা হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ সব সংস্থার যানবাহন টোল দিয়েই চলাচলের কথা প্রস্তাবে বলা হয়েছে। নতুন টোল হারের বিষয়ে বলা হয়েছে-জিইসি, সিআরবি, আগ্রাবাদ থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে সিইপিজেড, সিমেন্ট ক্রসিং, কেইপিজেড, সি-বিচে নামা গাড়িগুলোর ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল ১৫, অটোরিকশা (৩ চাকা) ৩০, প্রাইভেটকার ৮০, জিপ ১০০, মাইক্রোবাস ১০০, পিকআপ ১৫০, মিনিবাস ২০০, বাস ২৮০, প্রাক (৪ চাকা) ২০০, ট্রাক (৬ চাকা) ৩০০, কাভার্ড ভ্যান ৪৫০ এবং ট্রেইলার ৪৫০ টাকা।
তবে ট্রেইলারের টোল নির্ধারণ করা হলেও ওঠানামায় নিষেধ রয়েছে। সি-বিচ, কেইপিজেড, সিইপিজেড থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে নিমতলা, আগ্রাবাদ, টাইগারপাস, লালখানবাজারে নামা গাড়িগুলোর টোলহার মোটরসাইকেল ১৫, অটোরিকশা ৩০, প্রাইভেটকার ৮০, জিপ ১০০, মাইক্রোবাস ১০০, পিকআপ ১৫০, মিনিবাস ২০০, বাস ২৮০, ট্রাক (৪ চাকা) ২০০, ট্রাক (৬ চাকা) ৩০০ ও কাভার্ডভ্যান ৪৫০ টাকা। অপরদিকে, নগরীর জিইসি, টাইগারপাস থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে আগ্রাবাদ, ফকিরহাটে নামা গাড়িগুলোর টোল মোটরসাইকেল ১০, অটোরিকশা ২০, প্রাইভেটকার ৫০, জিপ ৭০, মাইক্রোবাস ৯০, পিকআপ ১৩০, মিনিবাস ১৮০, বাস ২৫০, ট্রাক (৪ চাকা) ১৮০, ট্রাক (৬ চাকা) ৩০০, কাভার্ডভ্যান ৪৫০ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে পর্যালোচনা সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে সিডিএ’র বোর্ড সভায় নতুন টোল প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। বোর্ড তা অনুমোদন করেছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে টোল আদায়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে। উল্লেখ্য, নগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়।