শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ০৫:৫০ অপরাহ্ন
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধিঃ বাঘাইছড়ির উপজেলায় ত্রাণ ও পুর্নবাসন অধিদফতরের অধীনে একটি গ্রামীণ সেতু নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সেতুটি উদ্বোধনের আগেই গার্ডারে ধরা পড়েছে ফাটল। ফাটল ঢাকতে দেওয়া হয়েছে সিমেন্টের প্রলেপ। আবার অপরিকল্পিত নির্মাণের কারণে সেতুর নিচ দিয়ে নৌকা কিংবা ইঞ্জিনচালিত নৌকা পারাপার ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।
তাদের অভিযোগ, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে নির্মাণকাজ পরিচালনা করায় সেতুতে ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়া সেতু নির্মাণে পরিকল্পনার ঘাটতি ও সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় উচ্চতার দিকেও নজর দেয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে করে রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করে সেতু নির্মাণ করা হলেও স্থানীয়রা এর সুফল পাবে না বলেই আশঙ্কা এলাকাবাসীর।
বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতরের অধীনে উপজেলায় ১৯টি গ্রামীণ সেতুর কাজ চলমান রয়েছে। রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের ডিপুরমুখ এলাকায় ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৮ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট প্রস্থের গ্রামীণ সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ হয়। সেতুর কার্যাদেশ পায় মেসার্স বঙ্গমিত্র চাকমা নামে খাগড়াছড়ির একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে উপ-ঠিকাদার হিসেবে কাজ করে বাঘাইছড়ি উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুদ্দিন।
ডিপুর মুখ এলাকার বাসিন্দা আবু হানিফের অভিযোগ, গত বছর সেতুর কাজ অর্ধেক করেই ফেলে যায় ঠিকাদার। এ বছর বাকী অর্ধেক সম্পন্ন করেছে। সেতুর ছাদ (মেঝে) ঢালাই করার সময়েই বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছিল। তখন স্থানীয়রা কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন করলেই তারা কর্ণপাত করেনি। স্থানীয় আরেক বাসিন্দা হোসেন বলেন, আমরা যখন কাজে অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ তুলি তখন তড়িগড়ি করে নির্মাণ শ্রমিকরা ফাটল দেওয়া স্থানে বালু ও সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে ঘষামাজা শুরু করে। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকেও বিষয়টি জানিয়েছি।
এলাকাবাসী রহমত উল্লাহ বলেন, বাঘাইছড়ি ও লংগদু দুই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার জন্য সেতুটি নির্মাণ হলেও এখন বিপদের কারণ হয়েছে। যে খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে; এর দুই পাড়ের মানুষ এই খালটি দিয়ে নৌকাযোগে চলাচল করে থাকেন। কৃষিপণ্য পরিবহনসহ নানান কাজেই তারা এই খালের ওপরে নির্ভরশীল। কিন্তু এখন সেতুটি অনেক নিচু করে নির্মাণ করায় এর নিচ দিয়ে মালামাল নিয়ে নৌকা চলাচল করতে পারে না। এখন সেতুটি বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলার আমতলী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. রাসেল চৌধুরী বলেন, স্থানীয়রা আমাকে জানানোর পর দ্রুত সেতুটি পরিদর্শনে যাই। পরে সেতু নির্মাণে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ করেও কোনো সমাধান পাইনি। আমার ইউনিয়নে সেতু নির্মাণ হয়েছে, কিন্তু আমার কাছ থেকে কেউ ছাড়পত্রও নেয়নি।
জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আব্দুল আলীম বলেন, সম্প্রতি বাঘাইছড়িতে যোগদান করেছি। এটি আমার পূর্বের কর্মকর্তা থাকাকালীন সময়ের নির্মাণাধীন একটি প্রকল্প।
এ প্রসঙ্গে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত। স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট যদি হয় সেতুটিতে এভাবে চলাচল করা যাবে না; তাহলে একেবারে ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা লাগবে। তাই তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারব।’