বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:২৬ অপরাহ্ন

নবাবগঞ্জে সক্রিয় চোর চক্র, এক রাতে ৩ বাড়িতে গরু চুরি

স্টাফ রিপোর্টার:: সম্প্রতি সময়ে ঢাকার নবাবগঞ্জ অঞ্চলে বেড়েছে চোর চক্র৷ শীতের মৌসুমে গভীর রাতে যখন গ্রামের চারপাশে কুয়াশায় অন্ধকার, ঠিক তখনই এই চক্রটির টার্গেট থাকে চুরি করার। তবে রাতেরবেলা এসব চুরি ছিনতাই কমাতে নবাবগঞ্জের প্রধান সড়কগুলোর পাশাপাশি গ্রামগুলোতেও পুলিশ টহলের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা৷

শেখ মহিউদ্দিনের বাড়ি নবাবগঞ্জের শোল্লা ইউনিয়নের দক্ষিণ শোল্লা গ্রামে। পেশায় একজন রিকশা চালক৷ অভাবের সংসার তাই রিকশা চালিয়ে সংসার না চলায় অর্ধেকবেলা রিকশা চালিয়ে বাড়িতে গরু লালন-পালন করেন৷ ব্যাংক লোন ও কিছু টাকা জমিয়ে ছোট তিনটি গরু কিনেছিলেন৷ কয়েক বছর লালন-পালনের পর গরু তিনটি বড় হয়। কিন্তু চোরের জন্য মহিউদ্দিনের ভাগ্য হলো না লাভের ভোগ করতে৷

৮ জানুয়ারি (সোমবার) দিবাগত রাত ২ টার দিকে মহিউদ্দিনের গরুর ঘরের তালা কেটে তিনটি গরু চুরি হয়ে যায়৷ যার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা৷ সকালবেলা গরু বের করতে বের হলে দেখতে পায় দরজায় দেয়া তালা কাটা৷ তালা কাটা দেখে যেন আকাশটা তার মাথায় পড়লো৷ সঙ্গে সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়ে মহিউদ্দিন। গত কয়েকমাস আগেও তার আরও একটি গরু চুরি হয়৷ নবাবগঞ্জে এই গরু চোরের চক্রটি বেশ সক্রিয়৷

মহিউদ্দিন জানান, আমার ৩ টা গরুর বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা৷ চোরে তিনটি গরু নিয়ে যাওয়ায় আমার আর কিছুই নেই৷ আমি সর্বহারা হয়ে গেলাম।

তিনি ও তার স্ত্রী আন্না বেগম আরও বলেন, গরুগুলো ট্রাক করে নেওয়া হয়েছে। সকালে উঠে দেখি ঘরের পেছনে পাকা সড়কে গরুর গোবর ও গাড়ির চাকার চিহ্ন রয়েছে। এই এলাকায় প্রায়ই এমন চুরির ঘটনা ঘটে৷ পুলিশের বিশেষ টহলের ব্যবস্থা না করলে আমাদের জীবনের ঝুঁকি থাকবে। এই এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, রাতে যদি নবাবগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের বিশেষ চেকপোস্ট বা টহল থাকতো তাহলে গভীররাতে ট্রাক যাতায়াত করলে অবশ্যই পুলিশের জালে চোর চক্র আটক হতো৷ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি এখানে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার৷

এদিকে একই রাতে এই গরু চোর চক্রটি ট্রাক করে গরু চুরি করে পাশের গ্রাম পাতিলঝাপ এলাকায় চঞ্চল শেখের বাড়িতে৷ স্কুল মাঠের পাশের এই বাসায় রাত ২ টার দিকে বিল্ডিং এর গেইটে তালা লাগিয়ে গরুর ঘরে প্রবেশ করে এই চক্রটি৷ তারপর সেখান থেকে ৩ টি গরু রশি কেটে দেয়৷

বাড়ির লোকজন টের পেয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করলে বাহির থেকে তালা থাকায় বের হতে পারেন নি৷ পরে কৌশল করে চিৎকার দিলে মসজিদের মাইকে মাইকিং করার পর চোর দুটি গরু রেখে একটি ট্রাকে তুলে নিয়ে যায়৷ অনেক চেষ্টা করলেও ট্রাকটি ধরতে পারেনি৷

শুধু পাতিঝাপেই শেষ নয়। পাশের গ্রাম বাশনল এলাকায়ও একই রাতে একই অবস্থা৷ সেখানেও এক কৃষকের বাড়ি থেকে ৩ টি গরু চুরি হয় বলে জানান স্থানীয়রা৷ সেখানেও ট্রাকটি যাতায়াত করতে শব্দ পেয়েছিল ঐ এলাকার মানুষ।

এই গরু চোর চক্রের বিষয়ে কথা হয় নবাবগঞ্জ থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুনুর রশিদের সাথে৷ তিনি মুঠোফোনে প্রতিবেদককে বলেন, গরু চুরির বিষয়টি আমি শুনেছি৷ আমি মাত্র নতুন এসেছি৷ নির্বাচনের কাজে থানা পুলিশ সদস্যরা বেশ কয়েকদিন ব্যস্ত ছিল৷ এখন থেকে নবাবগঞ্জে পুলিশের টহল বাড়িয়ে দেওয়া হবে৷

এ বিষয়ে দোহার সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আশরাফুল আলম বলেন, গরু চুরি হওয়ার বিষয়টি আমি শুনিনি। চুরি ছিনতাই প্রতিরোধে সবসময় কাজ করছে পুলিশ। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ টহলের ব্যবস্থা করা হবে৷

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com