বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:২৫ অপরাহ্ন

পার্টটাইম সাব-রেজিস্টারের তেলেসমাতিতে ভাঙ্গল কলম বিরতি, চলল অনিয়মের দলিল

পার্টটাইম সাব-রেজিস্টারের তেলেসমাতিতে ভাঙ্গল কলম বিরতি পার্টটাইম সাব-রেজিস্টারের তেলেসমাতিতে ভাঙ্গল কলম বিরতি

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ত্রুটিপূর্ণ দলিল না করায় উপজেলা সাব-রেজিস্টারের বিরুদ্ধে চলছিল দলিল লেখকদের কলম বিরতি। এ কলম বিরতির ফলে কোটি কোটি রাজস্ব হারিয়েছে সরকার এবং ক্ষতিগ্রস্থ ও হয়রানির শিকার হয়েছেন জমি ক্রেতা-বিক্রেতারা।

অবশেষে পার্টটাইম সাব-রেজিস্টারের তেলেসমাতিতে বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎ ভাঙ্গলো সেই ৩৫ দিনের কলম বিরতি। নানা অনিয়মের মাধমে দিনব্যাপী দলিল রেজিস্ট্রী কার্যক্রমের অভিযোগ উঠেছে।

জমি ক্রেতা-বিক্রেতা, দলিল লেখক ও উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের আওতায় প্রায় সোয়া শত দলিল লেখক রয়েছে। এদের অনেকেই ত্রুটিপূর্ণ দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। দলিল লেখক অনেকেই গড়েছেন রাজকীয় বাড়ি-গাড়িও। আর ত্রুটিপূর্ণ দলিল সম্পাদন রেজিস্ট্রী করতে অস্বীকার করলে তাদের রোষানলের শিকার হয়েছেন অনেক সাব-রেজিস্ট্রারও।

গত ২০১২ সালে অসাধু সাব-রেজিস্ট্রার ও তার সহযোগি এবং দলিল লেখকদের সঙ্গে যোগসাজসে ভূমি জালিয়াতি চক্র এ উপজেলায় প্রায় ৫০০ একর জমি জাল দলিল করেছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় জাল দলিলের মাধ্যমে অন্যের জমি হাতিয়ে নিয়েছেন ভূমি জালিয়াতি চক্র। এসব জালিয়াতির ঘটনায় বিভিন্ন সময় মামলা হলে গ্রেপ্তার ও জেলহাজতে গেছেন অনেক দলিল লেখকও।

সম্প্রতি নিরিহ এক চা-দোকানী সফুরা বেগমের জমি জালিয়াতির সিআর মামলায় কয়েকজন দলিল লেখকসহ ১৪ জনের নামে ওয়ারেন্ট জারি করেন আদালত। তারপরও বিভিন্ন সময় দলিল লেখকরা কৌশলে ত্রুটিপূর্ণ দলিল সম্পাদন করে আসছিলেন। কিন্তু তাদের লাগাম টেনে ধরলেন নবযোগদানকৃত উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মাহমুদা। ত্রুটিপূর্ণ কোনো দলিল রেজিস্ট্রী করবেন না বলেও ঘোষণা দেন তিনি। এতে যেন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন কালিয়াকৈর দলিল লেখক ও ষ্ট্যাম্প ভেন্ডার কল্যাণ সমিতির সদস্য দলিল লেখকরা।

এক পর্যায়ে গত ১৪ জানুয়ারী থেকে তার বিরুদ্ধে পাল্টা কলম বিরতির ঘোষণা দেন দলিল লেখকরা। তাদের দাবী, ওই সাব-রেজিস্ট্রার আইন না বুঝে মন মতলবী কাজ করছেন। এটা আমাদের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্যেই দলিল লেখকরা কলম বিরতি পালন করতেছিলাম। এদিকে প্রায় ৩৫ দিন কর্মবিরতির মুখে দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রী না হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ ও হয়রানির শিকার হয়েছেন জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা।

অপরদিকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছেন সরকার। অপর দিকে গোপনে সভা করে ওই কর্মকর্তাকে তাড়ানোর জন্য দলিল লেখকদের প্রতিনিধিদল মোটা অংকের টাকা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দপ্তরে ধরনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমন নানা পরিস্থিতির মুখে গত ৩ দিন ধরে ছুটিতে রয়েছেন এখানকার সাব-রেজিস্ট্রার মাহমুদা। এ সুযোগে দলিল লেখকরা কৌশলে বৃহস্পতিবার শ্রীপুর উপজেলা সাব-রেজিস্টার সোহেল রানাকে এখানে পার্টটাইম সাব-রেজিস্টার হিসেবে যোগদানের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু এখানে জনবল থাকলেও ওই কর্মকর্তা অনৈতিক সুবিধার জন্য একজন সহকারী নিয়ে আসেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

অবশেষে ওই পার্টটাইম কর্মকর্তার তেলেসমাতিতে সকালে ভাঙ্গলো দলিল লেখকদের সেই কলম বিরতি। এ সুয়োগে নানা অনিয়মের মাধমে দিনব্যাপী দলিল রেজিস্ট্রী কার্যক্রম চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর দিনব্যাপী অনিয়মের দলিলের মাধ্যমে ওই কর্মকর্তা ও অসাধু দলিল লেখকরা লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগের কথাও জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ক্রেতা-বিক্রেতা ও দলিল লেখক জানিয়েছেন, আগের স্যার নিয়মের বাইরে দলিল করেন নাই। কিন্তু এই পার্টটাইম সাব-রেজিস্টার স্যার কোনো রকম যাচাই-বাচাই ছাড়াই দলিল করেছেন।

ঘুষ দিয়ে ওই কর্মকর্তাকে তারানোর চেষ্টার বিষয়টি অস্বীকার করে কালিয়াকৈর দলিল লেখক ও ষ্ট্যাম্প ভেন্ডার কল্যাণ সমিতির সভাপতি আজিজুর রহমান জানান, ওই সাব-রেজিস্ট্রার আইন না বুঝে তিনি মন মতলবী কাজ করছেন। তিনি ঠিকমতো অফিসেও আসেন না। এসব কারণে আমাদের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্যেই আমরা কলম বিরতি পালন করেছি। তবে পার্টটাইম সাব-রেজিস্টার আসলে আমাদের দলিল সম্পাদনের কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে পার্টটাইম সাব-রেজিস্টার সোহেল রানা জানান, আমি যেটা বুঝি মতানৈক্যের অভাবে এই কলম বিরতির ঘটনা ঘটেছে। ‘নিয়মের বাইরে বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া দলিল রেজিস্ট্রী না করায় কলম বিরতির মুখে পড়েছিলেন এখানকার সাব-রেজিস্টার। কিন্তু আপনি কিভাবে নিয়মের বাইরে দলিল করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে পার্টটাইম এই কর্মকর্তা জানান, আমার আর উনার ক্ষেত্রে নিয়ম আলাদা নয়। কিন্তু কাগজপত্রের ফটোকপি দেখে তিনি না করলেও আমি ফটোকপি যাচাই-বাচাইয়ের মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রী করেছি।

এব্যাপারে নবযোগদানকৃত উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মাহমুদা মুঠোফোনে জানান, নিয়মের বাইরে দলিল রেজিস্ট্রী না করায় কিছু অসাধু দলিল লেখক কলম বিরতি করে। কিন্তু কাগজপত্র সঠিক পেয়ে এর মধ্যে দলিল রেজিস্ট্রী করেছি। তবে আমার তিন দিনের ছুটি শেষ হলে আবার কর্মস্থলে যোগদান করবো।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com