রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন

সোয়া কোটি টাকার রাস্তার কাজ নিয়ে গড়িমসি, শিবালয়বাসীর সীমাহীন দুর্ভোগ

সুরেশ চন্দ্র রায়, শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার ব্যস্ততম রাস্তার মধ্যে মহাদেবপুর-ঝিটকা রাস্তাটি অন্যতম। গত বন্যায় এ রাস্তাটি পানিতে ডুবে গেলে মহাদেবপুর হতে শিমুলিয়া পর্যন্ত ৩ কি.মিটারের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দে পরিণত হয়। শিবালয় উপজেলা এলজিইডি অফিস রাস্তার বেহালদশা পরিদর্শণ শেষে রাস্তা মেরামতের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে। টেন্ডারের প্রেক্ষিতে রাস্তার কাজ পান দৌলতপুরের নন্দদুলাল বসাক নামে একজন ঠিকাদার।

স্থানীয়রা জানান, ঐ ঠিকাদার অল্প সংখ্যক শ্রমিক নিয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই রাস্তার ওপরের পিচ ঢালাই তুলে ইট আর বালু বের করে ফেলেন। তখন এলাকাবাসী আশায় বুক বেঁধেছিলেন খুব তাড়াতাড়ি শেষ হবে রাস্তার কাজ। কিন্তু বিধি বাম হয়ে দাঁড়ায় এলাকাবাসীর জন্য। হঠাৎ অদৃশ্য কারণে ঠিকাদার রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেন। শুরু হয় জনদুর্ভোগ। সিএনজি, মটরবাইক, বাইসাইকেল, প্রাইভেটকার, ট্রাক, ভ্যান, রিক্সাসহ বিভিন্ন যানবাহন ও জনসাধারণের পদচারণায় তৈরী হয় ধূলি মহল এবং দুর্ঘটনার অন্যতম ক্ষেত্র। সাদা, কালো, নীল, হলুদ, বেগুনীসহ যে কোন রঙের কাপড় পরিধান করে এ রাস্তা দিয়ে গিয়ে গন্তব্য স্থলে পৌঁছে দেখা যায় পোষাকের রঙ পরিবর্তিত হয়ে লাল রঙে রুপান্তরিত হয়েছে। বাড়ি ঘর, দোকানপাঠ, বৃক্ষরাজি দেখে বোঝার উপায় নেই আসলে এর প্রকৃত রঙ কি? শুধূ তাই নয়, ভাতের থালা নিয়ে নিয়ে খেতে বসলে ১৫ মিনিটের মধ্যে থালা ও ভাতের রঙ পরিবর্তন হয়ে লাল হয়ে যায়।

শিমুলিয়া গ্রামের মতিন মোল্লা জানান, রাস্তার কাজের দীর্ঘ সূত্রতায় আমরা সবাই বিব্রতকর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। আমার পরিবারের কারো ইতোপূর্বে এলার্জি ও ঠান্ডাজনিত সমস্যা ছিলনা। কিন্তু রাস্তার এমন বেহালদশায় এখন প্রতিনিয়ত আমার পরিবারের সদস্যদের ঠান্ডাকাশি ও এলার্জির সমস্যা লেগেই থাকে। তিনি ঠিকাদারের প্রতি বিরক্ত প্রকাশ করে বলেন, এ রকম দুর্নীতি পরায়ণ ঠিকাদারদের লাইসেন্স বাতিল হওয়া প্রয়োজন।

মহাদেবপুর ব্যাংক মার্কেটের ঔষধ ব্যবসায়ী মো. শিপলু বলেন, এ রাস্তার এমন অবস্থার পর থেকে আমার ফার্মেসীতে ঠান্ডাকাশির রোগী অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আমি আর কি চিকিৎসা দিবো, রাস্তার ধূলাবালুতে আমি নিজেই দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। গতকাল দোকানে বসে ভাত খাওয়ার সময় রাস্তার ধূলা এসে আমার ভাত নষ্ট হয়ে গেলে বনরুটি খেয়ে দিন কাটিয়েছি। আঞ্চলিক ভাষায় একটা কথা বলে, আ-ধূয়াই ছিল ভাল, ধূইতে গিয়ে সবই গেল। এ রাস্তার অবস্থা যেন সেই রকম।

মোবাইল ফোনে ঠিকাদার নন্দলাল বসাক বলেন, উপজেলার টেন্ডারে ভুল থাকার কারণে মূলত এ সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া রিভাইসের রিপোর্ট যথাসময়ে হাতে না পাওয়া এবং আমার ব্যক্তিগত আর্থিক সংকটের কারণে রাস্তার কাজে বিলম্ব হচ্ছে। তবে আমি এখন রিপোর্টিং হাতে পেয়েছি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই কাজের সাইডে শ্রমিক পাঠাবো। এ বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি না করার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। আমি আগামীকাল আপনার সাথে সরাসরি গিয়ে দেখা করবো।

এ প্রকল্পের নকশাকার উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল ওহাব জানান, রাস্তার কাজের অগ্রগতির জন্য পরপর তিনটি চিঠি ঠিকাদার নন্দলাল বসাকের বরাবরে ইস্যু করা হয়েছে। কিন্তু সে চিঠির কোন উত্তর তিনি দেনননি। রাস্তার কাজের বিষয়ে তাকে কোন ছাড় দেয়া হবে না। কারণ তিনি আমাদের সাথে কাগজে কলমে চুক্তিপত্রে আবদ্ধ আছেন। কাজের কোন ব্যত্যয় ঘটলে বিধান অনুযায়ী কতর্ৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

উপজেলা প্রকৌশলী কাজী ফাহাদ কুদ্দুস জানান, শিবালয়ের মহাদেবপুর হতে শিমুলিয়া মোড় পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার রাস্তা মেরামতের জন্য ১ কোটী ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের মন্থরগতির প্রেক্ষিতে ঠিকাদার নন্দলাল বসাককে বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও তিনি কোন উত্তর দিচ্ছেন না। রিভাইজিং রিপোর্ট হাতে না পাওয়ার দোহাই দিয়ে তিনি অনেক সময় পার করেছেন। এখন যদি তিনি অতিদ্রুত রাস্তার কাজ শুরু না করেন তবে পিপিআর-২০০৮ এর বিধান অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মানিকগঞ্জ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) ফয়জুল হক জানান,এ রাস্তার কাজের টেন্ডারে গানিতিক কিছু ত্রুটীর কারণে মূলত কাজ করতে বিলম্ব হচ্ছিল। সম্প্রতি ভুল সংশোধণ করে রিপোর্টিং দেয়া হয়েছে। এখন অতিদ্রুত রাস্তার কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com