শুক্রবার, ০৮ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, একুশের কণ্ঠ:: আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। বৈঠক শেষে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বৈঠকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে দিক নির্দেশনা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সচিবালয়ের নবনির্মিত ভবনের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় এ বৈঠক শুরু হবে। সচিবালয়ে প্রধান উপদেষ্টার এটি দ্বিতীয়বারের আগমন হলেও নতুন ভবনে প্রথম বৈঠক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে প্রশাসনের মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ ও সমন্বয়ের দিকেই বৈঠকে মূল জোর দেওয়া হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচনকালীন প্রশাসনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে এবং নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের করণীয় নিয়ে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা আসতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আমরা এর প্রতিফলন দেখব বলে আশা করছি, বলেন তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে এ বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ইতোমধ্যেই মাঠ প্রশাসনে জেলা প্রশাসক, ইউএনও ও সহকারী কমিশনারদের কিছু রদবদল হয়েছে। এবার এ পরিবর্তন আরও বিস্তৃত হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
একজন বিভাগীয় কমিশনার বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে হলে মাঠপর্যায়ে প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কমিশনের নির্দেশনার বাইরে কোনো সিদ্ধান্তে যেন বিভ্রান্তি না হয়, সে বিষয়েও স্পষ্ট নির্দেশনা দরকার। আমরা আশা করছি বৈঠকে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা আসবে।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সরকারের সমন্বয় নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে ভোটকেন্দ্র চিহ্নিতকরণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ভোটার পরিবহন, নির্বাচনী সরঞ্জাম সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে প্রশাসনের করণীয় নির্ধারণে নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে রূপান্তরিত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে নিয়মিতভাবে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হলেও সচিবালয়ের আজকের এ বৈঠক প্রতীকী গুরুত্বও বহন করছে বলে মনে করছেন প্রশাসন-সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, প্রশাসন ও উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন এবং মনস্তাত্ত্বিকভাবে কর্মকর্তাদের ‘দায়িত্বের অনুভব’ জাগাতে সচিবালয়ে এ ধরনের বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, প্রশাসনের ওপর চাপ তত বাড়ছে। মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তারা যেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করতে পারেন, এ জন্য এ ধরনের বৈঠক অত্যন্ত কার্যকর।
বৈঠকে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে চলমান বিতর্ক, কোথাও প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপের অভিযোগ থাকলে তা নিরসনের কৌশল এবং রাজনৈতিক সহিংসতা রোধে স্থানীয় প্রশাসনের প্রস্তুতি ইত্যাদি বিষয়ও আসতে পারে। সব মিলিয়ে আজকের বৈঠককে প্রশাসনের জন্য শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং আগামীর রূপরেখা নির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখছে সচিবালয় ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এখন অপেক্ষা, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস কী বার্তা দেন এবং সেই নির্দেশনার ভিত্তিতে মাঠপর্যায়ে কীভাবে নির্বাচনী প্রস্তুতি এগিয়ে যায়।