বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার, একুশের কন্ঠঃ
দেশের অভ্যন্তরে বেনাপোল স্থলবন্দরে বিএনপি-জামায়াতের একের পর এক হরতাল-অবরোধের কারণে পণ্য পরিবহনে ট্রাক সংকটের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
দেশে সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরে কিছু ট্রাক মিললেও ভাড়া বেড়েছে ট্রাক প্রতি ৪ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে স্বাভাবিক পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি দেশের শিল্প কলকারখানার উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
ট্রাক স্বল্পতার সুযোগে এক শ্রেণির ট্রাক চালকরা পণ্য পরিবহনের ভাড়া আগের তুলনায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা। শিল্প প্রতিষ্ঠানে ক্ষতির পরিমাণ জানা না গেলেও ট্রান্সপোর্ট ব্যবসাসহ অন্যান্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকার উপরে বলে তারা জানিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্যবাহী ট্রাকে আগুন দেওয়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে ট্রাক চালক ও মালিকদের মাঝে। এতে বেনাপোল কাস্টম হাউজে রাজস্ব আদায়ে প্রভাব পড়েছেন।
তবে ভারত থেকে আমদানি-রপ্তানিসহ খালাস প্রক্রিয়া রয়েছে স্বাভাবিকভাবে।
ভারত থেকে আসা শত শত পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরের অভ্যন্তরে জায়গা না থাকায় তারা দিনের পর দিন ট্রাক নিয়ে বন্দরের মধ্যে অবস্থান করছেন। হরতাল-অবরোধের কারণে ট্রাক সংকটে বন্দর থেকে পণ্য খালাস না হওয়ায় বন্দরে পণ্যজটের পাশাপাশি ভারত থেকে আসা ট্রাক থেকে পণ্য আনলোড করা যাচ্ছে না।
ভারতীয় পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে আসা ট্রাকচালক দেবাশিষ পাল বলেন, ভারত থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে তিনদিন ধরে বন্দরে দাঁড়িয়ে আছি। বাংলাদেশি ট্রাক সংকটে পণ্য আনলোড হচ্ছে না। এতে আমদানি পণ্যের জট বেড়েছে।
ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাক চালক যতীন শর্মা জানান, ৫ দিন ধরে তিনি পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছেন। কিন্তু খালাস করতে না পারায় বেনাপোল বন্দরে আটকে রয়েছেন। এখন ট্রাকেই সংসার পেতে বসেছেন। সেখানেই চলছে রান্না খাওয়া।
বেনাপোল বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করে রেল ও সড়ক পথে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয় ভারত থেকে। এসব পণ্যের মধ্যে বড় একটি অংশ শিল্পকলকারখানা স্থাপনের যন্ত্রাংশ, রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত কাঁচামাল, কেমিক্যাল, অক্সিজেন ও খাদ্যদ্রব্য জাতীয় পণ্য। একের পর এক হরতাল-অবরোধে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বন্দরটিতে।
ভারত থেকে পণ্য আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও, নাশকতার ভয়ে ট্রাক মালিক ও ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির অনেকে বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন করতে চাচ্ছেন না। এতে পণ্য পরিবহনে ট্রাক সংকটের মুখে পড়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। হরতালের কারনে রাতে বেলায় ট্রাক বেশি চলাচল করলেও তারা আতংকের মধ্যে থাকে।
ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার ট্রাক এখানে আসতেও ভয় পাচ্ছে। কখন না জানি আগুণ ধরিয়ে দেয় ট্রাকে।
স্থানীয় আমদানিকারকদের প্রতিনিধিরা জানান, আগে বেনাপোল থেকে ঢাকা ট্রাক ভাড়া ছিল ২২/২৩ হাজার টাকা এখন তা বেড়ে হয়েছে ২৭/২৮ হাজার টাকায়। আর বেনাপোল থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ভাড়া ৮ হাজার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে পণ্য পরিবহন খরচ বাড়ায় সরবরাহ যেমন কমেছে, তেমনি সময়মতো কাঁচামাল না পৌঁছানোয় শিল্প-কলকারখানার উৎপাদন চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে।
বেনাপোল ট্রাক ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সম্পাদক আজিম উদ্দীন গাজী জানান, ভারত থেকে পণ্য আমদানি স্বাভাবিক আছে। বেনাপোল বন্দরে কোনো অবরোধ, হরতাল নেই। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতামূলক ঘটনায় চাহিদা মতো ট্রাক বন্দরে আসছে না। এতে পণ্য খালাসের পরিমাণ কমেছে। স্বাভাবিক সময়ে বন্দর থেকে প্রায় ৪৫০ ট্রাক পণ্য খালাস হলেও, ট্রাক সংকটে এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০০ ট্রাকে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশ বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতিতে পড়বে।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুজ্জামান সনি জানান, অবরোধের কারণে বাইরের জেলা থেকে বন্দরে ট্রাক আসছে অনেক কম। ট্রাক ভাড়াও দ্বিগুণ প্রায়। অনেকে বন্দর থেকে মালামাল খালাস করে বেনাপোলসহ আশপাশের এলাকায় রয়েছে। সুযোগ বুঝে তারা চলাচল করছে। নাশকতা ও নিরাপত্তার কারণে অনেকে ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানে যেতে সাহস পাচ্ছে না। ঠিকমতো ট্রাক চলাচল করতে না পারায় তাদের শত কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।
আমদানিকারক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বেশি ভাড়া দিয়েও ট্রাক না মেলায় ক্ষতির মুখে পড়েছি। ঢাকার ভাড়া ৪/৫ হাজার ও চট্টগ্রামের ভাড়া ৭/৮ হাজার পর্যন্ত বেড়েছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমসবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, কাস্টমস ও বন্দরের কাজে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। তবে হরতালের কারণে বন্দরে ট্রাক সংকটে জরুরি আমদানি পণ্য গন্তব্যে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে শিল্প-কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। হরতাল ও অবরোধ এড়িয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অনুরোধ জানান এ ব্যবসায়ী নেতা।