রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫, ০১:০৯ অপরাহ্ন

নেত্রকোনার বিলকিস বেগমের কান্না শোনার যেন কেউ নেই!

হৃদয় রায় সজিব, নেত্রকোনা প্রতিনিধি, একুশের কণ্ঠ ডটকম ॥ নেত্রকোনার গৃহবধূ বিলকিস বেগম ও তার শিশু সন্তানের কান্না শোনার যেন কেউ নেই। স্বামীর বাড়ি থেকে তাকে নির্যাতন করে শতাধিক বার বের করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য বারবার ফিরে গেছেন। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। বের করে দেওয়া হয়েছে একটি সন্তানসহ। কিন্তু আরও একটি সন্তান আটকে রাখা হয়েছে। এখন কোলের শিশুকে নিয়ে পথে পথেই কাটছে তার জীবন, স্থানীয় থানায় গিয়েও পাচ্ছেন না কোন প্রতিকার।

বিলকিস বেগম (২৬) নেত্রকোনা সদরের মৌজব আলী গ্রামের মৃত বোজ আলী ও সুফিয়া বেগমের (মানসিক রুগী) কন্যা। তার ২ সন্তানের মধ্যে বড় সন্তানের বয়স ৪ বছর এবং ছোট সন্তানের বয়স ৮ মাস। বিলকিস বেগম তিন বোনের মধ্যে ২য়। গত ২০ বছর যাবত তারা পিতা হারা এবং পিতার মৃত্যু শোকে বিলকিস এর মা সুফিয়া বেগম মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।

জানা গেছে, দুঃখ কষ্টের মধ্যে গত প্রায় ১১ বছর আগে একই থানার মদনপুর গ্রামের সৌকত হাসান বাবুলের পুত্র হিরা মিয়া একের পর এক প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বিলকিসের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তাকে গোপনে বিবাহ করে বাড়ি থেকে চলে যায়। পরে এটা পারিবারিক ভাবে মিমাংসা হলেও হিরা মিয়ার মা বিলকিসের শাশুড়ী সম্পর্ক টা সহজে মেনে নিতে পারেননি। শত কষ্ট দুঃখের মাঝে সংসার কেটে যাচ্ছিল তাদের। সংসার জীবনে তাদের ২ জন সন্তান রয়েছে। বড় সন্তান জুবায়ের এবং ছোট সন্তান আরাফাত।

ভুক্তভোগী সুত্রে জানা যায়, বিবাহের পর থেকেই হিরা মিয়ার অর্থ লোভী মা নানা ভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিলো এবং প্রতি মাসেই বিলকিস বেগম কে বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ প্রয়োগ করতো। হঠাৎ একদিন বিলকিসের শাশুড়ী চালাকি করে সমিতির ফরম এ লোন তোলার কথা বলে ডিভোর্স ফরম এ সই করিয়ে নেয়। তারপর উক্ত বিষয়ের সত্যতা বিলকিস জানতে পারলে তার শাশুড়ী তাকে হুমকি দেয় এবং বিলকিস কে বাড়ি থেকে নির্যাতন করে বের করে দেন। এলাকার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিলকিসের মুখে ঘটনার বর্ননা শুনে সালিশির মাধ্যমে পুনরায় হিরা মিয়ার সাথেই তার বিবাহ দেন এবং হিরা মিয়ার পরিবারকে সাবধান করে দেয়। এভাবে গত ১০ বছরে প্রায় শতাধিক বার নির্যাতন করে বিলকিসকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।

এদিকে, এ অবস্থার মধ্যেও বেশ কিছুদিন ধরে হিরা মিয়া তার স্ত্রীর ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং তার বাড়ির পাশেই তিন স্বামী পরিতক্তা ও অর্থশালী এক কন্যা সন্তানের জননী লাবনী কে সে বিয়ে করবে বলে হুমকি দিতে থাকে। হিরা মিয়া বিলকিস কে আরও বলে যে তোর মতো পাগলের মেয়ে কে নিয়ে আজীবন কাটিয়ে আমার কি লাভ? বরং লাবনী কে বিয়ে করলে আমার জীবনটাই পাল্টে যাবে। আমি লাবনী কে এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে করবো, তোরা যা পারিস কর।এ কথা শোনার পর বিলকিস প্রতিবেশি লাবনী কে হাত পা ধরে তার সংসারটা না ভাঙার জন্য এবং তার সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে হলেও হিরা মিয়ার জীবন থেকে সরে যেতে খুব অনুরোধ করে। এরপর লাবনী এই কথাগুলো হিরা মিয়াকে জানালে হিরা মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়িতে এসে বিলকিস কে বেধড়ক মারধর করে প্রায় অচেতন অবস্থায় ফেলে রেখে লাবনী কে নিয়ে চলে যায় ঢাকার মহাখালী।

এ খবর পেয়ে বিলকিসের বড় বোন নারগিস বেগম বিলকিসের বাড়িতে গিয়ে বিলকিস কে তার বাড়িতে এনে চিকিৎসা করায় এবং পুনোরায় স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ কে বলেও কোন সুরাহ হয় না। উল্টো হিরার মা আরো বিলকিস ও তার পরিবার কে অপমান করতে থাকে। পরবর্তী তে বিলকিস বেগম হিরা মিয়ার সন্ধানে ঢাকার মহাখালী তে তার ভাড়া বাসায় গিয়ে লাবনী ও হিরা মিয়াকে এক সাথে দেখতে পায়। তখন বিলকিস কে দেখে হিরা মিয়া ও লাবনী চমকে যায় এবং দু’জন মিলে বিলকিস কে মারধর করে। একপর্যায়ে গলা চেপে হত্যার চেষ্টা করে।

এ সময়ে বিলকিস তাদের কাছে কোন রকম প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে নিজ বাড়ি নেত্রকোনা চলে আসে। বাড়ি এসে বিলকিস নেত্রকোনা সদর থানায় গিয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা কে পুরো ঘটনার বিবরণ দিলে তিনি তখন হিরা মিয়ার মোবাইল নম্বর নিয়ে তাকে ফোন করে। কিছুক্ষণ কথা বলার পরে ওই পুলিশ বিলকিস কে জানায় যে হিরাকে আমি চিনি তুমি হিরার বাসায় যাও, এভাবে মামলা নেওয়া হবেনা। পরবর্তীতে হিরা মিয়া বিলকিসকে ফোন করে গালিগালাজ করে এবং বলে হিরার নামে বাংলাদেশের কোন থানায় মামলা নেবে না। এরপর হতে প্রায় ২ মাস যাবত হিরার বাড়িতে অতি কষ্টেই দিনযাপন করছিলো বিলকিস ।

হঠাৎ করেই গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে বিলকিসের সব প্রকার খোরপোশ দেওয়া বন্ধ করে দেয় এবং বিলকিস এর ৪ বছর এবং ৮ মাসের বাচ্চা কে আটকে রেখে বিলকিস কে বের করে দেয়। সন্তানের টানে সেখান থেকে বিলকিস না এসে তার বড় বোন নারগিস কে কল করে ডেকে আনলে সে তার শাশুড়ী কে অনেক অনুরোধ করে শিশু বাচ্চা কে আনতে পারলেও ৪ বছর বয়সী ছেলে কে দেয়নি। কিন্তু এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে আইনের সহযোগিতার জন্য ঘুরলেও কোন লাভ হয়নি। বিলকিস বেগম স্থানীয় প্রশাসন হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com