মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:০০ অপরাহ্ন

ফজিলার ভাগ্যে জোটেনি সরকারের দুর্যোগ সহনীয় ঘর!

লালমনিরহাট প্রতিনিধি::

তিন তিনটি বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে শত কষ্টে দিন চলে ফজিলা বেগমের অভাবের সংসার। নিজের থাকার বাসস্থান নেই, থাকেন অন্যের বাড়িতে। এতোকিছুর পরেও তার ভাগ্যে জোটেনি সরকারের দুর্যোগ সহনীয় ঘর। যদিও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দিয়েছেন দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। এছাড়া ফজিলার ভাগ্যে জোটেনি দুস্থ্য মাতারও একটি কার্ড।অথচ তার চেয়ে স্বচ্ছল পরিবারের সদস্যদের ভাগ্যে জোটেছে দুর্যোগ সহনীয় ঘর।
স্বামী পরিত্যক্তা ফজিলা বেগম লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা সদরের টিএন্ডটি পাড়ার দিনমজুর হামিদ আলীর মেয়ে।

মুজিব শত বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দিয়েছেন দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। জমি আছে ঘর নেই ও ভুমিহীন পরিবারের মাঝে ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন সরকার। অথচ এ প্রকল্পেও জোটেনি হতভাগ্য ফজিলার ভাগ্যে একটি ঘর।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ সহনশীল প্রকল্পের আওতায় এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৫০টি ঘর ও ভুমিহীন ১৩০টি পরিবারের গৃহ নির্মাণের জন্য ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা করে ব্যয়ে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।

পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, বিয়ের এক বছরের মধ্যে স্বামী ফারুক হোসেন চলে গেছেন অজানা এক শহরে। আজ অবদি দেখা হয়নি স্বামীর। ইতিমধ্যে তার কোল জুড়ে আসে একটি কন্যা সন্তান। সন্তানের নাম রাখা হয় বাবার নামের সাথে মিল করে মরিয়ম আক্তার ফাল্গুনী। বর্তমানে ফাল্গুনী সরকারী আদিতমারী জিএস মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ৮ম শ্রেনীতে পড়ছে। অত্যন্ত মেধাবী ফাল্গুনী ৫ম শ্রেনীতে জিপিএ-৫ ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। মেয়েটির কথা চিন্তা করে স্বামী চলে যাওয়ার পরেও ফজিলা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে মেয়ের লেখাপড়া ও সংসার চালাচ্ছেন। শুধু কি তাই! দীর্ঘদিন যাবত অন্যের বাড়ীতে কাজ করে গচ্ছিত এক লক্ষ টাকায় নিজের নামে মাত্র ২ শতক জমি কিনেছেন। আশা ছিল সরকারের পক্ষ থেকে একটি ঘর পাবেন। এজন্য জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সরকারের সকল দপ্তরে ঘুরেছেন। অনেকেই আশ্বস্থ করলেও শেষ পর্যন্ত তালিকায় তার নাম উঠেনি। তালিকায় নাম উঠেছে শুধু রাজনৈতিক নেতাদের দেয়া স্বচ্ছল ব্যক্তির নাম। বার বার পরিবর্তন করা হচ্ছে তালিকায় উঠা এসব স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নাম। কিন্তু শত চেষ্টায় তার ভাগ্যে জোটেনি থাকার একটি ঘর।

সম্প্রতি কথা হয় ফজিলা বেগমের সাথে কথা হলে ফজিলা আক্ষেপ করে বলেন, এ জনমে কি মোর ভাগ্যে জোটবে একটি ঘর। মেম্বার চেয়ারম্যান খালি বড়লোক গুলার নাম দিয়া তামার ঘর বানে দেয়। মুই এতোবার দৌড়াদৌরি করিয়াও কাও মোক একটা ঘর দেইল না। তিনি আরো বলেন, সারাদিন মানুষের বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করার পর রাইতোত ফির থাকা নাগে মাইনসের বাড়ীত। এর থেকে আর কি কষ্ট হতে পারে। মেয়েটা মোর দিন দিন বড় হইতেছে। একমাত্র মেয়েকে নিয়া একনা নিশ্চিতে বসবাস করতে চান। এজন্য তিনি মেম্বার চেয়ারম্যান সহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

স্বামী পরিত্যক্তা ফজিলা মেয়ে ৮ম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার ফাল্গুনী বলেন, আমি লেখাপড়া করে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হতে চাই কিন্তু আমাদের থাকার কোন ঘর নেই। মেয়েটি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, মা আমার কাজ করেন অন্যের বাড়ীতে। মায়ের কষ্ট দেখে লেখাপড়া ছেড়ে দিতে মন চায়। সেও সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

ফজিলার আশ্রিতা আদিতমারী কেবি বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আকতর হোসেন বলেন, মেয়েটির কষ্ট দেখে ফজিলাকে ও তার মেধাবী মেয়ে ফাল্গুনীকে সাময়িকভাবে থাকার জায়গা দিয়েছি ঠিকই কিন্তু স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য নয়। তিনি ফজিলার বসবাসের জন্যও সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

ভাদাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, একাধিকবার চেষ্টা করেও তার নামে একটি ঘর বরাদ্দ দিতে পারিনি। তবে পরবর্তীতে চেষ্টা করবেন বলে দাবী করেন তিনি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মফিজুল ইসলাম বলেন, দুর্যোগ সহনীয় ও ভুমিহীন পরিবারের ঘরের তালিকা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে করা হয়। তবে ফজিলার বিষয়টি তিনি গুরুত্বসহকারে দেখবেন বলে দাবী করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, স্বামী পরিত্যক্তা ফজিলার বিষয়টি জেনে দুর্যোগ সহনীয় প্রকল্প থেকে একটি ঘর দিতে তার নামের তালিকা সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর নিকট পাঠানো হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন। অনুমোদন পেলে দ্রুত তার জমিতে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com