সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:: চেয়ার, বেঞ্চ, শিক্ষার্থী কিছু নেই। বিদ্যালয়ের অবকাঠামোর মধ্যে কয়েকটি আধাপাকা ঘর তাও আবার দরজা জানালা কিছু নেই। শিক্ষার্থী বলতে কাগজে কলমে ছাড়া বাস্তবে আসলে শূন্যের কোটায়। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস হয় না দীর্ঘ কয়েক বছর। অথচ কাগজে কলমে যথারীতি পাঠদানের তথ্য নিশ্চিত করে এমপিও ভুক্তির তালিকায় নাম তুলেছে ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার হোসেনগাঁও ইউনিয়নের কলিগাঁও নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। গত ৬ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত এমপিওভুক্তি তালিকায় রাণীশংকৈল উপজেলার ৪টি নিম্ন মাধ্যমিক ও ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
ওই তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, হোসেনগাঁও ইউনিয়নে কলিগাঁও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলিগাঁও নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, বাচোর ইউনিয়নে ভি এইচ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রাতোর ইউনিয়নে প্রয়াগপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়া স্তর পরির্বতন হয়েছে কাশিপুর ইউনিয়নে মহারাজাহাট উচ্চ বিদ্যালয়, আলসিয়া ভোকরগাঁও ও জগদল উচ্চ বিদ্যালয়ের। এরমধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে কোন ক্লাস হয় না। শিক্ষার্থী আসে না। তাছাড়া অবকাঠামোও হযবরল। জানা গেছে, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আবেদনের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষার্থীর উপস্থিতি খাতা, বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল, অবকাঠামো ঠিকঠাক দেখিয়ে আবেদন দিয়েছেন। তবে কাগজে কলমে ঠিকঠাক বলা হলেও বাস্তবে তার উল্টোরুপ এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।
সরেজমিনে হোসেনগাঁও ইউনিয়নের কলিগাঁও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির মধ্যে কোন সাইনবোর্ড নেই, দুর থেকে দেখে বুঝা যাবে না এটি কোন বিদ্যালয়, এই বিদ্যালয়ে তিনটি শ্রেণী কক্ষ রয়েছে তবে সেগুলো অর্ধনির্মিত, নেই দরজা জানালা, মেঝে মাটিতে ভরা। শ্রেণী কক্ষে একটিও চেয়ার কিংবা বেঞ্চ নেই। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়টিতে বিগত কয়েকবছর ধরে ক্লাস হয় না। কোন শিক্ষার্থীও আসে না । ইতিমধ্যে কখনো কোন পরীক্ষাও হয়নি এ বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জমিরউদ্দীন বলেন, তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনটি ক্লাস রুম হয়েছে, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩৫ জন, শিক্ষক কমর্চারী মিলে ১১জন। প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, তার বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস হতো, শিক্ষার্থী, শিক্ষক সবাই বিদ্যালয়ে আসতো, বর্তমানে বিদ্যালয় ছুটি তাই চেয়ার বেঞ্চ নেই। বিদ্যালয় খুললে আবার চেয়ার বেঞ্চ নিয়ে আসা হবে।
একইভাবে বাচোর ইউনিয়নের ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় এলাকায় কোন সাইনবোর্ড নেই। অবকাঠামো বলতে তিনটি ঘর তাতে কিছু চেয়ার বেঞ্চ রয়েছে। তবে তা ময়লা আবর্জনায় ভরা। বিদ্যালয়ের পাশেই বাড়ী স্থানীয় কয়েকজন তরুণীর সাথে কথা হলে তারা জানায়, তারা এই বিদ্যালয়ে পড়ে না কারণ এখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী কেউ আসে না। ওই তিনজন তরুণী জানায় তারা বাসা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে মীরডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন বলেন, তার বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস হয়। তবে ছুটির কারণে একটু ময়লা আর্বজনা হয়েছে। আমরা সব ঠিক করে ফেলবো। বিদ্যালয়ের পাশের শিক্ষার্থীরা কেন অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ে প্রশ্নে বলেন, সেটা তো তাদের ব্যাপার কেন পড়ে সেটিতো আমি বলতে পারবো না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৈয়ব আলী বলেন, শর্ত ভঙ্গ করার সুযোগ নেই। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। বিদ্যালয়গুলো খুললেই সরেজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।