বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ১১:২১ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ এরশাদ, চট্টগ্রাম থেকেঃ চট্টগ্রাম মহানগরীর চাঁদগাঁও থানাধীন পূর্ব ফরিদা পাড়া এখন মাদকের এক ভয়াবহ ঘাঁটি। একসময়ের শান্তিপূর্ণ এই এলাকা আজ পরিণত হয়েছে মাদক কারবারিদের অভয়ারণ্যে। স্থানীয়দের ভাষায়, “এখানে রাত নামে না, নামে ভয়”। কারণ এই এলাকার প্রতিটি গলি, বিশেষ করে মাজার গলি ও হক সাহেবের রিক্সার গ্যারেজ চত্বর এখন দখলে পাগলা কাওছার ও তার মাদক বাহিনীর।
পূর্ব ফরিদা পাড়ার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কাওছার ওরফে পাগলা কাওছার ১৫/২০ বছর আগে থেকেই মাদকের সাথে জড়িত। কিন্তু হঠাৎ করেই তার হাতে আসে “মাদক-নির্ভর” অর্থের জোয়ার। বর্তমানে কাওছার মাদক সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিয়ে প্রকাশ্যে গলির মোড়ে মোড়ে চলাফেরা করে। অভিযোগ রয়েছে, তার নেতৃত্বে ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল ও বিদেশি মদ প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে গ্যারেজ সংলগ্ন এলাকায়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর তার বাহিনীর সদস্যরা মাদক বিক্রির নিয়ন্ত্রণ নেয়।
কাওছারের প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করছে: জয়নাল: পূর্বে গ্যারেজে কাজ করতেন, বর্তমানে কাওছারের নিকটতম সহযোগী। শাহাবুদ্দীন: কথিত ‘মাদক সংগ্রাহক’। তার দায়িত্ব বিভিন্ন জায়গা থেকে মাদক এনে মজুত রাখা।
সোহান এলাকায় ‘ডেলিভারি বয়’ হিসেবে পরিচিত। কিশোরদের দিয়ে ইয়াবা সরবরাহ করায়। এছাড়াও এই চক্রে রয়েছে অন্তত ২০-২৫ জন যুবক যারা দিনরাত মাদক বিক্রি, সরবরাহ ও সেবনের কাজে নিয়োজিত। সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হচ্ছে, এই মাদকচক্র কিশোর-তরুণদের ব্যবহার করছে ডেলিভারিতে। স্থানীয় কয়েকটি স্কুলের ছাত্রদেরকে লোভ দেখিয়ে বা ভয় দেখিয়ে তাদের কাজে লাগানো হচ্ছে। ফলে অল্প বয়সেই অনেকেই আসক্ত হয়ে পড়ছে ইয়াবা ও গাঁজায়। সমাজ বিজ্ঞানীরা একে “প্রজন্ম ধ্বংসের চক্র” বলে উল্লেখ করছেন।
স্থানীয় এক নারী বাসিন্দা বলেন, “রাতে জানালা খুলেও ঘুমাতে পারি না। বাইরেই শব্দ কেউ দৌড়ায়, কেউ চিৎকার করে। পুলিশও আসে না।” আরেক জন প্রবীণ বলেন, “আমরা থানায় অভিযোগ দিয়েছি। ওসি সাহেব বলছেন তদন্ত হবে। কিন্তু কাওছার তো প্রতিদিন ঘুরে বেড়ায়, কই ব্যবস্থা?”
চাঁদগাঁও থানার এক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলে জানা যায়, “আমরা জানি এ চক্র সক্রিয়। কিছু তথ্য পেয়েছি, অভিযান হবে।” কিন্তু প্রশ্ন হলো কবে হবে? মাদক চক্র তো প্রতিদিনই বিস্তার করছে।
পূর্ব ফরিদা পাড়ার সচেতন নাগরিকদের দাবি অবিলম্বে ‘পাগলা কাওছার’ ও তার চক্রকে গ্রেপ্তার করতে হবে।এলাকায় পুলিশ টহল বাড়াতে হবে। কিশোর গ্যাং দমন ও স্কুল পর্যায়ে সচেতনতা কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এলাকার প্রতিটি গলিতে সিসিটিভি স্থাপন করতে হবে।
পূর্ব ফরিদা পাড়া এখন আর শুধুই একটি আবাসিক এলাকা নয়, এটি চট্টগ্রামের মাদক ছড়ানোর এক বিপজ্জনক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনের নিরবতা, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া এবং মাদকচক্রের সংগঠিত শক্তি মিলে পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে।