মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন

তীব্র শীত ও শৈত্য প্রবাহে কাপছে লালমনিরহাট

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:: কয়েক দিনের টানা শৈত্য প্রবাহ আর হিমেল হাওয়ায় লালমনিরহাটের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত দুইদিন থেকে শীতের তীব্রতা বাড়ছে আর বাড়ছে। এতে তিস্তা তীরবর্তী এলাকার সাধারণ মানুষের ভােগান্তি চরমে উঠেছে। সন্ধ্যা নামার আগে আগেই এলাকার দােকানগুলাে বন্ধ হয়ে যায়।

রবিবার (১৭ জানুয়ারী) সকাল থেকে শীতের তীব্রতা আরাে বেশি বাড়ছে বলে আবহাওয়া সুত্র জানিয়েছে। সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। তিস্তা পারের শিশুবৃদ্ধ সকলেই খড়কুটাে জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

এ জেলায় শীতের আমেজ কিছুটা আগেই অনুভূত হয় এবং এর ব্যাপ্তিও থাকে দীর্ঘ সময়। এ বছরও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। শীতের শুরু থেকে রাতে শীতের ঘনত্ব থাকলেও সকালে সূর্যের দেখা মেলায় শীত তেমন কাবু করতে পারেনি এ জনপদের মানুষকে।

তবে গত কয়েকদিন ধরে এ জনপদে কুয়াশার ঘনত্ব বাড়ার পাশাপাশি যুক্ত হওয়া শৈত্যপ্রবাহের কারণে ঠান্ডা বেড়েছে কয়েকগুন। দিনের মধ্যভাগে কিছু সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মেললেও গত দুই দিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি। ফলে ঠান্ডার দাপটও বেড়েছে কয়েকগুন। শীতের তীব্রতায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে জেলার প্রায় অর্ধশত চরাঞ্চলের ছিন্নমুল পরিবার।

শ্রমজীবী মানুষ পেটের দায়ে তীব্র শীত ও ঘনকুয়াশাকে উপেক্ষা করে কাজে নেমে পড়েছেন। সকাল পর্যন্ত হাট বাজার বিপণীবিতান ও সড়কগুলোতে মানুষের আনাগোনা অনেকটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জরুরি কাজের জন্য ঘরের বাইরে বের হয়েছে মানুষ। ফুটপাত ও পুরাতন গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে বেড়েছে নিম্নআয়ের মানুষদের ভিড়।

জেলার ৫টি উপজেলার নদী অধ্যুষিত ইউনিয়নের তিস্তা নদীর চর অঞ্চল গুলােতে হাজার হাজার ছিন্যমূল মানুষ সরকারী শীতবস্ত্রের জন্য পথ চেয়ে বসে আছে। তাদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ জরুরী হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি শৈত্য প্রবাহের কারনে শিশুদের মধ্যে শীত জনিত রােগ দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার খেঁটে খাওয়া মানুষ গুলাে কয়েকদিন থেকে কাজকর্ম না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। এদিকে ক্লিনিক ও হাসপাতাল গুলােতে শীতজনিত রােগে রােগীর সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে।

সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের তিস্তাপাড়ের রফিকুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন সকাল থেকেই শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে রাত পর্যন্ত চলে। এই শীতে কাজকর্ম করতে না পেরে ঘরে বসে দিন কাটাচ্ছি।

লালমনিরহাটে শনিবার রাত থেকে শীতের দাপটে বিপর্যস্ত জীবন যাত্রার মান। এ জেলার ৪৫টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার কয়েক হাজার শীতার্ত অসহায় গরিব মানুষ মাঘ মাসের শুরুতেই হাড় কাঁপানাে কনকনে শীতের কারণে ঘর থেকে বের হতে না পারায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে। জেলার বিভিন্ন বাজার গুলােতেও সন্ধ্যার পর পরই দােকান-পাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লােকজনের চলাচলও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম।

হাট-বাজারের পুরাতন কাপড়ের দােকান গুলােতে নিম্নআয়ের লােকজনের ভীর দেখা যাচ্ছে। তবে এ সকল শীত বস্ত্রের দাম বেশি হওয়ায় অভাবী লােকগুলাে কিনতে পারছে না তাদের প্রয়ােজনীয় সেসব শীতবস্ত্র। তীব্র শীতের কারনে জেলায় শীতবস্ত্র বিতরন জরুরী হয়ে পড়েছে। এভাবে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শৈত্য প্রবাহ অব্যাহত থাকলে দেখা দিতে পারে ডায়রিয়াসহ শীতজনিত নানা রােগ-ব্যাধী।

তিস্তাপাড়ের সাহেব আলী বলেন, শীতের মাঝেও পেটের দায়ে কাজের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি। কাজ না করলে খাব কী? ছেলে সন্তান না থাকায় আমাকে একাই সংসার চালাতে হয়।

চরে বসবাসকারী আজিজুল ইসলাম বলেন, আমরা এখানকার কয়েক হাজার মানুষ ভীষণ কষ্টে আছি। শৈত্য প্রবাহের এই দিন গুলোতে কেউ আমাদের কােন খবর নেয়নি। কােন প্রকার শীতবস্ত্র বা একটা কম্বলও দিচ্ছে না আমাদের। যাতে করে আমরা চরাঞ্চলের শীতার্ত মানুষ গুলাে শীত নিবারন করতে পারি। আমরা কয়েক হাজার মানুষ কঠিন এই শীতে মানবেতর জীবন যাপন করছি।থ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছে হিমালয়ের পাদদেশের লালমনিরহাট জেলার মানুষ। ঠান্ডার দাপটে নিদারুণ কষ্টে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। চরম কষ্টে পড়েছেন নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া ও চরাঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষ। সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ করা অব্যাহত রয়েছে জেলার বিভিন্ন স্থানে।

তবে জেলা প্রশাসক আবু জাফরকে কয়েক দিন আগে দুই দিন রাতে কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখা গেলেও জেলার অধিকাংশ উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের শীতবস্ত্র বিতরণে দেখা যাচ্ছে না।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় জানান, গত কয়েক দিন ধরে শীতের প্রকােপ দেখা দেয়ায় ঠান্ডাজনিত নানা রােগ দেখা দিয়েছে। তাই আমরা সকলক সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করার পরামর্শ দিচ্ছি। সেই করোনা মোকাবেলায় সতর্কতার সাথে চলাফেরা করতে বলা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com