সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৫০ অপরাহ্ন

তরুণরা সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে: প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক, একুশের কণ্ঠ:: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমাদের তরুণরা স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ সুরক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায়ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তি আজ কেবল শিক্ষাক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নেই। এই তরুণরাই চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে, তরুণরাই যুগে যুগে এ দেশের ইতিহাস রচনা করেছে।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ বছর পাঁচটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে তরুণদের এই সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ আমরা তারুণ্যের শক্তিকে উদযাপন করছি। এটিই আমাদের জাতির চালিকাশক্তি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যখন একটি দেশের যুবসমাজ সক্রিয় থাকে, উদ্যমী এবং উদ্ভাবনী শক্তিতে বলীয়ান হয়, তখন কোনো প্রতিবন্ধকতাই তাদের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে রাখতে পারে না। আমাদের চলার পথে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে, কখনো তা জনস্বাস্থ্যের সংকট, কখনো শিক্ষার অপর্যাপ্ত সুযোগ, আর কখনো পরিবেশগত বিপর্যয়। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে হতাশ না হয়ে বরং এগুলোকে আমাদের নিজস্ব শক্তি দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে। আমি আশা করি এ কাজেও আমাদের তরুণরা নেতৃত্ব দেবে।’

ড. ইউনূস বলেন, স্বেচ্ছাসেবা কেবল আর্তমানবতার কল্যাণেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি আত্ম-উন্নয়ন, চরিত্র গঠন এবং নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশের এক আদর্শ মাধ্যম। আমরা চাই, আমাদের তরুণেরা কেবল স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেই থেমে থাকবে না; সমাজের নীতি নির্ধারক, উদ্ভাবক এবং পরিবর্তনের স্থপতি হিসেবে নিজেদের তুলে ধরবে। এটি তখনই সম্ভব হবে যখন তারা আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজেদের গড়ে তুলতে পারবে, প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করবে এবং নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশে মনোযোগী হবে।’

তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আজকের এই পুরস্কার কেবল একটি স্বীকৃতি নয়, এটি তোমাদের জন্য একটি উদাত্ত আহ্বান, তোমরা আরও সাহসী হও, আরও নেতৃত্ব দাও এবং সমাজের কল্যাণে নতুন ধারণা ও উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করো। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে তোমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। স্বাস্থ্যখাতে তোমাদের একটি ক্ষুদ্র উদ্যোগ হাজারো শিশুকে রোগমুক্ত রাখতে পারে। শিক্ষা ক্ষেত্রে তোমাদের সামান্য প্রচেষ্টা দেশের শিক্ষার মানকে বহুদূর এগিয়ে নিতে পারে। পরিবেশ রক্ষায় তোমাদের সম্মিলিত প্রয়াস আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সবুজ পৃথিবী নিশ্চিত করতে পারে। মনে রাখবে, তোমাদের প্রতিটি ছোট ছোট প্রচেষ্টাই দেশের জন্য মস্ত বড় অর্জনের পথ তৈরি করবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি জানি, স্বেচ্ছাসেবা বা যেকোনো মহৎ উদ্যোগের পথ মসৃণ নয়। সময়, অর্থ এবং মানসিক চাপের বহুবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। এর মধ্য দিয়েই আমাদের ধৈর্য, সহনশীলতা এবং নেতৃত্বের মতো মহৎ গুণাবলি অর্জন করে নিতে হবে। আমি যুবসমাজের প্রত্যেক সদস্যকে আহ্বান জানাই, তোমাদের মেধা, শক্তি এবং সৃজনশীলতা দিয়ে সমাজের ও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখো। তোমাদের সাফল্য কেবল ব্যক্তিগত অর্জনে সীমাবদ্ধ না রেখে অন্যদের জন্যও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হোক। আমি বিশ্বাস করি, তরুণরা সক্রিয় থাকলে দেশের কোনো সমস্যাই আর অমীমাংসিত থাকতে পারে না।

এর আগে সামাজিক ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য দেশের ১২ জন যুব উদ্যোক্তার হাতে ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ তলে দেন প্রধান উপদেষ্টা।

এ বছর যুব উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে অসাধারণ অবদানের জন্য ৩ জন, শিক্ষা, বিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি, কারিগরি ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ২ জন। দেশপ্রেম, বীরত্ব ও সাহসিকতার ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ২ জন। জ্যেষ্ঠদের প্রতি আদর্শ সেবা/সমাজকল্যাণে অসাধারণ অবদানের জন্য ৩ জন এবং ক্রীড়া, কলা ও সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ২ জনকে মনোনীত করা হয়।

পুরস্কার হিসেবে নগদ এক লাখ টাকার প্রাইজবন্ড, একটি সম্মাননা ক্রেস্ট এবং একটি সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।

যুব উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে অসাদারণ অবদানের জন্য মনোনীত ৩ জন হলেন- শেরপুরের মোছা. সুরাইয়া ফারহানা রেশমা, মাগুরার মো. আক্কচ খান ও লক্ষীপুরের মো.জাকির হোসেন।

শিক্ষা বিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি, কারিগরি ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য মনোনীত ২ জন হলেন- ঝালকাঠির মো. খালেদ সাইফুল্লাহ, গাইবান্ধার মো. শাহদাৎ হোসেন।

দেশপ্রেম, বীরত্ব ও সাহসিকতার ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য মনোনীত ২ জন হলেন- রাজশাহীর হাসান শেখ ও পাবনার মো. দ্বীপ মাহবুব।

জেষ্ঠ্যদের প্রতি আদর্শ সেবা/ সমাজকল্যাণে অসাধারণ অবদানের জন্য মনোনীত ৩ জন হলেন- লালমনিরহাটের মো. জামাল হোসেন, কক্সবাজারের নুরুল আবছার ও রাজশাহীর মো. মুহিন (মোহনা)।

ক্রীড়া, কলা ও সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য মনোনীত ২ জন হলেন- সাতক্ষীরার আফঈদা খন্দকার এবং বান্দরবানের উছাই মং মার্মা।

প্রসঙ্গত, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত যুবকল্যাণ তহবিল আইন ২০১৬ মোতাবেক সামাজিক ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য যুবদের পুরস্কৃত করার বিধান রয়েছে। তদানুযায়ী ৫টি ক্যাটাগরিতে ১২ জন যুবউদ্যোক্তাকে এভ ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ প্রদান করা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com