সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৫:৫৮ অপরাহ্ন

সোনালি বাঙ্গি উদ্ভাবন করলেন রাবি অধ্যাপক

রাবি প্রতিনিধি: সোনালি বাঙ্গি। ছোট অবস্থায় দেখলে যে কেউই মাল্টা বা কমলা ভেবে ভুল করবেন। কারণ ফলটির গায়ের রং সোনালি। প্রচুর মিষ্টি হওয়ায় স্বাদে অতুলনীয়। গায়ের রঙের জন্য এর নাম দেয়া হয়েছে সোনালি বাঙ্গি।

দীর্ঘ আট বছরের প্রচেষ্টায় এই বাঙ্গির উদ্ভাবন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব বায়োলোজিক্যাল সায়েন্সের (আইবিএসসি) পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মনজুর হোসেন।

অধ্যাপক মনজুর জানান, বর্তমানে দেশে বিভিন্ন জাতের বাঙ্গি চাষ হয়ে থাকে। অঞ্চলভেদে ফলটি খরমুজ, ফুটি, কাঁকুড় ইত্যাদি নামে পরিচিত। তবে কুমড়াগোত্রীয় গ্রীষ্মকালীন এই ফলটি খেতে বালি বালি। স্বাদেও মিষ্টি নয় এবং পরিপক্ব হওয়ার আগেই ফেটে যায়। কিন্তু নতুন উদ্ভাবিত এই সোনালি বাঙ্গি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো চিনির মতো মিষ্টি আর ফেটে না যাওয়া।

প্রথম অবস্থায় ফলটি গাঢ় সবুজ রঙের হয়। আকৃতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর গায়ের রং পরিবর্তন হয়ে সোনালি বর্ণ ধারণ করে। ছোট অবস্থায় দেখতে মাল্টা বা কমলার মতো এবং পরিপূর্ণ বাঙ্গিগুলো দেখতে একটি ছোট আকারের মিষ্টি কুমড়ার মতো। প্রতিটি বাঙ্গিই আধা কেজি থেকে পৌনে এক কেজি হয়ে থাকে। আর এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি, ভিটামিন-এ এবং আয়রন বিদ্যমান।

এই বাঙ্গির চাষ পদ্ধতিও ভিন্ন। মাটি থেকে চার-পাঁচ ফুট উচ্চতায় মাচা করে ফলটি চাষ করতে হয়। চাষের জন্য আলাদা কোনো মাটির প্রয়োজন নেই। সাধারণ বাঙ্গিগুলো যে মাটিতে চাষ করা হয়, এ বাঙ্গিও সেই মাটিতে চাষ করা যাবে। চাষের খরচ সাধারণ বাঙ্গির তুলনায় কিছুটা বেশি। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ পড়বে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।

জাপানে একধরনের মিষ্টি জাতের বাঙ্গি চাষ হয়। অধ্যাপক মনজুর হোসেন তার জাপানের বন্ধু কাতো কেউকির পরামর্শে বাংলাদেশে মিষ্টি বাঙ্গি চাষের উদ্যোগ নেন। বেশ কয়েকবার তিনি পরীক্ষামূলকভাবে চাষও করেন। কিন্তু মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী না হওয়ায় বীজগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকেই বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী মিষ্টি জাতের বাঙ্গি উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা শুরু করেন তিনি। দীর্ঘ আট বছর পর তিনি এই মিষ্টি জাতের বাঙ্গি উদ্ভাবনে সফল হন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন পদ্মা আবাসিক এলাকায় অধ্যাপক মনজুর হোসেনের গবেষণাগারে গিয়ে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে সোনালি বাঙ্গির চারা রোপণ করা হয়েছে। কিছু কিছু গাছে সোনালি বাঙ্গি ঝুলে আছে। বাঙ্গিগুলো আকার বড় আকারের কমলার মতো। পাঁচ শতক জায়গায় এই সোনালি বাঙ্গির চাষ করছেন অধ্যাপক মনজুর।

জাপান মিষ্টি জাতের বাঙ্গি দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। যদি উৎপাদন বাড়ানো যায় তাহলে কৃষকরা যেমন লাভবান হবে তেমনি রফতানির মাধ্যমে অনেক অর্থও আয় করা যাবে বলে আশা করছেন অধ্যাপক মনজুর হোসেন।

তিনি বলেন, ‘বাঙ্গি যে কতটা মিষ্টি হতে পারে সেটা অনেকে ভাবেওনি। কাতো কেউকির পরামর্শে কাজ শুরু করেছিলাম। দীর্ঘদিন গবেষণার ফলে মিষ্টি জাতের এই বাঙ্গি উদ্ভাবন করতে পেরেছি।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com