শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:১৪ পূর্বাহ্ন
মুজিবুর রহমান, সালথা (ফরিদপুর) থেকেঃ ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া কুমার নদের ঘাটে শত বছর ধরে রশি টেনে কাঠের নৌকায় পারাপার হচ্ছে দশ গ্রামের হাজারও মানুষ। কুমার নদের ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণের অভাবে দুর্ভোগের শেষ নেই এসব গ্রামবাসীর। জন-সাধারণের দুর্ভোগের সীমা বছরের পর বছর পেরুলেও এখানে নির্মাণ করা হয়নি ব্রিজ।
নদের দুই পারে রয়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। একপারে রয়েছে এলাকার মধ্যে সব চেয়ে বড় মাঝারদিয়া বাজার। বাজারটি অনেক পুরাতন। স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করেন এই বাজারে। যে কারণে প্রতিদিন এই ঘাট দিয়ে পারাপার হতে হয় স্থানীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের। ঘাট পারাপারে তাদের একমাত্র ভরসা রশিটানা নৌকা।
স্থানীয়দের পক্ষ সংশ্লিষ্টদের কাছে মাঝারদিয়া কুমার নদের এই ঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি করে আসছে প্রায় অর্ধশত বছর ধরে। তবে তাদের দাবি, অদ্যাবধি পূরণ করতে পারেনি কেউ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সালথা ও উপজেলা সীমান্তের মধ্যদিয়ে বয়ে গেছে কুমার নদ। নদের পশ্চিম পারে রয়েছে সালথা আর পূর্ব পারে রয়েছে নগরকান্দা উপজেলার সীমানা। মাঝে কুমার নদ। নদের মধ্যে রয়েছে একটি কাঠের কোষা নৌকা। নৌকাটির দুই মাথা রয়েছে প্রয়োজনমত রশি বাঁধা। তবে নৌকায় মাঝি নেই। সাধারণ মানুষ নৌকায় উঠে নিজেরাই রশি টেনে পারাপার হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল- দুই শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন নারী এসে নগরকান্দার ওই পারের ঘাটে এসে বসে রয়েছে। তখন কোনো পুরুষ পারাপার হওয়ার মত ছিল না ঘাটে। ওই নারীরা রশি টেনে এপার আসতেও পারছে না। পরে একজন পুরুষ এসে রশি টেনে তাদের পার করে এপার নামিয়ে দিয়ে যায়।
নগরকান্দার ওই পারের কল্যাণপট্টি গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী আঁখি আকতার বলেন, কলেজ খোলা থাকলে মাঝে মাঝেই এভাবেই ঘাটে এসে বসে থাকতে হয়। কারণ আমরা মেয়েরা রশি টেনে নৌকা পার হতে পারি না। বর্ষা-মৌসমে আরও বিপাকে পড়তে হয়। অপেক্ষা করতে হয় কখন একজন পুরুষ এসে নৌকার রশি টেনে আমাদের পার করবে। অনেক সময় ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ক্লাস টাইম শেষ হয়ে গেলে বাড়িতে ফিরে যেতে হয়। কুমার নদের এই ঘাটে ব্রিজ নির্মাণ না হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতে চরম বিপাকে পড়তে হয় আমাদের।
কল্যাণপট্টি সরদার বাড়ি জামে মসজিদ ইমাম নাসির ফকির, সালথার এপারের মাঝারদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ইদ্রিস মাতুব্বর, নান্নু মাতুব্বর ও জালাল মোল্যা নামে মুরব্বিরা বলেন, শত বছর ধরে এই ঘাটে রশি টেনে নৌকা দিয়ে পারাপার হচ্ছে ১০ গ্রামের হাজারও মানুষ। কৃষকরা মাথা করে ফসল এনে ঘাটে এসে নৌকা দিয়ে পার হয়ে বাজারজাত করছেন। এতে আমাদের চরম কষ্ট হচ্ছে। দেশ যখন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে, তখন একটি ব্রিজের অভাবে আমাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এটা দেখার কেউ নেই।
মাঝারদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি নাইম মুন্সী বলেন, নগরকান্দার ওই পারে রয়েছে আইনপুর দাখিল মাদ্রাসা, আইনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সালথার এপারে রয়েছে মাঝারদিয়া দাখিল মাদ্রাসা, মাঝারদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের খেয়া নৌকায় নদ পার হতে হয়। বিশেষ করে শিশু শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে নদ পার হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ সময়ের দাবি।
মাঝারদিয়ার বাজা কমিটির সভাপতি সেলিম মাতুব্বর বলেন, কুমার নদের এই ঘাটে ব্রিজ নির্মাণের জন্য কয়েকবার জনপ্রতিনিধদের অবগত করা হয়েছে। কিন্ত কোনো কাজ হয়নি। ব্রিজের অভাবে আশপাশের অন্তত দশটি গ্রামের সাধারণ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে নদ পারাপার হচ্ছে। কৃষিপণ্য নিয়ে বাজারে যাওয়া-আশায় সময় নদ পারাপারে ভোগান্তিতে পড়তে। এসব গ্রামবাসীদের জেলা-উপজেলা শহরে যেতে হয় দুর্ভোগ নিয়ে। এমন অবস্থা এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ হওয়া খুবই জরুরি। ব্রিজটি নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাই।
সালথা উপজেলা প্রকৌশলী তৌহিদুর রহমান বলেন, মাঝারদিয়া কুমার নদের ঘাটে একটি ব্রিজের খুব প্রয়োজন বলে স্থানীয় কয়েকজন আমাকে জানিয়েছেন। আমাদের কাছে একশ’মিটার ব্রিজের একটি প্রকল্প আসছে। আমরা কুমার নদের ওই ঘাটটি মেপে দেখব। যদি একশ’ মিটার হয়, তাহলে আমরা একটা প্রতিবেদন পাঠাব দ্রুতই। তবে একশ’মিটার হবে বলে আমাদের ধারণা।