রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৫৫ অপরাহ্ন

মাদারীপুরে ম্যানেজিং কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে দুই গ্রুপের দ্বন্ধ

মাদারীপুর প্রতিনিধি:
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার চলবল উচ্চ বিদ্যালয়টি ম্যানেজিং কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে দুই গ্রুপের দ্বন্ধে শিক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্কুলটির প্রধান শিক্ষকের সীমাহীন দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিতে বিদ্যালটির একদিকে যেমন প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অপরদিকে গত ৩ এপ্রিল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনী দ্বন্ধের রোষানলে লিটল হালদার নামে এক শিক্ষক পড়েছেন রোশানলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে কালকিনি উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষে চলবল উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে পাশ্ববর্তী গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিদ্যালয়টি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। কিন্তু গত বছরে বিদ্যালয়টিতে ১৭ বছর ধরে বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত হয়ে আসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ বাড়ৈ মারা যাওয়ার পর থেকেই নতুন সভাপতি নির্বাচন নিয়ে গ্রামের দুই গ্রুপ দ্বন্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে। গত ৩ এপ্রিল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে পরাজিতরা বিভিন্ন ষড়ষন্ত্রে লিপ্ত হয়। অভিবাবকদরে দাবী সেই ষড়যন্ত্রেও অংশ হিসেবে দুই দিন আগে স্কুলটির শিক্ষক লিটন হালদার ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা পড়া না পারলে, ৯ জন শিক্ষার্থীকে দুটি করে লাঠির বারি দিয়ে পড়া না পাড়ার জন্য শাসন করে। একাধিক অভিবাবক বলেন, স্কুলে ম্যানেজিং কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে দুই গ্রুপের দ্বন্ধে শিক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই দ্বন্দ্ব নিরসন না হলে স্কুলটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ব্যহত হবে শিক্ষা কার্যক্রম।
স্কুলটির সেদিনে পড়া না পারা ছাত্র বিদ্যুৎ মল্লিক, আকাশ বাড়ৈ ও মিঠুন মল্লিসহ অন্যান্য ছাত্ররা বলেন, আমরা পড়া না পারলে স্যার আমাদের সবাইকে (৯ জন) কে দুটি করে বারি দেয়। পরে স্কুল শেষে আমরা মাঠে ৮ ওভার করে ম্যাচ আয়োজন করে তিন বার ম্যাচ খেলেছি। শেষ ম্যাচ খেলার সময়ে মিলন শিকদারের বাবা তাকে খবর দিয়ে নিয়ে যায়। পরে আমরা শুনেছি, মিলনকে স্যারে মারার কারণে কালকিনিতে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। কিন্তু আমাদের কিছুই হয়নি। আমরা কেউ হাসপাতালে ভর্তি হই নি। আমরা আজো সবাই স্কুলে এসেছি।
এদিকে ছেলেকে শিক্ষক মেরে আহত করেছে এমন অভিযোগ নিয়ে শিক্ষার্থী মিলনের বাবা ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী কৃষ্ণ শিকদার বাদী হয়ে ডাসার থানায় একটি মামলা দায়ের করে। নিজের পরাজয়ের কষ্ট লাঘব করার জন্য পরাজিত প্রার্থীরা মিলে স্কুলে অশান্তি তৈরীর নীলনকশা করছে বলে অভিযোগ করেছেন স্কুলটির নির্বাচিত ম্যানেজিং কমিটির সদস্য দুলাল বাড়ৈ। তিনি আরো বলেন, কৃষ্ণ শিকদার পরাজয় মেনে নিতে না পেরে তার ছেলেকে শিক্ষক লিটন হালদার শাসন করেছে; সেই অযুহাতে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। আসলে শিক্ষকক লিটন হালাদার ওই শিক্ষার্থীসহ ৮/৯ জনকে দুটি করে লাঠির বারি দিয়েছে। তাতে ওই ছেলে ছাড়া আর কারো কোন কিছুই হয়নি। তারা দিব্যি ক্লাস করছে। এটি আসলে শিক্ষক লিটনকে হয়রানি করার জন্য ও স্কুলটি ধ্বংস করার জন্য একটি গ্রুপ পেছনে লেগেছে। শুধু তাই নয়, এই স্কুলটির প্রধান শিক্ষক বছরের পর বছর নানা আর্থিক অনিয়মসহ তার স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজন প্রীতিতে স্কুলটি এখন ধ্বংসের দাড়প্রান্তে দাড়িয়ে আছে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, চলবল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারায়ন চন্দ্র সরকার ১৯৮৫ সাল থেকে এই বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। তিনি স্কুলটিতে নানা ধরনের আর্থিক অনিয়ম করে আসছেন। প্রতি বছর ফরম ফিলাপ বাবদ ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা আদায়, রেজিষ্ট্রেশন বাবাদ ১৩৩ টাকার পরিবর্তে ৫’শ টাকা আদায়, শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ, কর্মচারীরা ছুটি না নিয়ে ভারতে যাতায়াত করলেও সে অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয়াসহ নানা ধরনের অনিয়ম করে আসছেন।
এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক নারায়ন সরকার বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেশি টাকা কখনো নেই না। আর কোন অনিয়মের সাথে আমি জড়িত নই।
কালকিনি ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমথ রঞ্জন ঘটক বলেন, ঘটনাগুলো আমার নজরে এসেছে। আমি ইতোমধ্যে কালকিনি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলেছি বিষয়টি দেখার জন্য। স্কুলটিতে যাতে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়, সেই জন্য আমরা কাজ করবো। অহেতুক কোন শিক্ষককে কেউ যাতে হয়রানি না করতে পারতে, সেজন্যও আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com