বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:০৯ পূর্বাহ্ন
নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি:: ঢাকার নবাবগঞ্জের যন্ত্রাইল ইউনিয়নের চন্দ্রখোলা বাজার সংলগ্ন কালিবাড়ি মন্দির মাঠে মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী গ্রাম-বাংলার গরু দৌড় প্রতিযোগীতা। এসময় হাজার হাজার মানুষ এই প্রতিযোগীতা উপভোগ করেন। দৌড় প্রতিযোগীতায় বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ১৫/২০ টি গরু অংশ নেয়।
বাংলা পঞ্জিকা হিসাবে পৌষ মাসের শেষের দিন এই উৎসব পালন করা হয় বলে দাবি স্থানীয়দের। কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাওয়া গ্রাম্য সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখাই এ প্রতিযোগীতার মূল লক্ষ্য বলে জানান স্থানীয়রা। এসময় প্রায় অর্ধলক্ষ নারী পুরুষ ও তরুন তরুনীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
স্থানীদের দাবি, প্রতি বছর বাংলা সনের পৌষ মাসের শেষ দিন সাকরাইন ও পৌষ পার্বণ উপলক্ষে কয়েকদিন আগে থেকে তাঁদের বাড়িতে বিভিন্ন স্থান থেকে অতিথিরা বেড়াতে আসেন। এ উপলক্ষ্যে তাঁদের জন্য বিভিন্ন রকমের পিঠাপুলির আয়োজন করা হয়। গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী গরু দৌড় প্রতিযোগীতাসহ বিভিন্ন গ্রামীণ ঐতিহ্য যুগ যুগ ধরে অব্যাহত থাকুক মানুষের মনের মধ্যে এমনটিই প্রত্যাশা করেন ৭০ বছর বয়সী রাম চরণ বৈরাগী।
সরেজমিনে দেখা যায়, গরু দৌড় প্রতিযোগীতা উপলক্ষ্যে কালিবাড়ি মন্দির এলাকায় বসেছে দিনব্যাপী গ্রাম্যমেলা। এ যেন হিন্দু, মুসলিম এবং সববয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুদের মিলনমেলা। দুপুর ১ টার পর থেকেই প্রতিযোগীতা দেখতে নানা বয়সী মানুষ দলে দলে ছুটে আসছে। মুহূর্তের মধ্যে মানুষে ভরে উঠে চন্দ্রখোলা বাজার কালিবাড়ি মন্দির মাঠ। এ উপলক্ষে বসা মেলায় দোকানিরা খাবারের রকমারি পসরা সাজিয়ে বসেছেন। সেখানেও উপচেপড়া ভিড় দেখা যায় বিকাল ৪ টার পর। তবে মেলাতে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ ছিলো চোখে পড়ার মতো।
নবাবগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী গরু দৌড় প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত
গরু দৌড় প্রতিযোগীতার বিষয় চন্দ্রখোলা কালি মন্দির কমিটির সদস্য শ্রী সজিব বর্মন জানান, দাদা ও বাবাদের আমল থেকে আমরা এই গরু দৌড় প্রতিযোগীতার গল্প শুনে আসছি। আমরা চেষ্টা করি এই প্রতিযোগীতায় আসা প্রতিটি গরুকে মন্দির থেকে আনা গঙ্গাজল ছিটিয়ে পবিত্র করতে।
দক্ষিণ শোল্লা থেকে গরু দৌড় প্রতিযোগীতায় আসছেন রঞ্জিত মন্ডল। তিনি বলেন, মাঠ জুড়ে দাপিয়ে দর্শকদের আনন্দ-বিনোদনের খোরাক জোগান প্রতিযোগীতায় অংশ নেওয়া গরুগুলো। ছোটবেলা থেকেই এই মাঠে আমরা গরু দৌড় খেলা দেখতে আসি। এখনও টিকে আছে এই ঐতিহ্য।
গরু দৌড় প্রতিযোগীতা দেখতে আসা তরুনী সিনথিয়া আক্তার বলেন, আমাদের দেশে গ্রামীণ খেলা হারানোর পথে। সচরাচর এখন খেলাধুলার আয়োজন করা হয় না। যুব সমাজকে মাদক ও নেশা জাতীয় অপরাধ থেকে দূরে রাখতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে ঐতিহ্যবাহী গরু দৌড়সহ খেলাধুলার আয়োজন করা উচিত। আগামীতেও এমন বিনোদনমূলক খেলা আমরা দেখতে পাব এই প্রত্যাশা আমাদের।