মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন
মুজিবুর রহমান বাবু, ই-কন্ঠ টোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ বাংলাদেশ টসে হেরে আগে ফিল্ডিং করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ শিবিরের একাদশে ওপেনার তামিম ইকবাল ও স্পিনার তাইজুল ইসলাম ফিরেছেন। সাদমান ইসলামকে একাদশের বাইরে রাখা হয়েছে। পেসার তাসকিন আহমেদ যেহেতু কাঁধে চোট পেয়ে দেশে ফিরেছেন, তাই একাদশে সুযোগ পেয়েছেন তাইজুল। প্রথম টেস্টে একজন স্পিনারের অভাব থেকে এবার একাদশে একজন পেসার কমিয়ে স্পিনার নেওয়া হয়েছে।
পোর্ট এলিজাবেথে দ্বিতীয় টেস্টেও কী একই অবস্থা হবে? যেভাবে এগিয়ে চলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ডিন এলগার ৭০, টেম্বা বাভুমা ৬৭, কিগান পিটারসেরনর ৬৪ রানে প্রথম ইনিংসে প্রথমদিনে ২৭৮ রান করে ফেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, তাতে আবারও দক্ষিণ আফ্রিকার রানের পাহাড়ে ডুবতে যাচ্ছে বাংলাদেশ বলেই মনে হচ্ছে। ৫ উইকেটও হারিয়েছে। তাতে স্পিনার তাইজুল ইসলাম ৩টি ও পেসার খালেদ আহমেদ ২টি উইকেট শিকার করেন। পোর্ট এলিজাবেথের সেন্ট জর্জেস পার্ক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথমদিনের খেলার চিত্র এখানে তুলে ধরা হল।
দক্ষিণ আফ্রিকার হারানো ৫ উইকেটের মধ্যে ৩ উইকেটই স্পিনার তাইজুল ইসলাম শিকার করেছেন। ডারবান টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩৬৭ রান করে ফেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। যেখানে ৩০০ রান করতে পারত না, সেখানে শেষে এত বেশি রান করায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছিল। তাতে ২২০ রানের হারও হয়েছে।
ম্যাচের প্রথম ওভারটি পেসার খালেদ আহমেদ করলেও দ্বিতীয় ওভারটিই করেন স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। তাতে করে পোর্ট এলিজাবেথের সেন্ট জর্জেস পার্ক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৩৩ বছরের ইতিহাস সামনে দাড় হয়। ১৮৮৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার এ স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট হয়। প্রথম টেস্টের প্রথম ওভারে বোলিং করেন ইংল্যান্ডের লেগ স্পিনার জন ব্রিগস। নতুন বলে কোন স্পিনার বোলিং করছেন, তাও আবার পেস বান্ধব দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে, তা যেন কল্পনাই করা যায় না! এই স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টে সেই ইতিহাস হয়েছিল। এরপর ১৩৩ বছর পর এবার মিরাজের মাধ্যমে সেই স্মৃতি আবার সামনে আসলো। যদিও এবার দ্বিতীয় ওভারে মিরাজ বোলিং করেছেন। তবে নতুন বলে কোন স্পিনার বোলিং করল আবার। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে হিসেবে করলে ১৯৩৫ সালের পর, ৮৬ বছর পর কোন স্পিনার আবার ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই বল করেন। সেবার জোহানেসবার্গে অস্ট্রেলিয়ার লেগ স্পিন কিংবদন্তি বিল ও’রাইলি বল করেছিলেন।
রিভিউ নেওয়ার সিদ্ধান্তে ভুগতে থেকে বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক আউট করার সুযোগ এবারও হাতছাড়া করেছেন। প্রথম টেস্টের এমনটি হয়েছে। এবার ৪ রানে থাকা সারেল এরউই বেঁচে গেলেন। মুমিনুল যে রিভিউ নেননি। ম্যাচের তৃতীয় ওভারেই এরউইয়ের বিপক্ষে এলবিডব্লিউর জোরাল আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। পেসার খালেদ আহমেদ রিভিউ নেওয়ার তাগিদ দিলেও মুমিনুল রিভিউ নেননি। রিপ্লেতে দেখা গেছে, ব্যাটে বল লাগেনি ও লেগ স্টাম্পের উপরের দিকে বল আঘাত হানতো। এরউইকে আউট করার সুযোগ হাতছাড়া হলো। ওপেনার ডিন এলগারের সাথে ৫২ রানের জুটি গড়ে ২৪ রান করে খালেদের বলেই আউট হন এরউই।
পোর্ট এলিজাবেথের সেন্ট জর্জেস পার্ক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সেরা ব্যাটসম্যান এলগারের টানা তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি
ডিন এলগার
পোর্ট এলিজাবেথের সেন্ট জর্জেস পার্ক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট অধিনায়ক ও ওপেনার ডিন এলগার সবসময়ই যেন ভালো খেলেন। এই স্টেডিয়ামে ২টি সেঞ্চুরি রয়েছে তার। এবার হাফসেঞ্চুরি করলেন। ৬৬ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন এলগার। টেস্ট ক্যারিয়ারের ২২তম হাফসেঞ্চুরি করেন এই স্টেডিয়ামে ৫৭১ রান আগেই করেছিলেন। সেরা ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তীয় অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস (৬১৭ রান)। হাফসেঞ্চুরি করেই ক্যালিসকে পেছনে ফেলে স্টেডিয়ামের সেরা রান সংগ্রাহক হয়ে যান এলগার। সাথে টানা তিন ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করেন এলগার। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে ৬৭ ও ৬৪ রান করার পর এবার দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেও হাফসেঞ্চুরি করেন। প্রথম সেশনে শুধু এরউইয়ের উইকেটটি হারিয়ে ১০৭ রান করে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই এলগার আউট হয়ে যান। ৮৯ বলে ১০ চারে ৭০ রানের ইনিংস খেলে তাইজুলের বলে আউট হন এলগার। দলের ১৩৩ রানে গিয়ে এলগার আউট হলেও কেগান পিটারসেনের সাথে দ্বিতীয় উইকেটে ৮২ রানের জুটি গড়েন।
বৃষ্টিতে ২৪ মিনিট খেলা বন্ধের আগে পিটারেসেনের হাফসেঞ্চুরি
কিগান পিটারসেন
এলগার আউট হওয়ার পর পিটারসেনও অসাধারণ ব্যাটিং করতে থাকেন। ৭৪ বলে হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন। টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফসেঞ্চুরি করেন। এগিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু ৩৯ ওভারে ২ উইকেটে ১৫৬ রানের সময় বৃষ্টিতে খেলা ২৪ মিনিট বন্ধ থাকে। তাতে করে পিটারসেনের ব্যাটিংয়ের মনোযোগেও যেন বাঁধা পড়ে। সুযোগটি কাজে লাগান তাইজুল। পিটারসেনের বিপক্ষে এলবিডাবলিউয়ের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। তবে এবার আর ভুল করেননি মুমিনুল। রিভিউ নেন। তাতে সাফল্যও মিলে। দলের ১৮৪ রানে গিয়ে ১২৪ বলে ৯ চারে ৬৪ রান করে আউট হন পিটারসেন। তাতে করে দক্ষিণ আফ্রিকার ৩ উইকেট পড়ে।
প্রথম সেশনে ১ উইকেট ১০৭, দ্বিতীয় সেশনে ৩ উইকেটে ১৯৯ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা
তৃতীয় সেশনে গিয়ে টে¤॥^া বাভুমাও হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন। ১১৩ বলে ক্যারিয়ারের ১৯তম টেস্ট হাফসেঞ্চুরি করেন বাভুমা। রায়ান রিকেলটনকে নিয়ে ভালোই এগিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু ৫০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। তাতে প্রথম চারটি জুটিই ৫০ রানের হয়ে যায়। দলের রান যখন ২৬৭ রানে যায়, রিকেলটন ৪২ রানে থাকেন, বাভুমা ও রিকেলটনের জুটি ৮২ রানে পৌছায় তখন তাইজুলের স্পিনে আউট হন রিকেলটন।
সফল রিভিউয়ে নিকেলটনকে সাজঘরে পাঠানো হয়। তাইজুল ৩ উইকেট শিকার করে নেন। দ্বিতীয় টেস্টের একাদশে সুযোগ পেয়েই ৩ উইকেট নেন তাইজুল। আর ৪ রান স্কোরে যোগ হতেই বাভুমাকে (৬৭) আউট করে দেন খালেদ। এই সেশনে আরও ২ উইকেট হারিয়ে আরও ৭৯ রান যোগ করে ২৭৮ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ বেলায় ২ উইকেট শিকার করে নেয় বাংলাদেশ। প্রথমদিন তাতে শেষ হয়। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমদিনেই যে ২৭৮ রান যোগ করে ফেলে, তাতে বড় সংগ্রহের দিকেই যাচ্ছে তারা। প্রথম টেস্টের প্রথমদিনেও ৪ উইকেটে ২৩৩ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর ৩৬৭ রান করে। ব্যাটিংয়ে এখন আছেন কাইল ভেরেইন (১০*) ও উইয়ান মুলদার (০*)।