মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২২ অপরাহ্ন

ব্যর্থ প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোকে নিয়ে খেলোয়াড়দের অনেক অভিযোগ ॥ মাশরাফি

ব্যর্থ ডোমিঙ্গোকে নিয়ে খেলোয়াড়দের অনেক অভিযোগ ॥ মাশরাফি গণমাধ্যমের সঙ্গে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে কথা বলছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা

স্পোর্টস রিপোর্টার, ই-কণ্ঠ টোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ মাশরাফি বিন মর্তুজা ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে আগামীকাল লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে মাঠে নামতে পারেন। গত আসরে ছিলেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবে। এই দলটির বিপক্ষে খেলা দিয়েই এবার ঢাকা লিগে মাঠে নামা শুরু হচ্ছে মাশরাফির। এরআগে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে আসেন। বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো যে এখন পর্যন্ত ব্যর্থ তা জানান। সঙ্গে বোমা ফাটান, ডোমিঙ্গোকে নিয়ে খেলোয়াড়দেরও নাকি অনেক অভিযোগ আছে। তাতে প্রশ্নও উঠে গেছে, তাহলে বিসিবি এরপরও কেন ডোমিঙ্গোকে রাখছে?

মাশরাফি বিন মর্তুজা ভারতে চিকিৎসা নিয়ে এসেছেন। অস্ত্রোপচার লাগবে। তাতে করে আবার ৯ মাস মাঠের বাইরে থাকতে হতে পারে। এখন আর কিছু প্রমান করার জন্য খেলবেন না। খেলা নিয়ে বিশেষ কোন লক্ষ্যও নেই। যারা ১০-১৫ বছর খেলছে, তাদের আসলে কোন লক্ষ্য নেই। কেউ রুটি-রুজির জন্য খেলে। কেউ ভালো লাগার জন্য খেলে। আবার কারো কাছে খেলাটাই আনন্দ। মাশরাফির কাছে কাছে আনন্দ। কতদিন খেলকেন, সেটা জানেন না। তবে যতদিন আনন্দ লাগবে খেলবেন। মানিয়ে নিয়ে যতটা খেলা যায়। সেই খেলার শুরুটা আগামীকাল হবে।

‘ব্যর্থতার পাল্লা ডোমিঙ্গোর ঘাড়ে বেশি’

এরআগে ডোমিঙ্গোকে নিয়ে বলতে গিয়ে গণমাধ্যমে মাশরাফি জানান, ‘দল যখন সফল হবে, তখন অবশ্যই তার (ডোমিঙ্গোর) কৃতিত্ব। এটা খুবই স্বাভাবিক। আমি ওর সঙ্গে খুব বেশি কাজ করিনি। তাই কথা বলার সুযোগ কম। তবে যত ম্যাচ আমরা হেরেছি, সেই দায়িত্বও তাকে নিতে হবে। আমরা অনেক ম্যাচ এখানে হেরেছি, যেগুলো আমাদের হারার কথা ছিল না। এখন নিউজিল্যান্ডে জেতা জিতেছি, সেটা হয়ত আমাদের জেতার কথা ছিল না। এরকমও আছে। ব্যক্তিগতভাবে যদি আমাকে বলেন, আমি মনে করি যে, ব্যর্থতার পাল্লা ডোমিঙ্গোর ঘাড়ে বেশি।’ আড়াই বছর হয়ে গেছে ডোমিঙ্গো বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচ। ২০১৯ সালের ২১ আগস্ট দায়িত্ব নিয়েছেন। সেই থেকে বাংলাদেশ দল সব ফরমেট মিলিয়ে ৭২টি ম্যাচ খেলেছে। ডোমিঙ্গোর শুরুটাই হয় আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার টেস্ট খেলতে নেমেই হার দিয়ে। এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি২০তেও হার হয়।

বড় দলগুলোর মধ্যে ভারতের বিপক্ষে দিল্লিতে টি-২০ জয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজ জয়, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট জয় এবং সবশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয় আছে। আর জি¤॥^াবুয়ের বিপক্ষে জয় তো আছেই। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট হারার লজ্জ্বার সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ঘরের মাটিতে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়া, জি¤॥^াবুয়ের কাছে টি-২০ হারা, টি-২০ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের কাছে হারের পর সুপার-১২ এ টানা পাঁচ ম্যাচ হারা, ২০২১ সালে টানা ১০ ম্যাচ হারা এবং আফগানিস্তানের কাছে টি-২০ হারা আছে।

বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো

‘টেস্ট ম্যাচ আমরা হোমে যেসব দলের কাছে হেরেছি, সবশেষ বিশ্বকাপ, তারপরে আফগানিস্তানের সঙ্গে টেস্ট ম্যাচ হার, অনেক কিছুই আছে, ওর খারাপের দিক বেশি’ মাশরাফি বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয়। আমি আগেও বলেছিলাম। আবারও বলছি। বাংলাদেশ দল এখন ওই সময়ে নেই, পরীক্ষা করা। এখন বাংলাদেশের যারা দর্শক আছে, তারা রেজাল্ট চায়। আপনারাও রেজাল্ট চান। ক্রিকেট বোর্ড রেজাল্ট চায়। সেক্ষেত্রে কোন নতুন কোচ এসে পরীক্ষা করার জায়গা এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটে নাই। বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন পারফরম্যান্স দেওয়ার সময়। ওয়ানডে ক্রিকেটে শেষ ৬-৭ বছর ধরে কিন্তু ভালো পারফরম করে আসছে। অন্যান্য ফরমেটে কিন্তু একই অবস্থা (খারাপ অবস্থা)। টেস্ট ম্যাচ আমরা হোমে যেসব দলের কাছে হেরেছি, সবশেষ বিশ্বকাপ, তারপরে আফগানিস্তানের সঙ্গে টেস্ট ম্যাচ হার, অনেক কিছুই আছে। আমি মনে করি, ওর খারাপের দিক বেশি। দেখা যাক, এখন যদি দক্ষিণ আফ্রিকায় খুব এক্সট্রা অর্ডিনারি কিছু করে আসে, কারণ, ওর সংস্কৃতি, ওর পরিবেশ, ও উইকেট নিয়ে জানে, এখানে আশা করছি ও একটা বড় ভুমিকা পালন করবে। সেটা যদি করতে পারে খুবই ভালো হবে।’

‘ভালো কোচ তখনই, যখন একটা খেলোয়াড়কে অফ ফর্ম থেকে আবার ভালো জায়গায় নিয়ে আসবেন, ছুড়ে ফেলা হচ্ছে’

কেন ডোমিঙ্গো ভালো কোচ নন, তার উদাহরণও টানেন মাশরাফি, ‘২০১৫ সালের পর থেকেই আসলে পরিবর্তন আসা শুরু হলো। সেই সময় সৌম্য, লিটন আসল। মুস্তাফিজ আসল। তাসকিন তার কিছু আগে আসছে। এদেরকেই কিন্তু আমরা সুযোগ দিয়ে সেটেল করেছি। একটা খেলোয়াড় যখন ভালো নৈপুন্য দেখায়, সৌম্য ১৫০ করেছে নিউজিল্যান্ডে। সৌম্য দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ৮২, ৫০; পাকিস্তানের সঙ্গে রান করেছে। সামর্থ্য আছে। এখন আমাদের যে সমস্যা, পৃথিবীর এমন কোন দেশ নাই যে ব্যাটসম্যানরা অফ ফর্মে যায় না। বা বোলাররা অফ ফর্মে যায় না। কিন্তু ছুড়ে ফেলার যে প্রবণতা, তাকে যে ফর্মে আনা, একটা কোচের, আপনি ভালো কোচ তখনই, যখন একটা খেলোয়াড়কে অফ ফর্ম থেকে যখন আপনি তাকে আবার ভালো জায়গায় নিয়ে আসবেন। আমাদের তো ছুড়ে ফেলা হচ্ছে। একটা সেটেল খেলোয়াড়কে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে। এরকম করে আবার নতুন আনা হচ্ছে। নতুনরা অবশ্যই আসবে। তবে আমাদের দেখতে হবে। একের পর এক সিরিজে নতুনদের আসা। আবার একে ভালো লাগছেনা। এতে হবে কি, সামনে দুই দুইটা বড় বিশ্বকাপ আসছে, যদি আপনি আন সেটেলে খেলোয়াড় নিয়ে যান, বা মানসিকভাবে আন সেটেল কোন খেলোয়াড় যায় ওখানে, অনেক কঠিন হয়ে যাবে।’

‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের অনেক অভিযোগ তাকে নিয়ে আছে’

সঙ্গে যোগ করেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের অনেক অভিযোগ তাকে নিয়ে আছে। প্রথম হচ্ছে, ড্রেসিং রুম সুখী থাকা। সেটা যদি থেকে থাকে, তাহলে সুন্দর। আমার কাছে মনে হয়নি সেটা। তাই আমি খোলামেলা বলেছি। রাসেল ডোমিঙ্গোর পাল্লা ভারি নয়। যেটা স্টিভ রোডস চলে যাওয়ার পরও ছিল। বিসিবি যদি এখন তাকে নিয়ে সুখী থাকে, এটা বিসিবির ব্যাপার।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com