মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন
লালমনিরহাট প্রতিনিধি:: দফায় দফায় বন্যায় ক্ষতি হওয়া আলুসহ অন্যান্য রবি ফসলের লাভ থেকে এবং আমন দানের লোকসান পুষিয়ে নিতে আশা করছেন লালমনিরহাটের কৃষকেরা। অধিক লাভের আশায় বিষবৃক্ষ তামাক চাষের পরিবর্তে এবার আলু চাষে ঝুকে পড়েছে লালমনিরহাটের কৃষকরা। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার, পরিশ্রম ও খরচ কম খরচে দিন দিন বিষবৃক্ষ তামাকের চেয়ে আলুতে লাভ বেশী হওয়ায় তামাক চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলতি মৌসুমে আলু চাষে ঝুকে পড়েছে এ অঞ্চলের কৃষকেরা। এবার আলুর বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভাল দামেরও আশা করছেন কৃষকেরা।
জেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, লালমনরিহাট জেলার ৪২টি ইউনিয়ন, ২টি পৌরসভা মিলে গত বছর এ জেলায় তামাক চাষ হয়েছিল ৮ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে। এবছর তা কমে তামাক চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৪শ হেক্টর জমিতে। তামাক চাষে পরিশ্রম ও খরচ বেশী হওয়ায় বিগত কয়েক বছরেও লাভের মুখ দেখতে পায়নি কৃষক, গুনতে হয়েছে লোকসান। তামাকসহ অন্যান্য রবি ফসলের চেয়ে আলু চাষ করে বিগত কয়েক বছরের তামাক চাষে লোকসান পুষিয়ে লাভের আশায় আলু চাষে ঝুকে পড়েছে কৃষকেরা। চলতি মৌসুমে এ জেলায় ৪ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হলেও লক্ষমাত্রা অতিক্রম করে আলু চাষ হয়েছে ৫হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে। চারদিকে শুধূ আলু ক্ষেতের সমারোহে। মাঠের পর মাঠ জুড়ে শোভা পাচ্ছে আলু গাছের সবুজের সমারোহ। কৃষি অফিসের পরামর্শে অধিক ফলনশীল জাতের কাটিনা, ডায়মন্ড, উপসি ও স্থানীয় জাতের আলু চাষ করা হচ্ছে। যদিও এখনও পুরোদমে আলু তোলা শুরু হয়নি। তবুও যে সবকৃষক আগাম জাতের আলু চাষ করেছিলেন তারা কিছু কিছু আলু তোলা শুরু করেছেন। আর কিছুদিন পর পুরোদমে আলু তোলা শুরু হবে। তবে চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ও রোগ বালাইয়ের আক্রমন কম থাকায় কৃষকরা প্রতি হেক্টর জমিতে ২০ থেকে ৩০টন আলুর ফলন পাবেন বলে আশা করছে কৃষকেরা। তবে মৌসুমি আলুর চাষবাদের পর জানুয়ারির শেষে এবং ফেব্রুয়ারির শুরুতে আলুর ফলন তোলা হয়। পাকরি, ফাঁটা পাকরি, দেশি হাগরাই, ললিতা, কার্ডিনাল, ডায়মন্ডসহ বিভিন্ন জাতের আলু আবাদ করা হচ্ছে।
এ ছাড়াও বর্তমান বাজারে আলুর চাহিদা ও দাম ভাল থাকায় আলু চাষীরা আলু বিক্রির লাভ থেকে কয়েক দফা বন্যায় আমন ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে বলে আশা করছেন।
কাশিয়াবাড়ী এলাকার কৃষক ইমতিয়াজ আলম বলেন, আমাদের এলাকায় বিগত কয়েক বছরে তামাক চাষ করে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি, আর লোকসান পেতে চাইনা, আলুর ফলন ও দাম দুটোই ভাল তাই এবার আলু চাষ করেছি এবং আশা করছি ভাল ফলনও পাবো। তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর বন্যার পর নদীর তীরবর্তী জমি গুলোতে আলু, ভুট্টা, সরিসা ও বাদামের ফলন খুব ভালো হয়। এবারে আমি ৭ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি আলুর গাছ দেখে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি।
আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের কৃষক আলু চাষী ফজল বলেন, কয়েকদফা বন্যায় আমন ধানসহ আমার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, তবে এবারেও আলুর গাছ আমাকে নতুন করে সপ্ন দেখাচ্ছে। বন্যার কারনে নদী তীরের জমিতে পলি পড়ে তাই এইসব জমিতে এবার রেকর্ড পরিমান আলুর ফলনের আশা করছি। আলুর বাম্পার ফলন ও ভালো দামে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে যাবে আশা করছি। এছাড়াও কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতা আর পরমর্শের কারনে ঘন কুয়াশায় আলুর তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।
কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষক মুক্তার হোসেন জানান, মৌসুমি আলুর ক্ষেতে এখন পরিচর্যা চলছে। আগাম জাতের আলু বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতি বিঘা আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গে অন্যান্য খরচ হবে আরও ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ৭০ থেকে ৮০ মণ আলু পাওয়ার আশা করা যাচ্ছে। পাইকারি বাজারে মান অনুযায়ী আলুর প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা।
জেলা কৃষি প্রশিক্ষন কর্মকর্তা মোঃ হামিদুর রহমান বলেন, এ অঞ্চলের কৃষকেরা কয়েকদফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মধ্যে কিছু কৃষককে আমরা কৃষি সহায়তা প্রদান করেছি। বিশেষ করে চলতি মৌসুমে কৃষকরা যাতে রবি শস্য চাষ করে ভাল ফলন পায় এজন্য জেলা ও উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বল্প খরচে ফসল উৎপাদনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি এবং সার্বক্ষনিক পরামর্শ প্রদান করে আসছি। এ জেলায় দুই বার শৈত্য প্রবাহ বয়ে গেলেও কৃষি অফিসের তৎপরতায় কৃষকদের আগাম প্রস্তুতির কারনে ঘন কুয়াশা ও প্রচন্ড শীতে আলু ক্ষেতের তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। সব মিলে এ বছর আলুর বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন কৃষকেরা।