মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন
স্পোর্টস রিপোর্টার, ই-কণ্ঠ টোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ২১৭ রানেই অলআউট হয়ে যায়। ফলোঅন থেকে ৩৭ রান দুরে থাকতে আর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ২৩৬ রান দুরে থাকতে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে অনেক বড় লিড নিয়ে ফেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তৃতীয় দিন হাতে থাকা ৫টি উইকেট ২৫ রানে হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। তাতে করে টেস্ট সিরিজ হার ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়েছে। শুধু মুশফিকুর রহিম (৫১) হাফসেঞ্চুরি করতে পারেন।দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় দিনেই মহা বিপাকে পড়ে যায় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার গড়া ৪৫৩ রানের জবাবে দ্বিতীয় দিনেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।
১৩৯ রান করতে পারে। ৩১৪ রানে পিছিয়ে থাকে। তাতে ফলোঅন এড়াতেই আরও ১১৫ রান লাগে। মুশফিকুর রহিম ৩০ ও ইয়াসির আলী রাব্বি ৮ রানে অপরাজিত থেকে দ্বিতীয় দিন শেষ করায় ভরসা থাকে। ফলোঅন এড়ানোর আশা থাকে। কিন্তু ফলোঅন এড়ানো যায়নি।
প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা রানের পাহাড় গড়ায় বাংলাদেশকে সবার আগে ২৫৪ রান করতে হবে। কারণ, ফলোঅন এড়াতে এই রান লাগবেই। দ্বিতীয় দিন এক সেশন (শেষ সেশন) খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। ৪১ ওভার খেলার সুযোগ পায়। তাতেই ৫ উইকেট খতম হয়ে যায়। মাহমুদুল হাসান জয় (০), তামিম ইকবাল (৪৭), নাজমুল হোসেন শান্ত (৩৩), মুমিনুল হক (৬), লিটন কুমার দাস (১১) দলের ১২২ রানের মধ্যেই আউট হয়ে যান। এরপর মুশফিক ও রাব্বি মিলে দিন শেষ করেন। তৃতীয় দিন বৃষ্টিতে খেলা ২০ মিনিট পর শুরু হয়। কিন্তু বল মাঠে গড়াতেই রাব্বি এমনই বিধ্বংসী রূপ দেখান, সবাইকে হতভাগ করে দেন। লিজাড উইলিয়ামসের করা দিনের প্রথম তিন বলেই চার হাকান।
প্রথম ৫ ওভারে ৫ বাউন্ডারি হাকিয়ে দ্রুত রান তুলতে থাকেন। রাব্বি দ্রুত রান তুলেন। আর মুশফিক উইকেট আকড়ে থাকেন। ১৫০ রান ছাড়িয়ে দলের ১৭২ রান হতেই দুইজন মিলে ৫০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। দ্বিতীয় উইকেটে তামিম-শান্তর ৭৯ রানের জুটির পর বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে দ্বিতীয় ৫০ রানের জুটির দেখা মিলল। মহা বিপদের সময়ে এমন জুটি স্বস্তি দিয়েছে।
পোর্ট এলিজাবেথের সেন্ট জর্জেস পার্ক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সবচেয়ে বেশি উইকেট (৪০টি) নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তী পেসার অ্যালান ডোনাল্ড। ম্যাচও কম নয়, ৭টি খেলেছেন। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের পরামর্শ দিতে ডোনাল্ডই আসল ভরসা হতে পারেন। আবার পোর্ট এলিজাবেথই রাসেল ডোমিঙ্গোর জন্মস্থান। দুইজনই এখন বাংলাদেশ শিবিরে আছেন। পেস বোলিং কোচ ডোনাল্ড আর ডোমিঙ্গো হচ্ছেন প্রধান কোচ। নিশ্চয়ই কিভাবে খেললে ভালো করা যাবে, সেই পরামর্শ মিলেছে। আর তা কাজেও লাগতে শুরু করে। মুশফিকুর রহীম ও রাব্বি মিলে দলকে ২০০ রানের কাছে নিয়ে যান। যখন ১৯২ রানে যায় দল, তখন কেশভ মহারাজের বলে কট এন্ড বোল্ড হয়ে যান রাব্বি। হাফসেঞ্চুরির কাছে যেতেই বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা যেন চাপ নিয়ে নেন। তামিম যেমন ৩ রানের জন্য হাফসেঞ্চুরি করতে পারেননি। এবার রাব্বি ৪ রানের জন্য হাফসেঞ্চুরি করতে পারেননি। উইকেটে স্পিন ধরছে। এমন সময়ে খুব সতর্ক থেকেই খেলা উচিত।
রাব্বি তাড়াহুড়ো করে বুঝতে না পেরে শট নিয়ে ফেলেন। তাতেই প্রথম টেস্টের ম্যাচ জয়ী স্পিনার মহারাজ দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম উইকেটটি শিকার করে ফেলেন। ৮৭ বলে ৭ চারে ৪৬ রান করে আউট হন রাব্বি। মুশফিক-রাব্বির জুটি ৭০ রানের বেশি বড় হয়নি।
এবার মুশফিকের সঙ্গে মেহেদি হাসান মিরাজ যোগ দেন। দলের যখন ১৯৯ রান হয়, তখন বাউন্ডারি হাকান মিরাজ। দলের স্কোরে ২০০ রান যোগ হয়ে যায়। ফলোঅন এড়াতে আর ৫৪ রান প্রয়োজন থাকে। মুশফিক উইকেটে থাকায় সহজেই ফলোঅন এড়াবে বাংলাদেশ, তা ধরেই নেওয়া হয়। মুশফিক যেভাবে খেলতে থাকেন, তাতে অনেক ধৈর্য্য দরকার লাগে।
কোন ঝুকির শটই খেলেননি মুশফিক। উইকেটে প্রাচীর হয়ে দাড়িয়ে থাকেন। হাফসেঞ্চুরিও করে ফেলেন। সুইপ করে বাউন্ডারি হাকিয়ে ১৩৪ বলে হাফসেঞ্চুরিও করে ফেলেন মুশফিক। টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৫তম হাফসেঞ্চুরি করেন। ৮ চারে ৫১ রান করার পর কী যে হলো মুশফিকের। কোথায় আরও এগিয়ে যাবেন, তা না, ২ বলের মধ্যে আউট হয়ে গেলেন। হাফসেঞ্চুরি করার পরের বলেই এলবিডাবলিউয়ের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দেওয়ায় বাঁচেন। কিন্তু তার পরের বলেই স্পিনার সাইমন হারমারের ফুল লেন্থে অফ স্টাম্পে করা বলটি রিভার্স সুইপ করেন মুশফিক। বোল্ড হয়ে যান।
অহেতুক আউট হন মুশফিক (৫১)। লাঞ্চের মাত্র ১১ বল বাকি ছিল। মুশফিক ধৈর্য্য হারা হয়ে দলকে বিপদে ফেলে দেন। দলের ২১০ রানে আউট হন মুশফিক। ৭ উইকেটের পতন ঘটে। তখনও ফলোঅন এড়াতে ৪৪ রান লাগে। ঠিক এমন অবস্থাতেই লাঞ্চ হয়। দিনের প্রথম ঘন্টায় কী অসাধারণ ব্যাটিং করেন মুশফিক ও রাব্বি। দ্বিতীয় ঘন্টায় শেষে গিয়ে দুইজনই আউট হয়ে যান। তাতে প্রথম সেশনে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সাথে দ্বিতীয় দিনের ১৩৯ রানের সাথে আরও ৭১ রান করে বাংলাদেশ।
মুশফিক দ্বিতীয়দিনের ৩০ রানের সাথে আরও ২১ রান ও রাব্বি ৮ রানের সাথে আরও ৩৬ রান যোগ করে আউট হয়ে যান। এখন মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম, খালেদ আহমেদ, এবাদত হোসেনের উপরই সব নির্ভর করছে। দ্বিতীয় সেশন শুরুর তৃতীয় ওভারেই হারমারের বলে তাইজুল ইসলাম (৫) আউট হয়ে যান। দলের যখন ২১৭ রান হয়, তখন টপাটপ ২ উইকেট পড়ে অলআউটই হয়ে যায় বাংলাদেশ। মিরাজকে (১১) সাজঘরে পাঠান মহারাজ আর এবাদতকে (০) আউট করে ৩ উইকেট শিকার করেন হারমার। ফলোঅন থেকে ৩৭ রান দুরে থাকতে আর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ২৩৬ রান দুরে থাকতে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।