শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন
রাজু আহমেদ, কলাম লেখএকুশের কন্ঠ : শরীরের সবচেয়ে নরম অঙ্গটি চরমভাবে আঘাত করতে পারে। বেকারকে যোগ্যতার খোঁটা দেয়া ঠিক নয়! দরিদ্রকে অর্থের খোঁটা, দুর্বলকে মুরোদের খোঁটা না দিলেই ভালো হয়! যার যেখানে ব্যথা সেখানে কথা দিয়ে আঘাত করলে সে কষ্ট যে জমাই থাকে। অর্থের সঞ্চয়ে মুনাফা বাড়ায় কিন্তু ব্যথার সঞ্চয়ে দূরত্বে ভোগায়। জিহ্বায় উচ্চারিত প্রত্যেকটি শব্দের দৈর্ঘ্য-প্রস্থের মাপ ঠিক রাখা উচিত। হাতের আঘাতের ক্ষমা হতে পারে কিন্তু কথার আঘাতের ব্যথা সহজে মোচন হয় না। অন্তরে দগদগে ক্ষত থেকে যায়।
যে নিঃসন্তান তার সামনে সন্তানের কথা তুললে, যে একা তার কাছে দোকা’র ব্যাপারে ঘ্যানর ঘ্যানর করলে বিরক্তি বাড়ে। যে স্বপ্ন ছুঁতে পারেনি তার সামনে সফলতার গল্প শোনালে অন্তর কেঁপে ওঠে। যারা খেতে পায়নি রাতে তাদের কাছে মোরগ-পোলাওয়ের গল্প অভিশাপের মতন। কাজেই কোন কথা কার কাছে সাজবে না, কোন কথা কোনখানে বসবে না, সে কথা মাথায় রাখা দরকার। মুখের সব কথা বলা যায় না। মনের সব আচরণ দেখানো ঠিক না।
হঠাৎ বড়লোক হওয়া, বিপথে ক্ষমতা হওয়া, অপাত্রে জ্ঞান হওয়াদের কথার ঠিক-ঠিকানা থাকে না। এরা মানুষকে মানুষ ভাবতে ভুলে যায়। যাকে যা ইচ্ছা বলে দেয়। অথচ একবারও ভাবে না, কথাই তার জ্ঞানের মাপকাঠি। ভাষাতেই তার ভেতরের আলো! মানুষ যখন অমানুষ হয় তখন যাকে ইচ্ছা গালাগালি করতে পারে! যা ইচ্ছা বলতে পারে। কিন্তু যারা মানুষ তারা হিসাব করে কথা কয়! যাদের বিবেক আছে তারা ক্ষেত্র ভেবে আলাপ জমায়! মনে যা আসে তা বলা যায় না! মুখের লাগামহীনতা মানুষকে পশু-অসভ্য বানিয়ে দেয়! কাজেই বিবেক কাজ করুক! ভাষা শোভন হোক। সম্পর্ক মধুর থাকুক।
আপনার কাছে যেটা অপমানজনক নয়, অশোভন নয় সেটা কারো কারো কাছে অপমানের, অশোভনের হতেই পারে। যে কথায় সভ্যতা ধারণ করে না, যে আচরণে সংস্কৃতি লালন করে না, যে বিশ্বাসে ভক্তি আসে না সেসব এড়িয়ে চলাই উচিত। কারো মনে ব্যথা দেয়া, কথা শোনানো-এসবে বাহাদুরি নাই। বরং অশিক্ষা এবং অভদ্রতার রূপ-রস-গন্ধ আছে। জিহ্বার ব্যবহার যত মার্জিত হবে, মানুষের সম্মান-সুনাম ততবেশি অর্জিত হবে।
ভাষা দিয়েই মানুষকে সবচেয়ে বেশি আপন করা যায়। কোমল কথার মত দামী অলঙ্কার আর কিছুতেই নাই। জিহ্বাকে তলোয়ার না বানিয়ে আপন করার হাতিয়ার বানাতে হবে। টাকা-পয়সা ছাড়াও, শর্ত-স্বার্থ ছাড়াও দু’টো ভালো কথা মন-মননকে কাছে টানতে পারে,শীতল রাখতে পারে। দূরকে পাশাপাশি বসাতে পারে। জিহ্বার জিহাদ জরুরি। বাজে কথা, অশ্লীল কথা এবং মিথ্যা কথার চেয়ে খারাপ জিনিস আর একটাও সৃষ্টি হয়নি। অথচ আমরা কথায় কথায় অমরত্বের জগৎ সাজাতে পারতাম। কাউকে স্বপ্ন দেখাতেও পারতাম। বিশ্বাস-ভরসার সব কথাতেই হয়; আবার কথাতেই ভাঙে!