রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ১১:৫৪ অপরাহ্ন
জিন্নাতুল ইসলসম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি।। বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটেই রয়েছে ইসলামী ঐতিহ্যের এক বিরল নিদর্শন। সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস মৌজায় অবস্থিত ঐতিহাসিক ‘হারানো মসজিদ’, যা সম্প্রতি নতুন নামে পরিচিত হয়েছে ৬৯ হিজরী হারানো (সাহাবা) মসজিদ কমপ্লেক্স’ হিসেবে। প্রায় ১৪০০ বছর আগে নির্মিত এই মসজিদটি শুধু বাংলাদেশের নয়, সমগ্র এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন মসজিদ হিসেবেও স্বীকৃতি পাচ্ছে।
১৯৮৩-৮৪ সালে জঙ্গল পরিষ্কারের সময় প্রথম মসজিদের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়। পরে ১৯৮৬ সালের ১০ মহররম স্থানীয় নাগরিক আইয়ুব আলী একটি খোদাইকৃত ইট উদ্ধার করেন। ইটে লেখা ছিল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ, হিজরি সন ৬৯। এই শিলালিপিই প্রমাণ করে মসজিদটির বয়স প্রায় ১৩৫০ বছর। বর্তমানে ইটটি মসজিদের ভেতরে সংরক্ষিত ও প্রদর্শিত হচ্ছে।
মসজিদের স্থাপত্যে রয়েছে প্রাচীন আরবীয় নকশার ছাপ। মোটা খাঁজকাটা ইট, অলংকৃত মেহরাব, খিলান, দেয়াল ও চারটি স্তম্ভের ধ্বংসাবশেষ আজও দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। ইতিহাসবিদদের মতে, ইসলাম প্রচারের প্রাথমিক পর্যায়ে সাহাবায়ে কেরাম এ অঞ্চলে এসে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। ধারণা করা হয়, হজরত আবু ওয়াক্কাছ (রা.) চীনের পথে অবস্থানকালে এর ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। তৎকালীন ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা অববাহিকা ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যপথ, যা মসজিদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়।
পরে স্থানীয় মসজিদ পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে গড়ে ওঠে ‘আস-সাহাবা কমপ্লেক্স’, যা বর্তমানে পরিচিত ‘৬৯ হিজরী হারানো (সাহাবা) মসজিদ কমপ্লেক্স’ নামে। এখানে মসজিদের পাশাপাশি একটি কওমি মাদ্রাসা রয়েছে, যেখানে বর্তমানে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক রিয়াজুল ইসলাম রাজু জানান, ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে আল-জাজিরাসহ দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে এ মসজিদের খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ নামাজ আদায় ও ভ্রমণের জন্য এখানে আসতেন।
ইতিহাস ও আধ্যাত্মিকতা অনুভবের প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর জেলা সংবাদদাতা মো. বিপুল ইসলাম বলেন, এই মসজিদ দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। তাই মসজিদের পরিবেশ এমনভাবে উপস্থাপন করা প্রয়োজন, যাতে প্রবেশ করলেই দর্শনার্থীরা ইতিহাস ও আধ্যাত্মিকতা অনুভব করতে পারেন।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন বলেন, দর্শনার্থীরা প্রতিদিন আসেন। তবে সরকারি উদ্যোগে মসজিদের পরিবেশ উন্নত করা হলে দর্শনার্থীরা ইতিহাস ও আধ্যাত্মিকতা আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন।
মসজিদের মোয়াজ্জিন সোলাইমান আলী জানান, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা আরও শক্তিশালী হলে এর যথাযথ মূল্যায়ন হবে।” পেশ ইমাম তাওহীদুল ইসলাম বলেন, “এখানে সংরক্ষিত প্রাচীন ইট ও স্থাপত্য উপাদান এ অঞ্চলের ইসলামী ঐতিহ্যের অমূল্য সাক্ষ্য বহন করছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এইচ. এম. রকিব হায়দার বলেন, প্রাচীন ‘হারানো মসজিদ’ ইসলামী ঐতিহ্যের এক অমূল্য নিদর্শন। সম্প্রতি এর নাম পরিবর্তন করে ‘৬৯ হিজরী হারানো (সাহাবা) মসজিদ কমপ্লেক্স’ রাখা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর স্থাপত্য ও পরিবেশ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।