বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ১০:২১ অপরাহ্ন

বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সতর্ক বিএনপি

বিশেষ প্রতিবেদক: বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্য যাতে ভেস্তে না যায় সেদিকে সর্তক দৃষ্টি রাখছে বিএনপি। এ জন্য দলের তৃণমূলের দৃষ্টিভঙ্গি আমলে নেয়া হচ্ছে। ২০ দলীয় জোটের মধ্যে যাতে ভাঙন তৈরি না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। বৃহত্তর ঐক্যের নেতৃত্ব নিয়ে দরকষাকষি না করার মানসিকতায়ও স্থির আছে। যৌথ নেতৃত্বও আপত্তি না করার পাশাপাশি আলোচনার ভিত্তিতে বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়াকে একটি কাঠামোগত রূপ দিয়ে এবং সবোর্চ্চ সংখ্যক আসনে ছাড় দিয়ে সবাইকে নিবার্চন করার পথ তৈরি করে দিতে চায় বিএনপি। বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায, বৃহত্তর ঐক্যর সমাবেশের পর থেকে বিএনপিতে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। ঐক্য সমাবেশের পর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়ায় তারা উৎফুল্ল। কারণ, এই প্রক্রিয়ায় তাদের ভাবনায় ফেলা সম্ভব হয়েছে। এ জন্য বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্যে পেঁৗছাতে সতকর্ভাবে পথচালার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিবার্চনী মোচার্য় রূপ নিতে পারে। তখন বিভিন্ন দলের দাবি-দাওয়া পযাের্লাচনা করে ঐক্যবদ্ধ নিবার্চনের প্রস্তুতি নেয়া হবে। জানা গেছে, বিএনপি বৃহত্তর ঐক্যের পথে ২০ দলীয় জোটকেও আস্থায় রাখতে চায়। জোটের কোনো কোনো শরিক দলের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য নিয়ে ভিন্ন মত থাকলেও তা সমাধা করার চেষ্টা চলছে। বৃহত্তর ঐক্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, দলগুলো একসঙ্গে আন্দোলন ও একসঙ্গে নিবার্চনে অংশগ্রহণের দিকেই এখন এগুচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দ্রæত সময়ের মধ্যে একটি যৌথ নেতৃত্ব কিংবা স্টিয়ারিং কমিটির মাধ্যমে বৃহৎ ঐক্যের একটি কাঠামোগত রূপ দেয়া হতে পারে। বিএনপি ঐক্য প্রক্রিয়াকে কাযর্কর রূপ দিতে ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে দুইটি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছে। এক. আলোচনার ভিত্তিতে বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়াকে একটি কাঠামোতে রূপ দেয়া। একই সঙ্গে ঐক্যের ছায়াতলে আসা দলের নেতারা বিগত সময়ে যে সব আসনে নিবার্চন করেছেন, তাদের সেই আসনগুলোতে নিবার্চন করার পথ তৈরি করে দেয়া। আর যারা নিবার্চন করেননি কিন্তু ব্যক্তি ইমেজ ও সম্ভাবনা রয়েছে, তাদেরও সুনিদির্ষ্ট আসন প্রস্তুত করে দেয়া। দুই. বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্য যে গুণগত পরিবতর্ন সেটিকে দৃশ্যমান করা। এ ক্ষেত্রে দলটি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের কাজটি শুরু হয়েছে। এর বাইরে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ক‚টনীতিকদের কাছেও সঠিক বাতার্ তুলে ধরতে চায় তারা। জানা গেছে, গত শনিবার গণফোরাম সভাপতি ড. কামালের আহŸানে এক মঞ্চে সমাবেশের পর ভোটের অধিকার আদায়ে সারাদেশে ঐক্যবদ্ধভাবে কমর্সূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি, ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া, অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট। একই সঙ্গে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নিবার্চনে অংশগ্রহণেরও প্রস্তুতি নেবেন। তবে এ মুহ‚তের্ ঐক্যবদ্ধভাবে কমর্সূচি দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে জনমত গড়ে তোলার কাজকেই অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়েছে। জানা গেছে, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে ১ অক্টোবর থেকে দেশব্যাপী বৃহত্তর ঐক্যের ব্যানারে আন্দোলন কমর্সূচি পালন করা হবে। দাবি আদায় না হওয়া পযর্ন্ত সিরিজ কমর্সূচি থাকবে। মতৈক্যের ভিত্তিতে কমর্সূচির ধরনে পরিবতর্ন আনা হবে। নাগরিক সমাবেশ সফলভাবে আয়োজনের পর আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর রমনার ইঞ্জিনিয়াসর্ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন ড. কামাল হোসেন। বিএনপি, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া, যুক্তফ্রন্ট এবং সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীষর্ নেতারা উপস্থিত থাকবেন। পাশাপাশি সিলেট, রাজশাহী এবং ময়মনসিংহে পৃথক তিনটি জনসভার আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। আন্দোলনের অংশহিসেবে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর সোহরাওয়াদীর্ উদ্যানে জনসভা করার কথাও ভাবা হচ্ছে। সুপ্রিম কোটের্র আইনজীবীদের মধ্যেও ঐক্য গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আজ দুপুরে সুপ্রিম কোটের্ ঐক্য গঠন নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে বিএনপি বৃহত্তর ঐক্যপ্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি দলীয় কমর্সূচিও চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে জনসভার কমর্সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ২১ আগস্টের মামলার রায় ঘোষণা করা হবে ১০ অক্টোবর। রায় বিরুদ্ধে গেলে দলটি প্রতিক্রিয়া দেখাবে বলে জানা গেছে। বৃহত্তর ঐক্য কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জাতীয় ঐক্য হয়েছে বতর্মান স্বৈরাচারী সরকারের পতনের জন্য। দেশের সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, যুবক-শিশু-কিশোর, পেশাজীবী সবার এই ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। কেননা, জাতীয় ঐক্যকে মোকাবিলা করার শক্তি তাদের নেই।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com