বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:৪৭ অপরাহ্ন
অনলাইন প্রতিবেদক:: গাজীপুর সিটি মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগের আবেদন করেছেন ওই পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত মো. জাহাঙ্গীর আলম। তার পদত্যাগের আবেদনটি যাচাইবাছাই করে পরবর্তী প্রক্রিয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লড়তে মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে তার ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলাপে ঢাকা টাইমস জানতে পেরেছে।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আগের দফায় বরখাস্ত এ মেয়র। একই পদে প্রার্থী হিসেবে মা জায়েদা খাতুনকেও দাঁড় করিয়েছেন।
জাহাঙ্গীর আলমের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করবেন। তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি তার জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিতে চান। দল ছাড়াও যে তার জনপ্রিয়তা আছে সেটার প্রমাণও তিনি দেখাতে চান।’
গাজীপুরের মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী যা করা দরকার আমরা তাই করছি।’
বরখাস্ত হওয়ার আগে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের দুর্নীতি তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘তার দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করা হয়েছে। এসব বিষয়ে কাগজপত্র দেখে বলতে হবে। তবে তদন্ত স্বাপেক্ষে আইনগত যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা নেওয়া হবে।’
রাজধানী ঢাকার লাগোয়া মহানগরী গাজীপুর সিটির ভোট নানা কারণে এখন রাজনৈতিক আলোচনার ইস্যু। এই নির্বাচনে মেয়র পদে দলের মনোননপ্রত্যাশী ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম।
তবে গত ১৫ এপ্রিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খানকে মনোনয়ন দেয়।
দলীয় মনোনয় বঞ্চিত জাহাঙ্গীর সেদিনই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গাজীপুরের মানুষ চাইলে তিনি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন জানান। এরপর জাহাঙ্গীর তার সিদ্ধান্তে অটল থেকে দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে গত বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেন।
ওইদিন জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি নৌকার বিপক্ষে মনোয়নপত্র জমা দেইনি। বিশেষ কোনো ব্যক্তির বিরদ্ধে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। আমি হয়তো যেকোনো মুহুর্তে গুম হয়ে যেতে পারি। আমি নিরাপদ বোধ করছি না, আপনাদের মাঝে আর নাও থাকতে পারি।’
এদিকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া এবং তার এমন বক্তব্যে বিব্রত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। জাহাঙ্গীরকে দলীয় ক্ষমা করা ভুল হয়েছে কি না সেই প্রশ্নও উঠে এসেছে।
জাহাঙ্গীর ইস্যুতে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারনী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপে ঢাকা টাইমস জানতে পেরেছে, জাহাঙ্গীরের এমন কর্মকাণ্ডে বিএনপির সঙ্গে তার কোনো যোগসাজশ আছে কি-না সেটাও এখন ভাবার বিষয়। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করে আওয়ামী লীগকে বিব্রতকর ও বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করলে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও আভাস দেন তারা।
গাজীপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, ৫৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৩ জন। আগামী ২৫ মে ইভিএমে ভোটের মাধ্যমে গাজীপুর সিটির বাসিন্দারা আগামী দিনের মেয়র বাছাই করে নেবেন।
প্রসঙ্গত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি ও মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দলের সদস্যপদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা ও দলে ফিরতে কেন্দ্রে আবেদন করেছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। এরপর বহিষ্কার হওয়া নেতাদের মধ্যে যারা যারা আবেদন করেছেন সবাইকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর গত ১ জানুয়ারি ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা করার কথা গণমাধ্যমে খবর হয়ে আসে।