শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:১৭ অপরাহ্ন
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:: মা শব্দটিতে যেন এক গভীর মায়ামমতা আর ভালোবাসা জড়িয়ে আছে। মা আমাদের সকলের প্রিয় শব্দ। সন্তান ভূমিষ্ঠ দেওয়া থেকে শুরু করে তাকে বড় করে তোলা পর্যন্ত মা অক্লান্ত পরিশ্রম করে। মূলত মাকে সম্মান ও ভালোবাসার জন্য সন্তানরা ছুটে হৃদয়ের অনুভূতি দিয়ে। রবিবার দুপুরে এক অসহায় মায়ের খবর পেয়ে এক অসহনীয় দৃশ্য চোখে পডলো। ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল পৌরশহরে বাঁশবাড়ি গ্রামের একটি (ভাড়া বিহীন) প্রায় পরিত্যাক্ত বাড়িটি দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা একজন অসুস্থ্য বৃদ্ধা মা ও ছেলের বসবাস। পৃথিবীর বুকে এখনো বেঁচে থাকা প্রায় ১১১ বছর বয়সেও এ বৃদ্ধার কপালে জোটেনি নিজস্ব একটুকরো ঘর। নেই তার নির্দিষ্ট ঠিকানা। শতবর্ষী এ বৃদ্ধার নাম শরীফা খাতুন। মসলিম উদ্দিন মিঞাজির ঘরে জন্ম নিয়ে ঘর বেঁধেছিলেন স্বামী মমতাজ উদ্দিনের সাথে। সংসারে অভাব অনটনের মাঝেও বেশ সময় কেটে যাচ্ছিল। হঠাৎ স্বামী মারা যাওয়ার পর শুরু হয় শরীফা খাতুনের কষ্ট আর বেঁচে থাকার যুদ্ধ।
বিরবির করে শরীফা খাতুন নিজেই বলেন, আমার ৬ মেয়ে আর ৪ ছেলে। বাকি সন্তানরা তাকে (শরীফা খাতুন) কে দেখে না এমন অভিযোগ করেন তিনি। বর্তমানে একমাত্র আব্দুল শহীদ নামের মেঝো ছেলেই বৃদ্ধা মাকে দেখাশুনা করেন। আব্দুল শহীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তার মায়ের অন্য সন্তানরা খোঁজ খবর তেমন রাখেন না। শহীদও এখন বয়সের ভারে বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছেন। অসুখ তাকেও ছাড়ছে না। অভাবের সংসারে অসুস্থ্য স্ত্রী ও মাকে ঔষধ কিনে দিতে অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পান তাতে নুন ভাত খেয়ে কোন মত দিন চালিয়ে নেন তিনি। এমন কষ্টের কথা বলতে বলতে চোখে পানি চলে আসে আব্দুল শহীদের।
তিনি আরো জানান, মা তার নিজ হাতে ভাত খেতে পারে না। রাতে কাজ সেরে এসে মাকে খাইয়ে দেন শহীদ এমনকি গোসল করিয়ে দেন নিজ হাতে। এখন পরিত্যক্ত যে বাসায় দেখাশুনার দায়িত্বে আছেন তার প্রিয় মমতাময়ী মাকে নিয়ে সে বাড়িটিও বিক্রি হয়েছে জানতে পারেন শহীদ। এর পর বৃদ্ধা মাকে নিয়ে কোথায় যাবেন তিনি নিজেও জানেন না। কোথায় ঠায় হবে স্ত্রী, সন্তান আর বৃদ্ধা মাকে নিয়ে মেঝো ছেলে শহীদের। এ বৃদ্ধা মাকে ফেলে অন্যান্য সন্তানরা বিমূখ অথচ সন্তানের জন্য সব থেকে বেশি যে আত্মত্যাগ করতে পারে সেই নামটিই হলো মা। বিশেষ করে কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই সে মাকে। পৃথিবীর সব মায়েরা যেন সুখী থাকেন, সন্তান হিসেবে এই যেন হয় আমাদের সবার দায়িত্ববোধ।