বুধবার, ৩০ Jul ২০২৫, ১১:৪০ অপরাহ্ন
চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি:: সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামের ৩০ স্থানে ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২৮ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় হাজীগঞ্জের সাদ্রা দরবার শরিফ মাঠে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
জামাতে ইমামতি করেন সাদ্রা দরবার শরিফের পীর মুফতি জাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানি। অন্যদিকে সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল মাদরাসা মাঠে সকাল ৯টায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন সাদ্রা দরবার শরিফের আরেক পীর মাওলানা আরিফ চৌধুরী।
জানা যায়, প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ১৯২৮ সালে আগাম রোজা রাখাসহ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালনের নিয়ম চালু করেন হাজীগঞ্জের সাদ্রা দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইসহাক (র.)। তার অনুসারীরা প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রোজা রাখা, ঈদুল ফিতর এবং আজহা উদযাপন করে থাকেন। সেই থেকে বেশ কয়েকটি গ্রাম সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করে থাকেন।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, সমেশপুর, অলীপুর, ভোলাচোঁ, ঝাকনি, সোনাচোঁ, প্রতাপপুর ও সুরঙ্গচাইল গ্রাম, ফরিদগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর, কামতা, গল্লাক, ভুলাচোঁ, সোনাচোঁ, উভারামপুর, উটতলি, টোরা মুন্সিরহাট, কাইতাড়া, মূলপাড়া, বাসারা, সাচনমেঘ, বদরপুর, আইটপাড়া, সুরঙ্গচাইল, বালিথুবা, পাইকপাড়া, নূরপুর, সাচনমেঘ, শোল্লা, হাঁসা, গোবিন্দপুর, মতলব উত্তর উপজেলার পাঁচানী, বাহেরচর পাঁচানী, আইটাদি পাঁচানী, দেওয়ানকান্দি, লতুর্দী, সাতানী ও দক্ষিণ মাথাভাঙ্গার আংশিক, আমিয়াপুর গ্রামের একাংশ, মধ্য ইসলামবাদ গ্রামের একাংশ, গাজীপুর গ্রামের একাংশ, ফরাজীকান্দি, রামদাশপুর, চরমাছুয়া, হাজিপুর, দক্ষিণ রামপুর, সরকারপাড়া ও ঠাকুরপাড়ায় এবারও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছেন গ্রামবাসীরা।
মতলব উত্তরের দেওয়ানকান্দি গ্রামের বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, আমরা চট্টগ্রামের মির্জাখিল দরবার শরিফের অনুসারী। আমরা প্রতি বছর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে কোরবানির ঈদ উদযাপন করি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সমেশপুর ঈদগাহ মাঠ, সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল, মাদ্রাসা মাঠ সাদ্রা দরবার শরীফ মাঠসহ ১২টি ঈদগাহ মাঠে এবং উত্তর সাদ্রা বায়তুল সালাম জামে মসজিদ, দক্ষিণ সাদ্রা জামে মসজিদ, উত্তর অলিপুর ব্যাপারী বাড়ি জামে মসজিদ, উত্তর অলিপুর ঢালী বাড়ি, মসজিদ দক্ষিণ বলাখাল হাজী বাড়ি, দক্ষিণ বলাখাল স্কুল বাড়ি, পাঁচনী দরগাম মসজিদ, পূর্ব পাঁচানী সরকার বাড়ি, দেওয়ানজিকান্দি প্রধানিয়াবাড়ী মসজিদ, সাড়ে পাচানী প্রধানিয়া জামে মসজিদ, দক্ষিণ মাথাভাঙ্গ ভেন্ডরবাড়ী, মসজিদ পাড়ে পাচানী উত্তরপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদসহ ১৮টি জেলার বিভিন্ন স্থানে মোট ৩০টি ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া স্ব-স্ব এলাকায়ও নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জাখিল দরবার শরিফের মোহাম্মদ মছউদুর রহমান বলেন, আমরা হানাফি মাজহাবের অনুসারী হিসেবে সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনা শরিফে তথা আরব বিশ্বে চাঁদ দেখার খবর পাওয়ায় গত সোমবার (১৯ জুন) জিলহজ মাস শুরু হয়। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ২৮ জুন ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে।
সাদ্রা দরবার শরীফের পীর আল্লামা জাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানী বলেন, আমরা কোরআন ও সুন্নাহের আলোকে সাদ্রা দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা পীর মাওলানা ইসহাক (র.)-এর নিয়ম অনুযায়ী প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রোজা ও ঈদ পালন করে আসছি। সর্বপ্রথম সৌদি আরবে জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে। সেই হিসাবে গত ১৯ জুন জিলহজ মাস শুরু হয়। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ২৮ জুন ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে। সেই অনুযায়ী আমরা ঈদ উদযাপন করছি। চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা দরবার শরিফের পীর ও সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী বলেন, সৌদিতে মঙ্গলবার হজ্ব সম্পন্ন হয়েছে। তাই আজ বুধবার আমরা ঈদ উদযাপন করছি।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় বলেন, আজ জেলার বিভিন্ন স্থানে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নামাজ পড়াকে কেন্দ্রকে করে সেখানে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছ। মুসল্লিরা নিরাপদে ঈদের জামাত শেষ করে এখন পশু কোরবানি দিচ্ছেন।