মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ০২:২৯ পূর্বাহ্ন

পাইক্ষ্যং পাড়ায় আনন্দের জোয়ার

বশির আহাম্মদ, বান্দরবান প্রতিনিধিঃ দীর্ঘ ৯ মাস পর নিজেদের জন্মস্থান,আবাসস্থলে ফিরলো বান্দরবানের দুর্গম পাইক্ষং পাড়া এলাকার ৬৩ টি বম পরিবারের ২০০ এর অধিক জনসাধারণ। এর আগে থানচি উপজেলার প্রাতা বম পাড়ায় ১১টি পরিবারের ৪৯ জন সদস্য ফিরেছে নিজ আবাসস্থলে। নিজেদের আবাস স্থলে ফিরতে পেরে আনন্দের যেনো কমতি নেই ছোট শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধদের।

উল্লেখ্য, পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ এর সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঙ্ঘর্ষের কারনে কেএনএফ এর ভয়ে দীর্ঘদিন নিজেদের বাড়ি ঘর ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গিয়েছিলো স্থানীয় জনসাধারণ। পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা কে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠিত শান্তি কমিটির সাথে গত ৫ই নভেম্বর বান্দরবানের রুমায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে নতুন সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে প্রথম মুখোমুখি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কেএনএফ নেতৃবৃন্দের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আলোচনার ফলশ্রুতিতে এখন অনেকটাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।ফলে সেনাবাহিনীর সহায়তায় পালিয়ে যাওয়া অনেক বম পরিবার তাদের নিজেদের আবাসস্থলে ফিরতে শুরু করেছে।পাড়ার স্কুল গুলোতেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি চোখে পড়েছে,ফিরে আশা সকল বম পরিবারের প্রয়োজনীয় রসদ সামগ্রী না থাকায় অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে।

এদিকে সোমবার ২০শে নভেম্বর সকালে রোয়াংছড়ি উপজেলার পাইক্ষং পাড়ায় বান্দরবান সেনা জোন কমান্ডার লেঃ কর্নেল মাহমুদুল হাসান পিএসসি এর নেতৃত্বে, সরকারি উর্ধতন কর্মকর্তা,পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, বম সোশ্যাল কাউন্সিল এর নেতৃবৃন্দ এবং গণমাধ্যম কর্মীদের সমন্বয়ে একটি পর্যবেক্ষণ দল ও মেডিক্যাল টিম পাইক্ষং পাড়া পরিদর্শন করেন।

এসময় নিজ এলাকায় ফিরে আশা জনসাধারণের মাঝে সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে ফ্রী মেডিক্যাল সহায়তা সামগ্রী ও খাবার বিতরণ করা হয়।
এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বম সোশ্যাল কাউন্সিল এর সভাপতি লালজারলম বম বলেন দীর্ঘদিন পর নিজেদের আবাসস্থলে ফিরতে পেরে সকলেই আনন্দিত।

তিনি বলেন, কেএনএফ ও সরকার তথা শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মধ্যকার আলোচনার ফলশ্রুতিতে দীর্ঘদিন পর এখানকার স্থানীয় বসবাসকারীরা নিজেদের পাড়ায় ফিরতে শুরু করেছে।পাইক্ষ্যং পাড়া কারবারি পিথর বম বলেন সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আমরা নিজেদের পাড়ায় ফিরতে পেরেছি। আগামী ২৬শে নভেম্বর এর মধ্যে সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে মানবিক সহায়তা করা হবে ফিরে আশা পরিবারের সদস্যদের এ জন্য সেনাবাহিনীর প্রতি আমরা সকলেই কৃতজ্ঞ।

এ ব্যাপারে সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহ্লা অং মারমা এবং হেডম্যান বৈথং বম কাছ থেকে জানাযায় এরকম ৯৭ টি পরিবার তাদের সন্তান-সন্ততি নিয়ে পাড়া হতে পালিয়ে যায়। যারা বান্দরবান সহ রোয়াংছড়ি উপজেলা সদরে দীর্ঘদিন যাবৎ অবস্থান করে আসছিল।

এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কারনে সকলের মাঝে সস্থি ফিরে এসেছে। এছাড়া চেয়ারম্যান জানান ফিরে আশা বম পরিবারের সদস্যদের জন্য উপজেলা পরিষদের পক্ষ হতে শীত সামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সাংবাদিক প্রশ্নের উত্তরে বান্দরবান জোন কমান্ডার লেঃ কর্নেল মাহমুদুল হাসান পিএসসি বলেন সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে রোয়াংছড়ি – পাইক্ষ্যং পাড়া সড়ক এর সংস্কার কার্যক্রম পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে চলমান রয়েছে।

অচিরেই এ রাস্তায় যাতায়াতের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে শান্তি ও অথনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। তিনি বলেন এই এলাকায় শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। ফিরে আশা বম পরিবারের জন্য সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে মানবিক সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে এবং ইতিমধ্যে ফিরে আশা জনসাধারণের চিকিৎসা সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ফ্রী মেডিক্যাল ক্যাম্পের মাধ্যমে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

তিনি জানান আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আরো যারা ফিরে আসবেন তাদের শীতবস্ত্র বিতরণ এবং স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের শিক্ষা সামগ্রী বিতরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় দ্রুতই রাস্তার উন্নয়ন কাজ শেষ করা হবে ফলে এই এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণ তাদের উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য পূর্বের মতো বাজারজাত করতে পারবে।

সর্বপরি এই অঞ্চলের শান্তি সম্প্রিতি বজায় রাখার স্বার্থে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, জোন ২আইসি মেজর এ এস এম মাহমুদুল হাসান, রোয়াংছড়ি ক্যাম্প কমান্ডার,মেজর এমএম ইয়াসিন আজিজ, ক্যাপ্টেন মোঃ আসাদুল ইসলাম, উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন ইয়াছির আরাফাত প্রমূখ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com