সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১৯ অপরাহ্ন

কেরানীগঞ্জে আগুন: বৈদ্যুতিক তার চুরি হওয়া কবরস্থানেই আগুনে ঘরছাড়া মানুষের আশ্রয়

কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি:: ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে ‘জাবালে নুর টাওয়ার’ এর ভূগর্ভস্থ গুদামে গত শনিবার ভোরে আগুন লাগার পর ঘরছাড়া হয়ে পড়েন ভবনের বাসিন্দারা। তখন জীবন বাঁচাতে তাঁদের একটি অংশ আশ্রয় নেন নিকটবর্তী আগানগর উঁচু কবরস্থানে। অথচ সেই কবরস্থানেই জ্বলে মাত্র তিনটি বাতি। কেননা দুই মাস আগে কবরস্থানের বৈদ্যুতিক তার চুরি হয়ে যাওয়ার পর তা আর পুনঃস্থাপন হয়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ওই কবরস্থানের বাতি জ্বালানো ও রাতে মৃতদের দাফনকালে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক তার চুরি হয়। ঘটনার পর মামলা হলেও এখনো চুরি যাওয়া তার উদ্ধার বা দোষীদের শনাক্ত করা যায়নি। ফলে কবরস্থানের সাত থেকে আটটি ল্যাম্পপোস্ট অচল হয়ে পড়ে। বর্তমানে কবরস্থান কর্তৃপক্ষ তিনটি বাতি দিয়ে কোনোভাবে কবরস্থানটি আলোকিত রাখছে।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কবরস্থানে প্রবেশপথে মাত্র তিনটি বাতি জ্বালানো রয়েছে। বাকি অংশ পুরো অন্ধকারাচ্ছন্ন। কবরস্থানের বিভিন্ন স্থঅনে ভবনের ভূগর্ভস্থ, প্রথম ও দ্বিতীয় তলার গুদামের মালামাল রাখা হয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সেগুলো প্রহরা দিচ্ছেন।

কবরস্থানে রক্ষিত মালামালের নিরাপত্তার দাযিত্বে থাকা এক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পুরো কবরস্থানে মাত্র দুই তিনটি বাতি রয়েছে। এতে কবরস্থানের বেশিরভাগ অংশ অন্ধকারে রয়েছে। অনেক স্থানে কিছুই দেখা যায়না। এ অবস্থায় মালামালগুলো রক্ষায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বেগ পেতে হচ্ছে। যদি পুরো কবরস্থান আলোকিত থাকতো, তাহলে দায়িত্ব পালনে সুবিধা হতো।

জাবালে নুর টাওয়ারের পঞ্চম তলার বাসিন্দা শফিকুল আলম বলেন, গত শনিবার ভোরে আগুনের চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কোনো রকমে নিচে নেমে আসি। তখন আর কোথাও যাওয়ার সুযোগ ছিল না। বাধ্য হয়ে কবরস্থানে আশ্রয় নিই। তিনি আরও বলেন, ওই সময় অন্ধকার ছিল, তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। ভয় থাকলেও তখন কবরস্থানই আমাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা মনে হয়েছে। পরে সকাল হলে আমরা কেরানীগঞ্জ মহিলা ডিগ্রী কলেজে চলে যাই।

একই অভিজ্ঞতার কথা বলেন ভবনের ষষ্ঠ তলার গৃহবধূ সীমা আক্তার। তিনি বলেন, আগুনের ভয়ে সন্তানদের নিয়ে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে বের হয়েছি। পরে কবরস্থানের কাছে আশ্রয় নিই। কবরস্থান তখন অন্ধকার ছিল, তবু মনে হয়েছে এটাই আমাদের জন্য নিরাপদ জায়গা। জীবনে কখনও ভাবিনি, কবরের পাশেই সন্তানদের নিয়ে বসে থাকতে হবে।

ভবনের দ্বিতীয় তলার ঝুট কাপড়ের গুদামের ভাড়াটিয়া রফিক হোসেন বলেন, আড়াই বছর ধরে মাসে ১৫ হাজার টাকায় গুদাম ভাড়া নিয়েছিলাম। ঘটনার আগের রাতে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরেছিলাম। ভোরে আগুনের খবর পেয়ে ছুটে আসি। লোকজনের সহায়তায় কিছু মালামাল বের করে কবরস্থানে রাখি। জায়গাটা নিরাপদ থাকায় সেগুলো অন্তত রক্ষা পেয়েছে। আপতত মালামাল সেখানেই রয়েছে।

আগানগরের আমবাগিচা এলাকার বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দুই মাস আগে কবরস্থানের বৈদ্যুতিক তার চুরি হওয়ার পর থেকেই জায়গাটা অন্ধকারে পড়ে আছে। তখন কেউ তেমন গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু এই আগুনের ঘটনায় দেখা গেল, বিপদের সময় এই কবরস্থানই মানুষের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।

কবরস্থানের খাদেম বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আলী জান বলেন, ২৯ সেপ্টেম্বর কবরস্থান থেকে চার কয়েল বৈদ্যুতিক তার চুরি হয়। এতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় ৩ অক্টোবর আমি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেছিলাম। তিনি আরও বলেন, কবরস্থানে সাত–আটটি ল্যাম্পপোস্ট আছে। তার চুরি যাওয়ায় সব বন্ধ। আপাতত তিনটি বাতি দিয়েই পুরো কবরস্থান আলোকিত রাখছি।

আগানগর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ তাইবুর রহমান বলেন, এব্যাপারে আমরা অবগত। শিগগিরই কবরস্থানের বৈদ্যুতিক তার পুনঃস্থাপন করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com