শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন
মুজিবুর রহমান বাবু, ই-কণ্ঠ টোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ আজ মঙ্গলবার থেকেই পর্দা উঠেছে আয়োজিত এই ষষ্ঠ আসরের। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। সাফ ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ নিজেদের প্রথম ম্যাচ জয় দিয়ে আসর শুরু করতে চান সাবিনা-মারিয়ারা। বুধবার ৭ সেপ্টেম্বর নিজেদের প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ‘মালদ্বীপের বিপক্ষে আমাদের প্রথম ম্যাচটা খুব গুরুত্ব। মেয়েরা তাদের খুব ভালোভাবে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত আছে। আমি মনে করি মেয়েরা এই ম্যাচে নিজেদের সর্বোচ্চটা দেবে এবং জয় নিয়েই মাঠ ছাড়বে।’ কথাগুলো গোলাম রব্বানী ছোটনের, যিনি বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ। যে উপলক্ষে কথাগুলো তিনি বলেছেন, সেই উপলক্ষের নাম সাফ ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ।
তবে লাল-সবুজ বাহিনীর মিশনটা শুরু হচ্ছে কাল বুধবার থেকে। পরিসংখ্যান এবং খেলার মান সব দিক থেকে মালদ্বীপের চেয়ে ঢের এগিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা। সাফে এর আগে মালদ্বীপের সঙ্গে বাংলাদেশের সাক্ষাৎ হয়েছে দুইবার। প্রতিবারই জয় পেয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। শেষবারের দেখায় তাদের ৬-০ গোলে হারিয়েই ফাইনালে উঠেছিল সাবিনার দল।
অতীত সাফল্যের কথা বাদ দিয়ে মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচটিকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েই দেখছেন দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। তিনি বলেন, ‘আসলে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২ উপলক্ষে আমরা ঢাকা থেকে খুব ভালো করে ৬ সপ্তাহের বেশি কঠোর অনুশীলন করে আসছি। মেয়েদের ফিটনেস লেভেল খুব ভালো অবস্থানে আছে। এখানে এসে আমরা ৩ দিন অনুশীলন করেছি। অনুশীলন ভালো হয়েছে। ’
ছোটন বলেন, ‘আমরা ঢাকা থেকে ৬ সপ্তাহের বেশি সময় কঠোর অনুশীলন করে এখানে এসেছি। মেয়েদের ফিটনেস লেভেল খুব ভালো অবস্থায় আছে। এখানে এসে আমরা তিনদিন অনুশীলন করেছি। এখানেও খুব ভালো অনুশীলন হয়েছে।’ বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের আবহাওয়ার অনেক তফাত। সেখানে গিয়ে আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে বাংলাদেশের মেয়েদের কোন সমস্যা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে ছোটন বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে এখানের আবহাওয়ার পার্থক্য হলো এখানে এসে মেয়েরা প্রথমদিন একটু ঠা-া অনুভব করেছে। তবে এই তিনদিনে তারা আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। যেটা তারা অনুশীলনে প্রকাশ করেছে। এখন তারা মালদ্বীপের ম্যাচেই চোখ রাখছে। সেখানে সর্বোচ্চ মনযোগ দিচ্ছে। ম্যাচের সর্বোচ্চটা দিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে প্রস্তুত তারা।’
‘আমাদের যেহেতু মালদ্বীপের সঙ্গে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ, এটা বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আমি মনে করি এই চ্যালেঞ্জ মেয়েরা ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পারবে এবং জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বে। নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের আবহাওয়ার কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। তবে তিন দিন নেপালে অনুশীলন করে এখানের আবহাওয়ার সাথে মেয়েরা মানিয়ে নিয়েছে। ’
গতকাল সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ ম্যাচে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে। মেয়েদের প্রথম ম্যাচে এমন কিছু প্রত্যাশা করেন কিনা। এমন প্রশ্নের জবাবে ছোটন বলেন, ‘মেয়েরা এই ম্যাচ নিয়ে সম্পূর্ণ ফোকাসড রয়েছে। আশা করি ম্যাচের শুরু থেকেই নিজেদের সেরা টা দিয়ে খেলবে এবং জয়লাভ করে মাঠ ছাড়বে। ’
নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশের ফুটবলার সাজেদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ থেকে অনেক কঠোর অনুশীলন করে আসছি। এখানে এসেও অনেক কঠোর অনুশীলন করেছি। আমরা আগামীকালের ম্যাচের জন্য প্রস্তুত। জয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে পারবো ইন শা আল্লাহ। ’
দলীয় অধিনায়ক সাবিনা খাতুন জানালেন, ‘ম্যাচের আগে আজ আমাদের শেষ সেশনের অনুশীলন হলো। মেয়েরা উৎফুল্ল আছে। আশা করি প্রথম ম্যাচে ভালো কিছুই হবে। দেশের ফুটবল দর্শকরা নারী ফুটবলের ওপর আস্থা রেখেছে।
তারা মনে করে মেয়েরা এখন গোছানো ফুটবল খেলতে পারে। এখানে সব দলই একটা লক্ষ্য নিয়ে এসেছে। আমরাও এসেছি। তবে আমাদের সবার প্রথম লক্ষ্য মালদ্বীপের বিপক্ষে ভালো করতে হবে। টুর্নামেন্টের শুরুটা ভালোভাবে করে ভালো একটা ফল নিয়ে মাঠ ছাড়তে চাই।’ ফরোয়ার্ড সিরাত জাহান স্বপ্না বলেন, ‘সবমিলিয়ে আমাদের প্রস্তুতি মোটামুটি ভাল। আমাদের একটা লক্ষ্য আছে ফাইনালে ওঠার। সেখানেই সবাই ফোকাস দিচ্ছি।’ আরেক ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রানী সরকার বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ডে বাই ডে উন্নতি ও ম্যাচ জয়ের মাধ্যমে ফাইনাল খেলা।
দলের সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান লিটু বলে, ‘ওভারঅল দলের সব মেয়েরাই সুস্থ আছে। তারা অনেক হার্ড ওয়ার্ক করছে। যে লক্ষ্য নিয়ে এখানে এসেছি, আশাকরি ম্যাচ বাই ম্যাচ জিতে তা পূরণ করবো। আমরা প্রথমত সেমিফাইনাল যেতে চাচ্ছি। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই যেন মালদ্বীপের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে জিতে শুভসূচনা করতে পারি।’
এবারের আসরে অংশ নিচ্ছে সাত দেশ। এ-গ্রুপে বাংলাদেশ খেলবে ভারত, মালদ্বীপ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে। বি-গ্রুপে আছে নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভুটান। দুই গ্রুপের শীর্ষ চার দল খেলবে সেমিফাইনালে। আগের চার আসরে বাংলাদেশ একবারই ফাইনাল খেলেছে। সেটা ২০১৬ সালে। সেবার স্বাগতিক ভারতের কাছে ফাইনালে ৩-১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। চার আসরের প্রতিটিতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। আর তিনবার রানার্সআপ হয়েছে নেপাল। কাজেই বোঝাই যাচ্ছে বাংলাদেশ এখানে তৃতীয় শক্তি। তবে এবার চ্যাম্পিয়ন হতে চায় তারা।
‘আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত সব কিছুই ভালো আছে। আজকে ম্যাচের আগে আমরা লাস্ট সেশন করলাম। মেয়েরা খুব উৎফুল্ল আছে, আশা করি কাল খুব ভালো ম্যাচ হবে। এই ম্যাচে জয় নিয়ে আমরা এগিয়ে থাকতে চাই।’