রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:৫১ পূর্বাহ্ন
বরিশাল প্রতিনিধিঃ আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় নির্মাণাধীন ঘর ভেঙে পড়ার কারণ অনুসন্ধান, প্রকৃত ভূমিহীন ও জমিহীনদের মধ্যে বণ্টন হয়েছে কি না যাচাই এবং ক্ষতিগ্রস্ত ঘর মেরামত করতে পৃথক চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল।
শনিবার (১০ জুলাই) দুপুরে বরিশাল সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিয়কালে এ কথা জানান তিনি।বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। এখানে কোনো অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখতে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার (৬ জুলাই) অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে একটি এবং জেলা প্রশাসন থেকে আলাদা আলাদা তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, স্থানীয় সরকার অধিদফতরের উপ-পরিচালক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে। আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটিগুলো তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ঘর ভেঙে পড়ার পেছনে যদি কোনো অনিয়ম থেকে থাকে তাহলে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, বিভাগের মধ্যে মেহেন্দীগঞ্জে ১৪টি ঘর এবং দৌলতখানে ১২টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সাইফুল হাসান বাদল বলেন, বিভাগে প্রথম পর্যায়ে ৬ হাজার ৮৮টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪ হাজার ৪শ ৫৭টি ঘর এবং জমি দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। এছাড়া আরও ২ হাজার ৬শ ৯০টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে। ঘরগুলো নির্মাণে কোনো ত্রুটি হয়েছে কি না এবং ত্রুটি হয়ে থাকলে কে বা কারা দায়িত্বে অবহেলা করেছে সেগুলো অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, প্রথম পর্যায়ে এক লাখ ৭১ হাজার এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে এক লাখ ৯০ হাজার টাকায় দুই কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা ঘর নির্মাণ সম্ভব নয় বরিশালে। তাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আরও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার টাকা আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই। আর সেটা আমি বিশ্বাসও করি না। মুজিববর্ষের ঘর নিয়ে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হতে দেওয়া যাবে না। বর্তমান সরকারের এত বড় একটি অর্জন কোনোভাবেই ধ্বংস হতে দেওয়া চলবে না।
তিনি বলেন, মেহেন্দীগঞ্জ এবং চরমোনাই ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ইয়াস এবং পরবর্তী অতিবৃষ্টির কারণে কয়েকটি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। জেলা প্রশাসক বলেন, যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, সেহেতু বিষয়টি আমরা খাটো করে দেখছি না।
মেহেন্দীগঞ্জে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে স্থানীয় ইউপি সদস্যর রান্না ঘর তৈরির বিষয়টি উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেখানে রাজনৈতিক কারণে অনেক কিছু করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় ইউএনওকে বিভিন্ন দিকের চাপ সামাল দিয়ে কাজ করতে হয়েছে। তবে ইউপি সদস্যের রান্না ঘরের অভিযোগটিও তদন্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাই সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চান তিনি।
সভায় সাংবাদিকরা বলেন, ঘর নির্মাণে দায়িত্বরত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকৌশলী সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। তাই সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া এসব ঘর নির্মাণ স্থান যাচাই-বাছাই, বরাদ্দ করা টাকা বাড়ানোসহ প্রকৃত উপকারভোগীরা যেন ঘর পেতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা উচিত।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাজিব আহমেদ, বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল প্রমুখ।