বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন

ভারত থেকে প্রচন্ড গতিতে পানি আসছে, তিস্তা পাড়ে রেড এ্যালার্ট জারি

লালমনিরহাট প্রতিনিধি::

দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় রেড এলার্ট জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তীরবর্তী লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে ২৪ ঘন্টা মাইকিং করা হচ্ছে।

নদীর পানি সোমবার সকালে বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানির তীব্র স্রোতে মানুষের বাড়িঘর-আসবাবপত্র ও গবাদিপশু ভেসে যাচ্ছে।

ভারত থেকে প্রচণ্ড গতিতে পানি আসায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আরো কি পরিমাণ পানি আসবে এমন কোনো তথ্য নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে। তিস্তা নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করতে হাতীবান্ধায় অবস্থিত দেশের বৃহতম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের সব গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। এতে তিস্তা তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দীসহ তিস্তা নদীর পানি হাতীবান্ধা শহরে প্রবেশ করছে। ফলে তিস্তা পাড়ের লোকজনদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।

এ দিকে হাতীবান্ধা মেডিকেল-গড্ডিমারী-বড়খাতা বাইপাস সড়ক ও ভেরসি বাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ওই সড়ক বা বাঁধ ভেঙে গেলে তিস্তা নদীর পানি হাতীবান্ধা শহরে প্রবেশ করবে।

জানা গেছে, গত শুক্রবার দুপুর থেকে তিস্তা নদীর পানি তিস্তা ব্যারাজ দোয়ানী পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। ওই দিন রাত ১২ টায় তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এতে হাতীবান্ধা মেডিকেল মোড় থেকে গড্ডিমারী মেডিকেল মোড় হয়ে বড়খাতা বিডিআর গেট বাইপাস সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে শুরু করে। শনিবার সকালে সেই পানি কমে বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করলে ওই দিন রাতে আবার বেড়ে যায় পানির গতি। রোববার দুপুরের পর থেকে দোয়ানী পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পেতে থাকে। সোমবার সকালে দোয়ানী পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে।

তিস্তার পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকার রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। চৌকি ও খাটের উপর মাচাং বানিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন পানিবন্দী পরিবারের মানুষগুলো। কেউ কেউ ঘর-বাড়ি ছেড়ে উঁচু বাঁধ বা পার্শ্ববর্তী গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। খুব কষ্টে পড়েছেন বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও শিশুরা। গবাদি পশু-পাখি নিয়েও চরম বিপাকে পানিবন্দী পরিবারগুলো। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে বন্যাদুর্গত এলাকায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)র ডালিয়া শাখার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, এ বারের বন্যা একটু স্থায়ী হতে পারে। ফলে কয়েকদিন তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হবে। তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। ব্যারাজের ফ্লাড ফিউজ এলাকার উজান ও ভাটি এলাকায় বসবাসকৃত পরিবার ও তিস্তা পাড়ের সব মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।

লালমনিরহাটের ডিসি আবু জাফর বলেন, ইউএনও ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে। এরইমধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com