বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ১০:৪০ অপরাহ্ন

ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক, একুশের কণ্ঠ:: বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ঋণ অনুমোদন করা, পরিচালনা পর্ষদের ক্ষমতার অপব্যবহার ও পরিচালক নির্বাচনসহ কয়েকটি বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল)-এর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশে এই পদক্ষেপ নিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি ৭ সদস্যের নতুন পরিচালনা পর্ষদও গঠন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) পৃথক দুই আদেশে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংকটিকে রক্ষায় আমরা বুধবার বৈঠক করে বর্তমান পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নিই। এরপর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংক আজ এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমরা মনে করি, এতে ব্যাংকটির গ্রাহকের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থও রক্ষা হবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক আদেশে জানিয়েছে, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক ‘ঋণনিয়মাচার ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ঋণ অনুমোদন প্রদান করা, পর্ষদ কর্তৃক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ করা, পর্ষদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাংকের শেয়ার একই পরিবারে কেন্দ্রীভূত করা, পরিচালক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি, পর্ষদের গোচরে পরিচালকগণ কর্তৃক আর্থিক অনিয়ম সংঘটন, পর্ষদের নীতিনির্ধারণী দুর্বলতার কারণে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি, ব্যাংকিং সুশাসন ও শৃঙ্খলা বিঘ্ন করার মাধ্যমে ব্যাংক-কোম্পানি ও আমানতকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে পর্ষদ কর্তৃক সম্পৃক্ত থাকার ঘটনা ঘটেছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আদেশে আরও বলা হয়, ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের এসব কর্মকাণ্ডের কারণে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১–এর ৪৭ (১) এবং ৪৮ (১) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও জনস্বার্থে ন্যাশনাল ব্যাংকের বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হয়েছে।

পৃথক আদেশে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের লক্ষ্যে সাতজনকে পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নবগঠিত সাত সদস্যের পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হয়েছেন তিনজন এবং পরিচালক হয়েছেন সাতজন।

স্বতন্ত্র পরিচালকেরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ও সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেন।

তাদের মধ্যে পর্ষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন আইবিএর সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার। মেঘনা ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগের শর্তে তাকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে নতুন চার পরিচালক হলেন পারভীন হক সিকদার, উদ্যোক্তা পরিচালক খলিলুর রহমান, সিকদার ইনস্যুরেন্স কোম্পানির পক্ষে প্রতিনিধি পরিচালক মো. সফিকুর রহমান ও উদ্যোক্তা শেয়ারধারী হিসেবে পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন।

জানা গেছে, সংকটে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংকে পরিচালকদের দ্বন্দ্বের কারণে আবারও অস্থিরতা শুরু হয়েছে। একজন পরিচালকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটির ৪০তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজনের ওপর আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা জারি করেছেন চেম্বার আদালত। ওই দিন এ বিষয়ে আপিল বিভাগে শুনানি হবে।

এর আগে গত সোমবার ব্যাংকের অন্যতম পরিচালক পারভীন হক সিকদারের রিটের শুনানি নিয়ে ২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে ব্যাংকটির এজিএম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। ব্যাংকটির গত ৩ অক্টোবরের স্থগিত হওয়া ৪০তম এজিএম ২১ ডিসেম্বর আয়োজনের কথা ছিল।

প্রসঙ্গত, ‘প্রহসনমূলক ভোটে’ পরিচালক পদ থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা করছেন পারভীন হক সিকদার। এ জন্য তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) চিঠি দিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অধীনে এজিএম অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন।

চিঠিতে ‍তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের কোম্পানি সচিবের চিঠির মাধ্যমে জানতে পেরেছি, ২১ ডিসেম্বর ব্যাংকের ৪০তম এজিএম ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যদিও সেদিন এজিএমের অ্যাজেন্ডা পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদন হয়নি। কোম্পানির আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনের ১০৩ ও ১০৪ ধারা অনুযায়ী অবসর গ্রহণকারী পরিচালকবৃন্দ পুনর্নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।কিন্তু ব্যাংকের ৩৯তম এজিএমে কোম্পানি আইনের এই বিধান লঙ্ঘন করা হয়। ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে এজিএমের আয়োজন করা হয়। ষড়যন্ত্র করে পরিচালক পুনর্নির্বাচনের অ্যাজেন্ডাকে এড়িয়ে অবসর গ্রহণকারী তিনজন পরিচালকের মধ্যে দুজন উদ্যোক্তা পরিচালককে পাতানো ভোটাভুটির মাধ্যমে পরিচালক পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়।’

উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা হয় ন্যাশনাল ব্যাংকের। ব্যাংকটির উদ্যোক্তাদের একজন ছিলেন পারভীন হকের পিতা প্রয়াত জয়নুল হক সিকদার। বর্তমানেও সিকদার পরিবারের সদস্যরা ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক পদে আছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com