বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:০১ পূর্বাহ্ন

সফলতার ১৫ বছরে ফেসবুক  

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক:: ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পথচলা শুরু করে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। চলতি বছরের গত ৪ ফেব্রুয়ারি কার্যক্রম শুরুর ১৪ বছর পূর্ণ করে ১৫তে পদার্পণ করেছে ফেসবুক। বর্তমানে ফেসবুকের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী ২১৩ কোটি। আবার ২০ কোটি ভুয়া ফেসবুক ব্যবহারকারীও রয়েছে।
১৪ বছরে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশিই পেয়েছে ফেসবুক। এই দীর্ঘ সময়ে ফেসবুকের কার্যক্রম শুধু সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিভিন্ন ফিচারের পাশাপাশি নতুন প্রকল্প ও নিত্যনতুন ধারণা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আরো বেশি মানুষকে সাইটটির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে নিরলসভাবে কাজ করছেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মার্ক জাকারবার্গ। তবে এ দীর্ঘ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভুল এবং বেশ কিছু নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ। ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আত্মসমালোচনার পাশাপাশি ভুল সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি।
ফেসম্যাশ থেকে ফেসবুক
২০০৩ সালে জাকারবার্গ তখন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সে সময় তিনি ‘ফেসম্যাশ’ নামের একটি প্রোগ্রাম তৈরি করেন। চালুর প্রথম ৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করেছিলেন ৪৫০ জন ভিজিটর এবং ২২ হাজার ছবি দেখা হয়েছিল এ সময়ের মধ্যে। কয়েক দিনের মধ্যেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গ্রুপ এবং সার্ভারে ওয়েবসাইটটির নাম ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। কিন্তু কয়েক দিন পরই হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ ফেসম্যাশ বন্ধ করে দেয়। জাকারবার্গের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা লঙ্ঘন, কপিরাইট লঙ্ঘন এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের বেশ কিছু অভিযোগ আনা হয়। এরপরে ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ‘দ্য ফেসবুক’ নামের আরেকটি ওয়েবসাইট চালু করেন জাকারবার্গ। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজেদের মধ্যে পরিচিতি বাড়ানোর জন্য থাকা ডিরেক্টরির নামে এই ওয়েবসাইটটি চালু করা হয়। হার্ভার্ডের এ ডিরেক্টরিতে শিক্ষার্থীদের ছবি এবং বিস্তারিত তথ্য দেয়া থাকত। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সিনিয়র শিক্ষার্থী তাদের আইডিয়া চুরি করার অভিযোগ আনেন জাকারবার্গের বিরুদ্ধে। ওই তিন শিক্ষার্থী তাদের দাবি নিয়ে আদালত পর্যন্ত গেলে তাদের তিনজনকে দেয়া ফেসবুকের ১২ লাখ শেয়ার। ২০০৪ সালের মধ্যভাগে ফেসবুকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পান ন্যাপস্টার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং বিনিয়োগকারী সিন পার্কার। তিনি জাকারবার্গের পরামর্শদাতা হিসেবেও কাজ করতেন। ২০০৫ সালে ফেসবুক.কম ডোমেইনটি কেনার পর প্রতিষ্ঠানের নাম পাল্টে ‘দ্য ফেসবুক’ থেকে করা হয় ‘ফেসবুক’। দুই লাখ ডলারে সে সময় ডোমেইনটি কেনা হয়েছিল। আর বর্তমানে ফেসবুক বন্ধু এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। ফেসবুকের কার্যক্রম এখন উল্লেখযোগ্য হারে প্রসার লাভ করেছে। ছবি ও ভিডিও শেয়ারিং সুবিধার পাশাপাশি সাইটটিতে যুক্ত হয়েছে যুগোপযোগী নিত্যনতুন সব ফিচার। এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় নিজের নিরাপত্তা জানানোর মতো ফিচার যুক্ত হয়েছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে নিজের ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে জাকারবার্গ লিখেছেন, গত কয়েক বছরে আমি এমন কিছু ভুল করেছি, যা আপনারা কল্পনা করতে পারেন। আমার দ্বারা এ সময়ে কয়েক ডজন প্রযুক্তিগত ত্রুটি এবং খারাপ চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে। আমি ভুল মানুষকে বিশ্বাস করেছি এবং কিছু মেধাবীকে ভুল ভূমিকায় বসিয়েছি। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন্ড বা গ্রাহকপ্রবণতা ধরতে ভুল করেছি এবং অন্যের চেয়ে শ্লথ হয়ে গেছি। বেশ কিছু পণ্য উন্মোচন করেছি, কিন্তু তা গ্রাহক টানতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা ভুলগুলো এড়িয়ে যেতে চাই না, এ জন্য ফেসবুক কমিউনিটি টিকে আছে। আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্বের সব মানুষকে একটি প্লাটফর্মে আনার যে বৃহৎ চ্যালেঞ্জ নিয়েছি, তা বাস্তবায়নে আরো অনেক দূর যেতে হবে। এর মাঝে অনেক ভুল হবে এবং এসব ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগোতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com