শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫, ০২:৪৩ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক ॥
গত বুধবার তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাপক পুলিশি হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড, লাঠিচার্জ ও বেধড়ক মারধরের শিকার হন শিক্ষার্থীরা। এই হামলার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) তাদের ফেসবুক পেজে একটি ছবি প্রকাশ করে দাবি করে, আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরা যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে, তা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। ডিএমপি নিউজের প্রতিবেদনেও একই দাবি করা হয়।
ডিএমপি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, “সম্প্রতি রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদ আলমকে নিয়ে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি এক ছাত্রের মুখ চেপে ধরার একটি ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে… কে বা কারা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছবিটি তৈরি করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে।” ডিএমপি আরও জানায়, ছবিটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় এটি সম্পূর্ণ এআই-প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি এবং বাস্তবতাবিবর্জিত।
তবে ডিএমপির এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ, একাধিক সংবাদমাধ্যমের ফটোগ্রাফার ওই সংঘর্ষের সময় একই ধরনের ছবি ক্যামেরায় ধারণ করেছেন। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-এর ফটোগ্রাফার রাজীব ধর এবং কালেরকণ্ঠ-এর ফটোগ্রাফার শেখ হাসানের তোলা একই ধরনের ছবি তাদের নিজ নিজ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর ফটোগ্রাফার জয়ীতা রয় জানান, আন্দোলন চলাকালে যখন শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন একজন ছাত্রকে পুলিশ ধরে ফেলে। তিনি ঠিক সেই মুহূর্তে ছবিটি তুলেছিলেন। ডেইলি স্টারের অর্কিড, টিবিএস-এর রাজীব ধর এবং মানবজমিনের আবু সুফিয়ান জুয়েলসহ আরও অনেক ফটোগ্রাফারও ওই ছবিটি তুলেছেন বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
অনলাইন ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট হিটপ ডটকম-এ জয়ীতা রয়ের তোলা ছবিটি যাচাই করে দেখা গেছে, এটি এআই-জেনারেটেড নয়।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি-এর সাবেক ফ্যাক্ট-চেক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ছবিটি সম্পূর্ণ বাস্তব, কোনোভাবেই এআই-জেনারেটেড নয়। তিনি পুলিশের এই ধরনের মিথ্যা দাবিকে তীব্র নিন্দা জানান।
এদিকে, বুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় বুয়েট কর্তৃপক্ষ নিন্দা জানিয়েছে এবং এটিকে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে উল্লেখ করেছে। ঘটনার পর বুধবার রাতে শাহবাগে এসে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী শিক্ষার্থীদের কাছে ‘দুঃখ প্রকাশ’ করেন।