সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন
এস.এম. সাঈদুর রহমান সোহেল, খুলনা ব্যুরো::
খুলনায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’র অধিগ্রহণকৃত জমি নতুন করে আবারও অবৈধ দখলে চলে যাচ্ছে। সরকারি জমি নিজেদের অনুকূলে নিয়ে দখলদাররা সেখানে গড়ে তুলছেন অবৈধ স্থাপনা। মূলত: করোনার কারণে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ থাকায় দখলদাররা ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে।
এদিকে, নতুন করে জমি দখলের ঘটনায় তৎপর হয়েছে পাউবো কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ময়ূর নদীর পাড় থেকে বয়রা শ্মশান ঘাট সংলগ্ন আল-আকসা নগর পর্যন্ত ৯জন অবৈধ দখলদারকে নোটিশ করা হয়েছে। নোটিশে নির্মাণকৃত অবৈধ স্থাপনা এক সপ্তাহের মধ্যে অপসারণ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীর বয়রা শ্মশান ঘাট সংলগ্ন আল-আকসা নগরের বাসিন্দা মো. মোশাররফ বিশ্বাস। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণকৃত (২৮/১নং পোল্ডার, এলএ কেস নং-৬৫/৬৩-৬৪) খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চকআহসানখালী মৌজার (পুরাতন ৬২৫, নতুন ২১৬৬)নং দাগের শূন্য দশমিক ০৫৯০ একর জমি অবৈধভাবে দখল করে দু’টি পাকা দোকান নির্মাণ করেছেন তিনি। নিজস্ব দ্বিতল ভবন লাগোয়া দোকান দু’টি ভাড়া দিয়ে বছরের পর বছর ধরে তিনি অর্থ উপার্জন করছেন।
শুধুমাত্র মোশাররফ বিশ্বাস একা নন, এভাবে তার মতো চকআহসানখালী মৌজার আল-আকসা নগরে পারুল আক্তার (পুরাতন ৬২৫, নতুন ২১৬৮), ইঞ্জিনিয়ার তাওহিদুল ইসলাম, সাধন মোড়ল, মো. রফিকুল ইসলাম একই মৌজার (পুরাতন ৬২২, নতুন ২১৬১) এবং হযরত আলী’র নামে (পুরাতন ৬২২, নতুন ২১৬৩)নং দাগের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মান করা হয়েছে। এমনকি কয়েক মাস আগে হযরত আলী’র জমিতে গভীর নলকূপ স্থাপনের চেষ্টা করেন মোশাররফ বিশ্বাস। যা পাউবো কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ নিয়ে বন্ধ করে দেন। ওই নলকূপের পাইপ এখনও মাটির নিচে বসানো রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
অপরদিকে, একইভাবে শেখ মাহবুব এবং খুবি সংলগ্ন ইসলাম নগর এলাকায় পুলিশ সদস্য মো. নূর ইসলাম ও মোহাম্মদ নগরের মো. রানা (রাইচ মিল) সহ অনেকেই পাউবো’র জমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। আবার অনেকেই সরকারি জমি সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। কেউ কেউ আবার বিক্রি করেছেন, কেউ কেউ ক্রয়সূত্রে দখলে আছেন।
এদিকে, পাউবো কর্তৃপক্ষ সরকারি জমি অবৈধ দখলমুক্ত করতে গত বছরের ২০ জুলাই ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানকালে অনেক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু অভিযান পরবর্তী সময়ে দখলদারদের অনেকেই পূণরায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এছাড়া করোনাকালীন শিথিলতার সুযোগে কেউ কেউ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন পাউবো’র জমিতে।
এদিকে, পাউবো খুলনা পওর শাখা থেকে সম্প্রতি এ ধরণের ৯জন অবৈধ দখলদারকে তাদের স্থাপনা নিজ উদ্যোগে সরিয়ে নিতে নোটিশ দেয়া হয়েছে। নোটিশ প্রাপ্তরা হলেন-আল-আকসা নগরের মোশাররফ বিশ্বাস, পারুল আক্তার, ইঞ্জিনিয়ার তাওহিদুল ইসলাম, সাধন মোড়ল, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. হারুন, শেখ মাহবুব এবং খুবি সংলগ্ন ইসলাম নগর এলাকায় পুলিশ সদস্য মো. নূর ইসলাম ও মোহাম্মদ নগরের মো. রানা (রাইচ মিল)।
পাউবো’র জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মানকারী মোশাররফ বিশ্বাস ও ইঞ্জিনিয়ার তাওহিদুল ইসলামকে দেয়া নোটিশে পাওবো খুলনা পওর শাখা-১’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. তরিকুল ইসলাম উল্লেখ করেন ‘পাউবো খুলনার আওতাধীন পোল্ডার নং-২৮/১’র (বয়রা শ্বশান ঘাট সংলগ্ন) অধিগ্রহনকৃত জমিতে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মান করছেন। ইতিপূর্বে অবৈধ স্থাপনা নির্মান বন্ধে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়। কিন্তু তা সত্বেও স্থাপনা নির্মান কাজ বন্ধ করেননি। যা আইনের দৃষ্টিতে দন্ডনীয় অপরাধ। এ অবস্থায় নোটিশ প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে তৈরি স্থাপনা নিজ খরচে অপসারণ পূর্বক অবহিত করতে হবে। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম নোটিশ প্রদানের বিষয়টি এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।
পাউবো, খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরের সূত্র জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ফসলি জমিতে লবণ পানি প্রবেশ রোধকল্পে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য নদী সংলগ্ন জমি অধিগ্রহণ করে। পরবর্তীতে এ জমির কিছু অংশ বাঁধে ব্যবহার হলেও দু’ পাশে বিশাল পরিমাণ জমি অব্যবহৃত অবস্থায় থেকে যায়। ওই অব্যবহৃত জমি বর্তমানে আর অবশিষ্ট নেই। এর মধ্যে শুধুমাত্র ডুমুরিয়ার চকআহসানখালী মৌজার ৬২২নং দাগে অধিগ্রহণকৃত জমির পরিমাণ ৩২ শতক। যার মধ্যে ২২ শতক জমিই ব্যক্তির নামে রেকর্ড করে ইতোমধ্যেই ছয় জনের কাছে বিক্রি সম্পন্ন হয়ে গেছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া এ মৌজার ৩৪টি দাগে মোট ৩৭ দশমিক ১৬ একর জমি অবৈধ দখলে চলে গেছে- মর্মে পাউবো’র এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
দখলদার মো. মোশাররফ হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনি ২০০৬ সালে ১০ শতক জমি কিনে দোকানসহ দ্বিতল ভবন করে বসবাস করছেন। এর মধ্যে একাধিকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্ভেয়ার মাপঝোপ করেছে। কিন্তু কোনো জমি বাধেনি। তবে, দোকানের চালের (ছাউনি) কিছু অংশ সরকারি জমিতে পড়তে পারে বলে ধারণা তার।
অপর দখলদার ইঞ্জিনিয়ার তাওহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি ২০১৮ সালে এসএম কামরুল আলম মিন্টু নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২ দশমিক ৩১ শতক জমি কিনেছেন। সেখানেই তিনি ‘মেসার্স মা তাবাস্সুম এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে সিমেন্টের ব্যবসা করছেন। তবে, তিনি পাউবো’র নোটিশ পাননি বলে দাবি করেন। যদিও তার নোটিশ স্থানীয় দখলদার মোশাররফ হোসেন রিসিভ করেছেন- মর্মে তথ্য রয়েছে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (খুলনা পওর বিভাগ-১)’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, পাউবো’র জমিতে অবৈধভাবে নির্মানকৃত স্থাপনা অপসারণের জন্য আমরা ৯জনকে নোটিশ করেছি। স্বেচ্ছায় স্থাপনা অপসারণ না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, নোটিশ পাওয়ার অবৈধ দখলদাররা উল্টো উকিল নোটিশ করে আমাদের অফিসারদের হয়রানির চেষ্টা করছে। তবে, বর্ষা কমলেই আমরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে আবারও উচ্ছেদ অভিযান শুরু করবো। এছাড়া যেসব জমি ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়েছে- ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা করে ওইসব জমির রেকর্ড সংশোধন করা হবে।