রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন

বাংলা নববর্ষকে ঘিরে গোপালগঞ্জের মৃৎ শিল্পীদের ব‌্যস্ততা বেড়েছে

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিঃ কয়েকদিন পরই পয়লা বৈশাখ। বাঙালির এ প্রাণের উৎসবের প্রস্তুতিও চলছে বেশ জোরেশোরেই। এ উপলক্ষে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে বসবে বৈশাখী মেলা। এ মেলাকে কেন্দ্র করে মাটির তৈরি বিভিন্ন ধরনের খেলনা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার মৃৎ শিল্পীরা।

তবে প্লাস্টিক পণ্যের কারণে মাটির তৈরি খেলনার চাহিদা অনেক কমে গেছে। দুই বছর করোনার কারণে লোকসান আর ব্যবসায়িক মন্দা কাটিয়ে পয়লা বৈশাখের মেলাকে সামনে রেখে লাভের আশা করছেন তারা।

জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার হিরন ইউনিয়নের কুমার পল্লী ঘুরে দেখা গেছে আবহমান গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য মৃৎ শিল্পকে ধরে রেখেছেন এখানকার মৃৎ শিল্পীরা। মৃৎ শিল্পকে ঘিরে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে কুটির শিল্প। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে জেলার কয়েক হাজার মানুষ। তাই বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে মৃৎ পল্লীগুলো এখন কর্মমুখর।

বাংলা নববর্ষ বরণের প্রধান অনুসঙ্গ বৈশাখী মেলা বসবে জেলার বিভিন্ন স্থানে। বৈশাখী মেলায় বিভিন্ন বাহারী খেলা ও পণ‌্যের পসরা সাজিয়ে বসতে মৃৎ শিল্পীদের এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বৈশাখী মেলায় ব্যবসা করতে পণ্য তৈরিতে রাত-দিন কাজ করে চলেছেন তারা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘরে বা আঙ্গিনায় বসে মৃৎ শিল্পীরা মাটি দিয়ে পুতুল, হাতি, ঘোড়া, ময়ুর, হাড়িসহ বিভিন্ন খেলনা ও সামগ্রী তৈরি করছেন।

পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এসব জিনিস তৈরিতে সাহায্য করছেন। এমনকি স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও এ কাজে তাদের বাবা-মাকে সাহায্য করে থাকে। তাদের তৈরি এসব জিনিসপত্র পয়লা বৈশাখের মেলাসহ বিভিন্ন এলাকার বাজারে বিক্রি করা হবে।

তবে প্লাস্টিক পণ‌্যের কারণে চাহিদা কমে গেছে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের। ফলে লাভ কম হওয়ায় এসব পণ্য তৈরিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। তারপরও বাপ-দাদার এ পেশাকে এখনো ধরে রেখেছেন অনেকে। সারা বছর তারা বৈশাখীর মেলাকে সামনে রেখে মালামাল তৈরি করে থাকেন। অপেক্ষা করেন পয়লা বৈশাখের মেলার জন্য।

হিরণ গ্রামের সুজিত পাল বলেন, ‘আমরা মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র তৈরি। তবে দুই বছর করোনার কারণে মেলা হয়নি। এতে আমাদের ব্যবসায়িক মন্দা যাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেছি। এ শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করার দাবী জানাচ্ছি।’

একই গ্রামের তপন পাল বলেন, ‘প্লাস্টিকের পণ্য বাজার দখল করায় এখন মাটির তৈরি জিনিস পত্র তেমন একটা বিক্রি হয় না। ফলে অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। প্লাস্টিক পণ্যের বাজারজাত বন্ধের পাশাপশি এ শিল্পগুলোকে টিকিয়ে রাখতে স্বল সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা খুবই প্রয়োজন। তা না হলে এক সময় এ শিল্পটি হারিয়ে যাবে।’

গোপালগঞ্জ বিসিকের মহা-ব্যবস্থাপক গৌবর দাস জানান, বৈশাখী মেলা জেলা থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বিশেষ করে মৃৎ শিল্পীরা সারা বছর এ মেলার দিকে তাকিয়ে থাকেন। মেলায় তাদের পণ্য বিক্রি করে লাভবান হবেন এমন আশায়। তবে এক সময় মাটির তৈরি জিনসপত্রের কদর থাকলেও প্লাস্টিকের কারণে এখন অনেক কমে গেছে। ফলে এ ঐতিহ্য এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে কেউ যদি ঋণের জন্য আবেদন করেন তাহলে স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com