শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন

শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে শেষ বলে পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু ভারতের

মুজিবুর রহমান বাবু, ই-কণ্ঠটোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে শেষ বলে জয় দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করল ভারত। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুরন্ত ইনিংস খেললেন বিরাট কোহলি। এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচে হারের মধুর প্রতিশোধ নিলেন রোহিতরা। দুর্দান্ত বোলিং, দুর্র্ধষ ব্যাটিং, টান টান উত্তেজনা- সবকিছু ছাপিয়ে স্নায়ুক্ষয়ী শেষ ওভারে গিয়ে একেবারে শেষ বলে পাকিস্তানকে হারালো ভারত। শেষ পর্যন্ত শেষ ওভারের নাটকীয়তায় ৪ উইকেটের দুর্দান্ত এক জয় পেলো ভারত।

৯০ হাজার ২৯৩ জন দর্শকের সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযানের শুরুটা দুর্দান্ত হল ভারতের। মেলবোর্নের ২২ গজে ব্যাটিং বিপর্যয় সামলেও বিরাট জয় পেলেন রোহিত শর্মাদের দল। নাটকীয় ম্যাচে পাকিস্তানের ৮ উইকেটে ১৫৯ রানের জবাবে ভারত করল ৬ উইকেটে ১৬০ রান। প্রায় একার হাতে শেষ বলে ভারতকে রুদ্ধশ্বাস জয় এনে দিলেন বিরাট কোহলি। ৫৩ বলে তাঁর অপরাজিত ৮২ রানের ইনিংসে ভর করে পাকিস্তানকে ৪ উইকেটে হারিয়ে দিল ভারত।

অস্ট্রেলিয়ার উইকেট, আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে ৬ অক্টোবর সে দেশে চলে গিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল। র্পাথ, ব্রিসবেন, মেলবোর্নে তিন দফায় চলেছে প্রস্তুতি। তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছে ভারতীয় দল। তবু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই শাহিন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহদের সামনে বিধ্বস্ত ভারতীয় ইনিংস। মেলবোর্নের মতো বড় মাঠে ১৬০ রানের লক্ষ্য সহজ নয়। গ্যালারি ভর্তি দর্শকের সামনে শুরুতে হয়তো সেই চাপই নিতে পারলেন না রোহিতরা। শুরুতেই আউট হলেন সহ-অধিনায়ক লোকেশ রাহুল (৪)। তাঁর পরেই সাজঘরে ফিরলেন রোহিতও (৪)। আগ্রাসী মেজাজে শুরু করেও বড় ইনিংস খেলতে পারলেন না সূর্যকুমার যাদবও। ১০ বলে ১৫ রান করে আউট হলেন সূর্যকুমার।

দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং অর্ডারে বদল করে ভারতীয় দল। পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো হয় অক্ষর পটেলকে। বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে নামিয়ে দ্রুত কিছু রান তুলে নিতে চেয়েছিলেন রোহিতরা। সেই পরিকল্পনাও কাজে এল না। বিরাট কোহলির ভুলে রানআউট হয়ে গেলেন অক্ষর (২)। সেই ক্ষতি অবশ্য পুষিয়ে দিলেন প্রাক্তন অধিনায়ক। ভক্তদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজের অন্যতম সেরা ইনিংস উপহার দিলেন তিনি (বিরাট)। ভারতীয় ইনিংসের শুরুতে জয়ের আশায় থাকা বাবর আজমদের হতাশায় ডুবিয়ে দিলেন। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের জয়ের পরিসংখ্যান আরও উন্নত করলেন।

ভারতীয় ইনিংসের প্রথম ছয় মারলেন হার্দিক পা-্য ১২তম ওভারে। শুরুতে কোহলি মূলত উইকেটের এক দিক আগলে রাখেন। রবিবার (২৩ অক্টোবর শুরুর দিকে ব্যাটে বলে ঠিক মতো হচ্ছিল না প্রাক্তন অধিনায়কের। পরের দিকে অবশ্য হাত খুলে পাক বোলারদের শাসন করতে শুরু করেন কোহলি। হার্দিকের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটের জুটিতে পাল্টা লড়াই পৌঁছে দিলেন পাক শিবিরে। তাঁদের জুটি উঠল ১১৩ রান। সেই জুটিই গড়ে দিল অনবদ্য জয়ের ভিত। হার্দিক ৩৭ বলে ৪০ রান করে আউট হলেও দেশকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন কোহলি। তাঁর ৮২ রানের ঝকঝকে ইনিংসে রয়েছে ছ’টি চার এবং চারটি ছক্কা। উইকেটের চার দিকে অনায়াস শট মারলেন কোহলি। পাকিস্তানের কোনও বোলারই তাঁর আগ্রাসন আটকাতে পারলেন না। হার্দিক মারলেন একটি চার এবং দু’টি ছয়।

পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে সফলতম হ্যারিস রউফ ৩৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিলেন। মহম্মদ নওয়াজ ২ উইকেট নিলেন ৪২ রান দিয়ে। ভাল বল করলেও উইকেট পেলেন না চোট সারিয়ে দীর্ঘ দিন পর মাঠে ফেরা শাহিন। ২৩ রানে ১ উইকেট নাসিমের।

টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন রোহিত। শুরুতেই বাবর (০) এবং মহম্মদ রিজওয়ানের (৪) উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানকে ধাক্কা দিলেন আরশদীপ সিংহ। জোড়া ধাক্কা খেয়ে চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। তিন নম্বরে নামা শান মাসুদ এবং চার নম্বরে নামা ইফতিকার আহমেদ পাক ইনিংসের হাল ধরেন। যে মিডল অর্ডার নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল, সেই মিডল অর্ডারই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ভরসা দিল বাবরের দলকে। দু’জনেই অর্ধশতরান করলেন। ইফতিকার ধীরে শুরু করেও পরে আগ্রাসী ব্যাটিং করলেন। তাঁর ৩৪ বলে ৫১ রানের ইনিংসে রয়েছে দু’টি চার এবং চারটি ছক্কা। উইকেটের এক দিক শেষ পর্যন্ত আগলে রাখলেন মাসুদ। শেষ পর্যন্ত পাঁচটি চারের সাহায্যে ৪২ বলে ৫২ রান করে অপরাজিত থাকলেন তিনি। পাকিস্তানের অন্য ব্যাটারারা সাফল্য না পেলেও মাসুদ এবং ইফতিকারের ইনিংসে ভর করেই মূলত পাকিস্তান ১৬০ রানের লক্ষ্য রাখে ভারতের সামনে। শেষ দিকে শাহিন খেললেন ৮ বলে ১৬ রানের ছোট ঝোড়ো ইনিংস। তিনিই পাক ইনিংসের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। আর কেউ দু’অঙ্কের রান করতে পারলেন না। শাহিনের পর সর্বোচ্চ মহম্মদ নওয়াজের ৯।

আরশদীপ ছাড়াও ভারতের হয়ে ভাল বল করলেন হার্দিক পা-্য, ভুবনেশ্বর কুমার, মহম্মদ শামিরা। আরশদীপ ৩২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিলেন। যদিও সেই ১৯তম ওভারে দিলেন ১৪ রান। ভারতের সফলতম বোলার অবশ্য হার্দিক। ৩০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিলেন তিনি। ভুবনেশ্বর ২২ রানে ১ উইকেট এবং শামি ২৫ রানে ১ উইকেট নিলেন। যদিও হতাশ করলেন অক্ষর পটেল। এক ওভার বল করে ২১ রান দিলেন বাঁহাতি স্পিনার। ইফতিকারের আগ্রাসনের সামনে লাইন-লেংথ হারিয়ে ফেললেন অক্ষর। তাঁকে পরে আর আক্রমণে আনার সাহসই পেলেন না অধিনায়ক রোহিত। অন্য স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন ৩ ওভার বল করে দিলেন ২৩ রান।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com