বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫, ০২:৪৪ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, একুশের কণ্ঠ:: তিন দফা দাবিতে দেশের সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হচ্ছে না কোনো ক্লাস-পরীক্ষা।
বুধবার (২৭ আগস্ট) শিক্ষার্থীদের পক্ষে প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সাকিবুল হক লিপু আজকের এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন।
গতকাল প্রকৌশলের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার পর বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) সকালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, পুলিশের ন্যাক্কারজনক হামলায় বহু শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাছাড়া, ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি মাসুদ গণমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করেছেন।
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই পুলিশ জুলাইয়ের আগের পুলিশের মতোই আচরণ করেছে। কোনো পরিবর্তন হয়নি। তারা আবারও শিক্ষার্থীদের ওপর ঘৃণ্য অপকর্ম করেছে।
বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশের সব সরকারি-বেসরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদসমূহে আজ ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা নিজেদের নাম-পরিচয়সহ পুলিশের হামলার শিকার হওয়ার বর্ণনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেন প্রকাশ করবেন। এসব তথ্য পরবর্তীতে সংগঠিতভাবে সামনে আনা হবে।
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধির মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে জমা দিতে বলা হয়েছে। হামলার ছবি ও ভিডিও প্রচার ও সংরক্ষণ অব্যাহত রাখতে এবং নির্দিষ্ট ড্রাইভ লিংকে আপলোড করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, পুলিশকে অবশ্যই এই হামলার জবাবদিহি করতে হবে। যদি জবাবদিহি না করে, তবে আমরা ধরে নেবো, এরা পতিত স্বৈরাচারী সরকার শেখ হাসিনার পুলিশ।
শিক্ষার্থীরা জানান, পরবর্তী দাবি-দাওয়া ও করণীয় শিগগিরই আলোচনা সাপেক্ষে ঘোষণা করা হবে।
এদিকে, বুধবার রাতে শাহবাগে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
এর আগে, বুধবার সন্ধ্যায় প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন রেলপথ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বৈঠক শেষে রেলপথ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। শিক্ষার্থীদের দাবি চাকরি বা নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে। এর সাথে জড়িত সকল অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বৃহস্পতিবার আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, দাবি-দাওয়া, আলোচনা সবকিছু হবে। কিন্তু কথায় কথায় শাহবাগ অবরোধ ও যমুনায় যাওয়া এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ছাত্রদের জন্য আমাদের দরজা খোলা। তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে।
ঢাকার সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে চাকরিতে বৈষম্য দূর করার তিন দাবি নিয়ে দুদিন ধরে আন্দোলন করছেন। এই ধারায় প্রথম দিনের পর দ্বিতীয় দিন বুধবার তারা শাহবাগ অবরোধ করে সেখান থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে রওনা হলে পুলিশ তাদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে এবং লাঠিচার্জ করে। এ নিয়ে উত্তেজনা আরো ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল। তবে তাতে কোনো সমাধান আসেনি। বৃহস্পতিবার আবার সব পক্ষকে নিয়ে বসে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস পান শিক্ষার্থীরা।
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তিন দাবি হলো:
১. সরকারি চাকরিতে নবম গ্রেডে ৩৩ শতাংশ কোটা রয়েছে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য। সেই কোটা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে।
২. দশম গ্রেডে ১০০ শতাংশ কোটা রয়েছে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য। এটি বাতিল করে সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
৩. বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া ইঞ্জিনিয়ার পদবি ব্যবহার করা যাবে না। যদি এই পদবি ব্যবহার করে, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।