বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ০৫:০৮ অপরাহ্ন

সাগর থেকে ভেসে আসা ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার, ৭ মরদেহ হস্তান্তর

কক্সবাজার প্রতিনিধি::

কক্সবাজার সৈকত থেকে ৬ মরদেহ ও দু’জন জীবিত উদ্ধারের এক দিনের মাথায় আরো তিন মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। সৈকতের হিমছড়ি ও মহেশখালীর সাগরতীর থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল নাগাদ পৃথক সময়ে মরদেহগুলো পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার।

এ নিয়ে মোট নয়জনের মরদেহ উদ্ধার হলেও ৭ মরদেহের পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তারা সবাই ভোলার চরফ্যাশন এলাকা থেকে মাছ শিকারে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া জেলে বলে দাবি করা হচ্ছে। তাদের পরিচয় সনাক্ত করেছেন স্ববজনরা। বৈরী আবহাওয়ায় দূর্যোগে পতিত হওয়া ফিশিং ট্রলারের মালিকদের একজন ভোলার চরফ্যাশন দক্ষিণ চরনাজিম উদ্দিনের মৃত ওয়াহেদ আলির ছেলে মো. ওয়াজ উদ্দিন মাঝি (৪৮), তার প্রতিবেশি মৃত আব্দুল কাদের মাঝির ছেলে মো. আনোয়ার হোসেন (৪৭) ও অপর প্রতিবেশি হাজী বশির মাষ্টারের ছেলে নিজাম উদ্দিন বাবর (৩৮)।

সনাক্ত হওয়া মরদেহ গুলো বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ ওয়াজ উদ্দিন মাঝিকে বুঝিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. খায়রুজ্জামান।

সনাক্ত হওয়া মরদেহগুলো হলো, ভোলার চরফ্যাশন রসুলপুর ১ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আসমান পাটারীর ছেলে শামছুদ্দিন পাটারী (৪৫),পূর্ব মান্দ্রাজ এলাকার মৃত আব্দু শহীদের বাবুল (৩২), উত্তর মাদ্রাজের মৃত আব্দুল হকের ছেলে মো. মাসুদ (৪৫), একই এলাকার মৃত বুজুগ হাওলাদারের ছেলে আজি উল্লাহ প্রকাশ মনির (৩৮), মৃত নুরের ছেলে অলি উল্লাহ (৫০) রসুলপুর ৬নং ওয়ার্ড শসীবিষণের মুসলিম বলির ছেলে জাহাঙ্গীর বলি (৪০) ও পূর্ব মান্দাজ ইউপির তরিক মাঝির ছেলে কামাল হোসেন (৩৫)।

এদের মাঝে কামাল হোসেনকে বৃহস্পতিবার ভোররাতে মহেশখালীর ধলঘাট ইউনিয়নের হাসেরচর সমুদ্রতীর এলাকায় ভাসন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। আর বাকীদের বুধবার কক্সবাজার সৈকত এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল।

এসময় সৈকতের শৈবাল পয়েন্ট থেকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার হয় ভোলার চরফ্যাশনের মান্দাজ ইউনিয়নের বাসিন্দা মকবুল সর্দারের ছেলে মনির মাঝির (৪২) ও ট্রলার মালিক ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে জুয়েল (৩২)। তারা কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ওসি খায়রুজ্জামান জানান, বুধবার ভোররাতে ঢেউয়ের তোড়ে একটি ট্রলার বীচের বালিয়াড়িতে উঠে আসে। এর পাশাপাশি কয়েকটি মরদেহও ভেসে তীরে এলে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ সী-গাল পয়েন্ট থেকে চার মরদেহ উদ্ধার করে। ভারী বর্ষণের মাঝেও সকাল ৯টার দিকে ট্রলারের ভেতর থেকে আরো দুটি মরদেহ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়। পরিচয় সনাক্ত না হওয়া মরদেহটি ময়নাতদন্ত করে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পরিচয় জানার চেষ্টা করা হবে। সব মরদেহই একপ্রকার বিকৃত হয়ে গেছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মনির মাঝি জানান, ৪ জুলাই (বৃহস্পতিবার) চরফ্যাশনের শামরাজ ঘাট থেকে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে সাগরে নামে তারা ১৫ মাঝিমাল্লা। ৬ জুলাই (শনিবার) ভোরে হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে তাদের ট্রলারটি উল্টে যায়। ট্রলার থেকে ছিটকে পড়ে জেলেরা। তবে যে যারমতো ট্রলারটি ধরে রাখেন। ঢেউয়ের তোড়ে ট্রলারটি বার বার উল্টে গেলেও আমরা ধরে রাখার চেষ্টা করি। এরপর কে কোথায় যায় খেয়াল নেই। এরই মাঝে প্লাস্টিকের বেশ কয়েকটি পানির বোতল ড্রামের সাথে বেঁধে ফেলি। দুয়েকটি বোতলে পানি রেখে অন্য সব বোতলের পানি ফেলে দেয়া হয়। কক্সবাজার সৈকতে কিভাবে এলাম জানিনা।

দুর্ঘটনা কবলিত ট্রলারটির মালিক ওয়াজ উদ্দিনকে নিষেধাজ্ঞার সময়ে সাগরে বোট পাঠানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দেননি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, ট্রলার মালিক ওয়াজ উদ্দিনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ৮ মরদেহের মাঝে ৭ জনের পরিচয় শনাক্ত করায় তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

অপরদিকে, ট্রলারে উঠে এক সাথে সাগরে গেলেও ৭ মরদেহ ও দুজন জীবিত উদ্ধার হলেও বাকিদের কোন সন্ধান না মেলায় তাদের পরিবারের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com