রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৩৯ অপরাহ্ন

রিমান্ডে নারী আসামিকে যৌন হয়রানির অভিযোগ 

বরিশাল প্রতিনিধিঃ বরিশালের উজিরপুর উপজেলার আলোচিত বাসুদেব হত্যা মামলার আসামিকে এক নারী আসামিকে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। রিমান্ড শেষে আসামিকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারকের কাছে এই অভিযোগ করেন ওই আসামি। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের নামে তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মাইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন ওই নারী।

এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন বরিশালের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহফুজুর রহমান। একই সঙ্গে আসামির সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করানোর নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া বরিশালের পুলিশ সুপারকে মামলা তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেঞ্চ সহকারী নাহিদা খানম।

তিনি শনিবার (৩ জুলাই) রাতে জানান, আদালত হেফজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ এর ৪ (১) (খ) ধারা মোতাবেক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নির্যাতনের চিহ্ন এবং নির্যাতনের সম্ভাব্য সময় উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিতে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে নির্দেশ দেন। আদেশ পেয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শনিবার আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন শেবাচিমের পরিচালক এসএম সাইফুল ইসলাম।

এদিকে দাখিল করা প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্তব্য করতে রাজি হননি পরিচালক। তিনি জানান, আদালতের তদন্তাধীন বিষয়ে বাইরে বলাটা আইন সঙ্গত নয়। আমরা যা পেয়েছি তা আদালতকে জানিয়েছি।

জানা গেছে, উজিরপুর উপজেলার হারতা গ্রামের মৃত নারায়ন চক্রবর্তীর ছেলে বাসুদেব চক্রবর্তীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সর্ম্পক ছিল পাশের জামবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ৩০ বছর বয়সী এক নারীর। ২৫ জুন (শুক্রবার) দুপুরে মোবাইলের কলের সূত্র ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান বাসুদেব চক্রবর্তী। সন্ধ্যায় আর বাড়ি ফেরেননি। রাত ৩টার দিকে স্থানীয় চৌকিদার গৌতম বল্লভ বাসুদেব চক্রবর্তীর ভাই বরুন চক্রবর্তীকে মোবাইলে জানান, ওই নারীর বাড়ির উত্তর পাশে বাসুদেব চক্রবর্তীর মরদেহ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় ২৭ জুন উজিরপুর থানায় ওই নারীর নাম উল্লেখ করে মামলা করেন বরুন বিশ্বাস। অভিযোগ আনা হয় পরকীয়া প্রেমের সূত্রে বাসুদেব চক্রবর্তীর কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত না দিতে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর বাড়ির পাশে ফেলে রাখা হয়। মামলার সূত্র ধরে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তকে।

তবে অভিযুক্ত নারী আদালতকে জানিয়েছেন, মামলার আগেই ২৬ জুন তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে আদালতে ২৮ জুন গ্রেফতার দেখায় থানা পুলিশ। এই দুদিন তাকে থানায় আটকে রাখা হয়েছিল। মামলা গ্রহণের পর থানায় এক নারী পুলিশ সদস্য লাঠি দিয়ে বেদম মারধর করেন তাকে। পরে উপস্থিত অন্য পুলিশ সদস্যরাও তাকে মারধর করেন। আদালতে আবেদনের মাধ্যমে ২৯ জুন দুই দিনের রিমান্ডে নেয় তদন্তকারী পুলিশ পরিদর্শক মইনুল ইসলাম। ওইদিন তাকে থানায় নিয়ে রাখা হলেও মারধর করা হয়নি। ৩০ জুন সকালে তাকে তদন্ত কর্মকর্তা কক্ষে নিয়ে শরীরের স্পর্শকাতর বিভিন্ন স্থানে হাত দিয়ে যৌন হয়রানি করেন। কিছুক্ষণ পরে এক নারী পুলিশ সদস্যকে ডেকে এনে আবার তাকে পেটাতে থাকেন। নারী পুলিশ সদস্যের মারধর মনমতো না হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা নিজে উঠে ১৫/২০ মিনিট মারধর করেন। এতে জ্ঞান হারান তিনি।

ওই নারী আদালতকে আরও জানান, মারধরের সময়ে তদন্ত কর্মকর্তা বারবার বলেন, তার শেখানো কথা আদালতে বললে হত্যা মামলা থেকে (অভিযুক্ত নারী আসামি) মুক্তি পাবে। এমনকি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর স্বীকারোক্তি দিতে বলেন। অন্যদিকে নির্যাতনে জ্ঞান হারালে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করায় পুলিশ। হাসপাতাল থেকে পুনরায় থানায় আনা হলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে নেওয়া হয়। সেখানে আসামিকে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করতে বলা হয়। কিন্তু তিনি তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। তারপরও অনেক বুঝিয়ে দোষ স্বীকার করতে বলেন তদন্ত কর্মকর্তা। কিন্তু আদালতে হাজির করা হলে বিচারকের কাছে রিমান্ডে যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন আসামি।

যদিও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মাইনুল ইসলাম দাবি করেছেন, মামলা থেকে রক্ষা পেতে আসামি পরিকল্পিতভাবে অভিযোগ করেছেন। তিনি কোনো নির্যাতন করেননি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com