শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫, ১০:০৯ অপরাহ্ন
স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ঢাকার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) ঢাকার ফিফা প্রীতি ম্যাচে ৩-০ গোলের জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা। নতুন কোচ সাইফুল বারী টিটুর অধীনে এটি মেয়েদের প্রথম জয়। একইসঙ্গে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পরও প্রথম জয় মারিয়া-সাবিনাদের। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে সিঙ্গাপুরকে ৩-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। সাফ শিরোপা জেতার পর প্রথম জয় সাবিনাদের। ম্যাচে তহুরা খাতুন দুটি ও আফেইদা খন্দকার একটি গোল করেন। ছয় বছর আগে সিঙ্গাপুরের কাছে ৩-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। অর্ধযুগ পর এসে আরেকটি ফিফা প্রীতি ম্যাচে একই ব্যবধানে তাদের হারিয়ে প্রতিশোধ নিল বাংলাদেশ। তাই ম্যাচ শেষে হাত নেড়ে দর্শকদের অভিবাদনের জবাবও দেন সাবিনা, সানজিদা, রিতুপর্ণারা। ম্যাচের শুরু থেকেই সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে আক্রমনাত্মক খেলতে থাকে বাংলাদেশ। সাবিনাদের মুহুর্মুহু আক্রমনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন সিঙ্গাপুরের ফুটবলাররা। ফিফা র্যাংকিংয়ে ১২ ধাপ এগিয়ে থাকা দলকে আগে অচেনা মনে হলেও মাঠের লড়াইয়ে চেনা প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেন সাবিনারা।
২ মিনিটেই গোলের মুখ দেখে বাংলাদেশ। কর্নার পায় তারা। শর্ট কর্নার করেন সাবিনা। পাশেই ছিলেন মারিয়া। মারিয়ার কাছ থেকে আবারও বল পেয়ে বক্সের ভেতরে উঁচু লব ফেলেন। জটলার ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডার আফিদা খন্দকার হেড করেন। সেই হেডের বল ক্রসবারের ভেতরে লেগে গোললাইন অতিক্রম করে ফিরে আসে। রেফারি গোলের বাঁশি বাজলে উল্লাসে ফেটে পড়ে লাল-সবুজ বাহিনী (১-০)।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারির সেই ম্যাচে ৩-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা । সেই হাতের মধুর প্রতিশোধ নিল তারা। চোটের কারণে কৃষ্ণা রানী সরকারের অনুপস্থিতিতে আক্রমণভাগের ধার নিয়ে কিছুটা সংশয় ছিল।
দুই বছর পর গোলের দেখা পেলেন তহুরা খাতুন। তাই চলতি বছরে প্রথম জয়ের দেখল বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। গত বছর সেপ্টেম্বরে কাঠমান্ডু থেকে সাফ জিতে আসার পর এ বছর পাঁচটি ম্যাচ খেলেছেন সাবিনারা। নেপালের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের দুটিতেই ড্র (১-১ ও ০-০) করেছিল বাংলাদেশ। তবে সিরিজ নির্ধারনী
টাইব্রেকারে সাবিনাদের ৪-২ গোলে হারিয়ে ট্রফি নিয়ে যায় নেপাল। হাংঝু এশিয়ান গেমসে জাপানের কাছে ৮-০ ও ভিয়েতনামের কাছে ৬-১ গোলে হারলেও নেপালের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছিল। নিয়মিত কোচ গোলাম রব্বানী চলে যাওয়ার পর সাইফুল বারীর তত্বাবধানে এটিই প্রথম জয় সাবিনাদের।
চোটের কারণে কৃষ্ণা রানী সরকারের অনুপস্থিতিতে আক্রমণভাগের ধার নিয়ে কিছুটা সংশয় ছিল। তবে অন্যদের দুর্দান্ত পাসিং, ড্রিবলিং আর গতির সেই সংশয় দূর হয়ে যায়। প্রথম মিনিটেই গোল পেতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু বক্সে ঢুকে তহুরা খাতুন গোলকিপারকে একা পেয়েও দেরি করে ফেলেন, পরে ডিফেন্ডারদের চার্জে শটই নিতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড। হতাশা কেটে যায় মিনিট দুয়েক পরই। গোল পেয়ে যায় বাংলাদেশ। অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ছোট কর্নার নেওয়ার পর মারিয়া মান্দার কাছ থেকে ফিরতি পাস পেয়ে বক্সে লং বল বাড়ান। আফেইদা খন্দকারের হেডে বল ক্রসবারের ভেতরের দিকে লেগে গোললাইন পেরিয়ে যায়। রেফারি যাপা আপুহামিলা গোল নিশ্চিত করেন (১-০)। দ্বিতীয় গোলের দেখা পেতে খুব বেশি দেরি করতে হয়নি বাংলাদেশকে। ১৬ মিনিটে সাবিনার ছোট পাস ধরে একাধিক ডিফেন্ডারকে পায়ের কারিকুরিতে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন মারিয়া। শটটা তিনি নিলেও গোল পেতে পারতেন। তবে মারিয়ার পাশে থাকা তহুরা দ্রুত টোকায় বল জড়িয়ে দেন জালে (২-০)। শুরুতেই ম্যাচে চালকের আসনে বসার পর বাংলাদেশ চাপ ধরে রাখে সিঙ্গাপুরের রক্ষণে। ২৬ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে সাবিনা খাতুনের শট।
৬০ মিনিটে তহুরা খাতুন নিজের জাত নিয়েছিলেন দারুণ এক গোল করে। নিজেদের রক্ষণভাগ থেকে লম্বা শট নিয়েছিলেন মাসুরা পারভীন। বক্সের ভেতরে উড়ে আসা সেই বল ধরে গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে প্লেসিংয়ে নিজের দ্বিতীয় ও দলের তৃতীয় গোল করেন তহুরা। তবে তাতে বড় জয় পেতে কোনো অসুবিধা হয়নি তাদের।
৭৬তম মিনিটে মারিয়ার শট যায় পোস্ট ঘেঁষে। একটু পর সানজিদা খাতুনকে তুলে শাহেদা আক্তার রিপাকে নামান টিটু। ৮৪তম মিনিটে সাবিনার বাঁ দিকের বক্সের একটু বাইরে থেকে নেওয়া ফ্রি কিক ক্রসবারে লেগে প্রতিহত হয়।
৭৭ মিনিটে মারিয়া মান্ডা বক্সে ফাঁকায় বল পেয়েছিলেন সাবিনার কাছ থেকে। মারিয়া প্রথম পোস্টে বল মেরে সুযোগ নষ্ট করেন। বল চলে যায় গোলরক্ষকের হাতে। কোচ টিটুর অধীনে প্রথম জয় পেল বাংলাদেশ। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পরও প্রথম জিতল মেয়েরা। সাফের শিরোপা এনে দেওয়ার পর কোচের দায়িত্ব ছাড়েন গোলাম রব্বানী ছোটন। এরপর খেলা পাঁচ ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে ড্র করেছিল দল, হেরেছিল দুটিতে।
একই ভেন্যুতে দুই দল দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হবে আগামী সোমবার ৪ ডিসেম্বর।
বাংলাদেশ একাদশ ॥ রুপনা চাকমা, শিউলি আজিম, শামসুন্নাহার, আফিদা খন্দকার, মাসুরা পারভীন, মনিকা চাকমা (স্বপ্না রানী) , সানজিদা আক্তার (শামসুন্নাহার জুনিয়র), মারিয়া মান্ডা, রিতু পর্না চাাকমা (শাহেদা আক্তার রিপা) তহুরা খাতুন (সুমাইয়া) ও সাবিনা খাতুন (আকলিমা)।