মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৫০ অপরাহ্ন
মুজিবুর রহমান বাবু, ই-কন্ঠটোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডিতে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে জিতে গ্রুপ সেরা বাংলাদেশ। গত বছর ২ এপ্রিল ঢাকায় প্রথম বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কাবাডিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। ফাইনালে কেনিয়ার বিপক্ষে জয় আসে ৩৮-২৮ পয়েন্টে। বছর না ঘুরতেই টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় আসরের ফাইনালে ২৪ মার্চ বৃহস্পতিবার আবার বাংলাদেশের সামনে পড়েছিল সেই কেনিয়াই। তবে এবার জয় এসেছে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা ছড়িয়ে।
দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কাবাডিতে আবার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। খেলা শেষ হতেই বাঁশি বাজতেই সাউন্ড বক্সে বেজে উঠে ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি। আর লাল সবুজওে পতাকা হাতে নিয়ে কাবাডি ম্যাটের চারপাশে ঘুরতে থাকেন তুহিন তরফদার-আরদুজ্জামান মুন্সিরা। ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ স্লোগানে মুখরিত শহীদ নূও হোসেন ভলিবল স্টেডিয়ামের পুরো গ্যালারি। একদিন পর স্বাধীনতা দিবস। তার আগের দিন কাবাডির হাত ধরে আসল আরেকটি বিজয়। দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডিতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ।
শারীরিক শক্তি এবং উচ্চতায় এগিয়ে থাকায় কেনিয়ার খেলোয়াড়দের আটকাতে গিয়ে বারবার খেই হারিয়ে ফেলেন তুহিন তরফদার-আরদুজ্জামান মুন্সিরা। আবার পয়েন্ট ছিনিয়ে আনতে গিয়ে রবিউল, জাকির, ফেরদৌসরা নিজেদের কোর্টে আসতে পারেননি প্রতিপক্ষের দুর্দান্ত ডিফেন্সের কারণে। যে কারণে পাওয়ারফুল কেনিয়াকে থামানোর জন্য কৌশলে পরিবর্তন আনেন কোচ সাজুরাম। প্রতিপক্ষকে আটকানোর ঝুকিতে না গিয়ে পয়েন্ট আনায় মনযোগ দেয় স্বাগতিকরা। তাতে সফলও হয়।
খেলার শুরুতেই বেশ কিছু সময় ধরে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ প্রথমার্ধেও শেষ দিকে গিয়ে ছন্দে ফেরে। তুহিন তরফদার লিড এনে দেন। এরপর প্রথমাবের মতো কেনিয়ার সেরা রেইডার ভিক্টরকে আটকে ফেলা বাংলাদেশ উজ্জীবিত হয়ে উঠে। পয়েন্ট ছিনিয়ে এনে কেনিয়ার খেলোয়াড়দেও আউট করতে থাকেন রাজিব-জাকিররা। এই অর্ধে কেনিয়াকে অলআউট করা বাংলাদেশ পায় প্রথম লোনা। ১৭-১৪ পয়েন্টে এগিয়ে থাকায় আতœবিশ্বাসও বেড়ে যায়।
বাংলাদেশের ভারতীয় কোচ সাজু রাম গয়াত আস্তে আস্তে কৌশলে বদল আনেন। তাঁরপর শিষ্যরাও ঘুরে দাঁড়াতে থাকেন। ২৪ মার্চ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ফাইনালে কেনিয়াকে দুটি লোনাহসহ ৩৪-৩১ পয়েন্টে হারিয়ে ট্রফি ধরে রাখার মেতে উঠে সাজুরামের দল। গতবারও এই কেনিয়াকে হারিয়ে প্রথম আসরে শিরোপা জিতেছিল লাল সবুজের দলটি। প্রথমার্ধে স্বাগতিকরা একটি লোনাসহ ১৭-১৪ পয়েন্টে এগিয়ে ছিল।
বাংলাদেশের জাতীয় খেলাকে (কাবাডি) দেশ থেকে কাবাডির শিরোপা প্রায় নিয়েই যাচ্ছিল কেনিয়া। বাংলাদেশ দল টেকনিকে এগিয়ে থাকলেও উচ্চতা আর শক্তি কাজে লাগিয়েছে কেনিয়া। তাদের খেলোয়াড়দের আটকাতে বারবার খেই হারিয়ে ফেলছিলেন তুহিন তরফদার, আরদুজ্জামান মুন্সিরা।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাংলাদেশ দলের উদ্যাপনটা অনেক আনন্দে
কিন্তু বিরতির কিন্তু বিরতির পর শুরুতে ভুল করেন ফেরদৌস প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে আটকাতে গিয়ে পয়েন্ট দেন। এক পর্যায়ে রাজিব ও সবুজ আউট হলে লিড নেয়া কেনিয়ার পয়েন্ট গিয়ে দাঁড়ায় ১৮-১৭। তিনজনে পরিনত হওয়া বাংলাদেশের অলআউটের শংকা জাগে। পরক্ষনেই কেনিয়ার ভিক্টরকে আউট করলে সমতা আনে লাল সবুজের দলটি। কিন্তু মুনিরুলের ভুলে আবারও লিড নেয় আফ্রিকান দেশটি। পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান রাজিব আহমেদ। একাই কেনিয়ার দুই প্লেয়ারকে আউট করে মূল্যবান দুই পয়েন্ট এনে দিলে জেগে উঠে গ্যালারি।
এটাই মূলত ম্যাচের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট। পাঁচ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। দারুণ খেলতে থাকা স্বাগতিকরা ব্যবধান নিয়ে যায় কেনিয়ার ধরাছোয়ার বাইওে (২৯-২১)। একে একে কেনিয়ার ওদিয়া¤ে॥^া, নামাবকে আউট করলে পয়েন্ট গিয়ে দাঁড়ায় ৩০-২৩। এমন অবস্থায় বাংলাদেশের জয়টি সময়ের ব্যাপারই মনে হচ্ছিল। কিন্তু বারবার ভুল করেন তুহিন-মুন্সিরা। তাতে পয়েন্টের ব্যবধান কমিয়ে আনে কেনিয়া (৩২-৩১)। ম্যাচের শেষ মিনিটে কেনিয়ার নাম্বার ওয়ান ভিক্টর ভুল করলে দুই পয়েন্ট পাওয়া শিরোপা জয়ের আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে মেতে উঠে বাংলাদেশ ।
এক নজরে-
চ্যাম্পিয়ন ॥ বাংলাদেশ
রানার্সআপ ॥ কেনিয়া,
ফাইনাল সেরা ॥ রাজিব আহমেদ (বাংলাদেশ/ ১০ হাজার টাকা)
টুর্নামেন্ট সেরা ॥ রাজিব আহমেদ (বাংলাদেশ/ ২০ হাজার টাকা)
সেরা রেইডার ॥ ভিক্টর ওবিয়েরো (কেনিয়া/ ২০ হাজার টাকা)
সেরা ক্যাচার ॥ তুহিন তরফদার (বাংলাদেশ/ ২০ হাজার টাকা)