বুধবার, ৩০ Jul ২০২৫, ০৬:৫০ অপরাহ্ন
বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের বড়লেখায় বসতবাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তায় বাঁশের বেড়া ও গাছের চারা লাগিয়ে প্রভাবশালীরা এক কলেজছাত্রীর পরিবারকে প্রায় তিন মাস ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। প্রতিবেশীদের বাধায় মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) অনার্স প্রথম বর্ষের লোকপ্রশাসন ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষায় যেতে পারেননি কলেজছাত্রী মরিয়ম ফেরদৌস মনি।
এমন অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের পাবিজুরীপার গ্রামে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ফাঁড়ি পুলিশে একাধিকবার ধরনা দিয়েও প্রতিকার না পাওয়ায় অবশেষে ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী মরিয়ম ফেরদৌস মনি রাস্তা অবরুদ্ধকারী ৬ ব্যক্তির বিরুদ্ধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন। এরপরও প্রতিকার মিলছে না। মনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী আলাউদ্দিনের মেয়ে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বড়লেখা থানার ওসিকে রাস্তার প্রতিবন্ধকতা অপসারণ, শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন।
আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা পরিবার বা প্রতিষ্ঠানের চলাচলের পথ বন্ধ করা যাবে না। একান্ত প্রয়োজনে পক্ষরা আলোচনা বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মধ্যস্থতায় বাজারমূল্যে ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে ন্যূনতম চলাচলের পথ দিতে হবে। কোনো পক্ষ রাজি না হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এজন্য এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হবে।
জানা গেছে, বড়লেখা নারীশিক্ষা একাডেমি ডিগ্রি কলেজের অনার্সের ছাত্রী মরিয়ম ফেরদৌস মনির বাবা-মা ২০১১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভাটাউচি মৌজায় ডিপি খনিয়ান ২৪৬ এর সাবেক ১৭৭৪ নং দাগের সোয়া ১০ শতাংশ ভূমি ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণ করেন। প্রায় ১২ বছর ধরে বসতবাড়ির দক্ষিণ দিকের অর্ধশত বছরের পুরনো রাস্তা দিয়ে কলেজছাত্রীর পরিবারসহ আশপাশের লোকজন চলাচল করেন। ওই রাস্তায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আকবর আলী ও ইউপি সদস্য সরকারি প্রকল্পে উন্নয়ন কাজ করেছেন।
কিন্তু হঠাৎ গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রতিবেশী জাকির হোসেন, নাজিম উদ্দিন, ফখর উদ্দিন ওরফে কটন আলী, আব্দুস শহিদ, আজাদ আহমদ গংরা কলেজছাত্রীর পরিবারের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি গাছের চারা রোপণ ও বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেন। বাধা নিষেধ করলেও তারা তা মানেননি। বসতবাড়ির দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকের রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়ায় পরিবারটি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। গাছের চারা ও বাঁশের বেড়ার ফাঁক দিয়ে চলাচল করতেও বাধা দেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদের শরণাপন্ন হলে তিনিও সুরাহা করে দেননি। ২৫ সেপ্টেম্বর শাহবাজপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার না পেয়ে অবশেষে ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী গত ৩১ অক্টোবর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রাস্তা বন্ধকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী মরিয়ম ফেরদৌস মনি বলেন, রাস্তায় গাছের চারা রোপণ ও বেড়া দেওয়ার কাজ শুরুর সঙ্গেই অনেকের কাছে যাই। লিখিত অভিযোগ দেই। সবাই সময়ক্ষেপণই করেন। অপরদিকে প্রতিপক্ষ রাস্তা বন্ধের কাজ পাকাপোক্ত করেছে। কিছু চারা মরে যাওয়ায় এগুলোর ফাঁক দিয়ে যাতায়াত করতেন। এখন তারা কাটা ফেলে তাও বন্ধ করে দিয়েছে। ফাঁকফোকরে বের হয়ে ইতোপূর্বে দুইটি বিষয়ের পরীক্ষা দিতে পারলেও তাদের বাধায় মঙ্গলবারের নির্ধারিত পরীক্ষায় যেতে পারেননি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী সুব্রত কুমার দত্ত বলেন, আদালত রাস্তার প্রতিবন্ধকতা অপসারণের ব্যবস্থা গ্রহণসহ প্রতিবেদন জমা দিতে থানার ওসিকে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন।
শাহবাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ ইন্সপেক্টর নবগোপাল জানান, আদালতের নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। মঙ্গলবার পরীক্ষায় যাওয়ার সময় ছাত্রীকে যেতে দেওয়া হয়নি এমন অভিযোগ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান কিন্তু প্রতিপক্ষ তার কথাও শুনেননি।